যদি বলি গৌরাঙ্গ চক্রবর্তীকে চেনেন? অবধারিতভাবে আপনার জবাব আসবে, না! কিন্তু মিঠুন চক্রবর্তী? না, এনাকে চেনেন না এমন লোক ভূ-ভারতে নেই। রাজনীতির আঙিনা থেকে ড্যান্সিং ফ্লোর কাঁপাতে তিনি ওস্তাদ। বাঙালীর হার্টথ্রব মিঠুন চক্রবর্তী বললেই আসলে ডিস্কো ড্যান্সার, এম.এল.এ. ফাটাকেষ্ট, নোবেল চোরের মতো কিছু সিনেমার নাম মনে পড়বে। ১৯৭৬ সালে পরিচালক মৃণাল সেনের ছবি ‘মৃগয়া’র মাধ্যমে চলচ্চিত্র জগতে তাঁর হাতেখড়ি। যার জন্যে তিনি জিতে নিয়েছিলেন ন্যাশানাল ফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে বেস্ট অ্যাক্টরের পুরষ্কার। সেই যাত্রা শুরু।
‘দামী’ হয়েছেন মিঠুন
এরপর সময়ের সাথে সাথে ‘দামী’ হয়েছেন মিঠুন। সিনেমা করার জন্য চড়চড় করে বেড়েছে তাঁর পারিশ্রমিকের মূল্য। একাধিক গাড়ি, বাড়ি, ব্যাবসা, তাঁর রাজনীতিতে আসা—প্রচারের আলো পেয়ে গেছে সবসময়েই। কিন্তু ছোটবেলায় চা খেয়ে আট আনা দাম যিনি দিতে পারেননি, দোকানদারের কাছে বাকি রাখতে হয়েছিল আট আনা, সিনেমার জগতে পা রাখার পর এক পরিচালক যাকে বলেছিলেন যে মিঠুন অভিনয়ে নাম করতে পারলে তিনি পরিচালনা ছেড়ে দেবেন—আপনি কি জানেন তাঁর নবাবিয়ানার কথা? আসুন তাঁর কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করি।
মুম্বাই জুড়েই ছড়িয়ে আছে অজস্র বাড়ি
শোনা যায় মিঠুন চক্রবর্তীর মোট সম্পত্তির পরিমাণ নাকি প্রায় ৪০ মিলিয়ন ডলার, টাকার হিসেবে ২৫,৬৭ কোটি! না। চোখ কপালে এখনই তুলবেন না। আরও আছে। সিনেমা পিছু তাঁর স্যালারি হয় নাকি ৩ কোটি টাকা। বাড়িও আছে প্রচুর। কলকাতায় তপসিয়া রোডে বিলাসবহুল একটা বাড়ি তো বটেই। তাছাড়া গোটা মুম্বাই জুড়েই নাকি ছড়িয়ে আছে অজস্র বাড়ি, বাংলো, ফ্ল্যাট। তার মূল্য শুনলে আপনার চক্ষু ছানাবড়া হয়ে যাবে।
মাধ আইল্যান্ডের গল্প নিশ্চয়ই আপনারা সবাই জানেন
খাস মুম্বাই শহরেই তাঁর ২২ কোটির একটি বাড়ি আছে। আর সেই বিখ্যাত মাধ আইল্যান্ডের গল্প নিশ্চয়ই আপনারা সবাই জানেন। সেখানে তাঁর যে বিলাসবহুল বাংলো বাড়িটি আছে তার মূল্য ৩৪ কোটি টাকা! তারকার জীবন বলে কথা। তাই এই নিজস্ব বাড়ি ও বিলাসবহুল বাংলোর পরেও গ্রিন হাইট অ্যাপার্টমেন্টে তাঁকে ২ কোটি টাকা খরচা করে ফ্ল্যাট কিনতে হয়। এছাড়াও মুম্বাইয়ের কাছেই মালাডে প্রায় ২ কোটি টাকারই একটা কটেজও আছে। বুঝতেই পারছেন তারকা সুলভ হওয়া কাকে বলে! কোয়েমবাটোরে কয়েক বিঘা জমিরও মালিক তিনি। এছাড়া হোটেল ব্যাবসার সাথে তো মিঠুন এখন খুব ভালো করেই জড়িত। সেখান থেকেও তাঁর আয়ের পরিমাণ কয়েক কোটি টাকা তো হবেই।
একাধিক দামী গাড়ি
এতো গেল নিছকই বাড়ি-ঘর, জমিজমার ইতিহাস। মিঠুনের মার্সিডিজ গাড়ির দাম শুনলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। ৫০ লক্ষ টাকা খরচা করে প্রিয় মার্সিডিজটিকে তিনি কিনেছিলেন। এছাড়া ২০ লাখ টাকার একটি টয়োটা ফরচুনারেরও মালিক তিনি। আর গ্যারেজে ফোর্ড, ভক্সভোগেনের মতো একাধিক দামী গাড়ি তো আছেই!
তিনি বিজ্ঞাপনের ‘মুখ’
সম্পত্তির সাদামাটা হিসেবের পর এবার তাঁর কাজকর্মের খতিয়ান শুনলে আপনার চোখ দাঁড়িয়েই যাবে। সুনিল দত্ত ও দিলিপ কুমারের সাথে একসঙ্গে মিলে পাপারাতজি প্রোডাকশন নামে একটি প্রোডাকশন হাউসও খুলেছিলেন তিনি ১৯৯২ সালে যেখানে গরীব ঘরের অভিনেতাদের অর্থসাহায্য করা হত। আশির দশকের শেষের দিকে তিনি ইলেক্ট্রনিক কোম্পানি প্যানাসনিক ইন্ডিয়ার ব্র্যান্ড আম্বাস্যাডারও ছিলেন। একাধিক কোম্পানির বিজ্ঞাপন করেছেন। টাকাও রোজগার করেছেন চুটিয়ে। মন্নপুরম গোল্ড লোন, গোড্যাডির মতো সংস্থার এখনও তিনি বিজ্ঞাপনের ‘মুখ’। সিনেমার জগতে এখনও মিঠুন চক্রবর্তী একটা নাম। ৬৭ বছর বয়সে আজও তিনি সমান গ্ল্যামারাস। আজও তাঁকে কোনো জায়গায় দেখলে লোকের ভিড় জমে যায় তাঁকে শুধুমাত্র একঝলক দেখার জন্য।
রাজনীতিতে পা
২০১৪ সালে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুপ্রেরনায় রাজনীতিতে পা রেখে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু দলের সঙ্গে মতবিরোধের জেরে বছর দুয়েক পরেই পদত্যাগ করেন রাজ্যসভার সদস্যপদ থেকে।
এই হল সেলিব্রিটি মিঠুন, সুপারস্টার মিঠুন চক্রবর্তীর কাহিনী। এত বিলাস, এত নবাবী কোনো বাঙালীই মুম্বাই পাড়ি দিয়ে করতে পারেন নি, মুম্বাইকে দেখাতে পারেননি বাঙালীর দাদাগিরি। তাই আজও তাঁকে নিয়ে আমাদের এত গর্ব, এত উন্মাদনা!
মন্তব্য করুন