অনুকূল:
|
প্রতিকূল:
|
মাইক্রোম্যাক্স, ভারতীয় স্মার্টফোন নির্মাতা, কয়েক সপ্তাহ আগে দুটি নতুন ফোন বাজারে প্রচলন করলো – মাইক্রোম্যাক্সের ক্যানভাস ৬ এবং ক্যানভাস ৬ প্রো দুই ফোনের নামকরণ অনুরূপ হলেও ফোন দুটি বিভিন্ন খুবই ভিন্ন।
উভয় স্মার্টফোনের বাজারে চালু করা হয়েছে ১৩,৯৯৯ টাকা মূল্যে কিন্তু ভিন্ন ক্রেতা সমষ্টির উদ্দেশ্যে। এখানে আমরা মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস ৬ ফোন নিয়ে পর্যালোচনা করবো। আসুন জেনেনি এই ফোনটা আপনার মূল্যবান টাকার উপযুক্ত কিনা।
ডিসাইন: 7/10
এই ফোনে মাইক্রোম্যাক্স কোম্পানী তাদের আগের ফোনগুলির তুলনায় অনেক উন্নতি করেছে ডিসাইন সম্পর্কিত, তাদের চীনা সহকর্মীদের সৌযন্যে। ক্যানভাস ৬ এর পূর্ণ ধাতু দিয়ে তৈরী উনিবডী ডিসাইনে। অন্য সব স্মার্টফোনের তুলনায় এটি বেশ চৌকনা ডিসাইনের। এটি প্রথম ক্যানভাস ফোন যার বহির্ভাগের কাঠামো পূর্ণ ধাতু দিয়ে তৈরী। কিন্তু এই বহির্ভাগটা বাদ দিলে বাকি ডিসাইনটা অনুপ্রাণিত করে না।
এই ফোনটা হাতে ভালোভাবে ফিট করে কিন্তু এর পূর্ণ ধাতুর কাঠামোর কারণে ন্যায্য পরিমাণ ওজনীয় বটে। এই কারণে ফোনটাকে বেশী সময় হাতে ধরে রাখলে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। এই 5.5 ইঞ্চির ফোনকে এক হাতে ব্যবহার করা কষ্টকর হবে যদি না আপনার হাত বেশ বড় হয়। ক্যানভাস ৬ এর পিছনের অংশের ডিসাইনটা প্রায় নেক্সাস ৬ পি এর ডিসাইনের প্রতিরূপ, শুধু ক্যামেরা সেটআপটা সামান্য মাঝের দিকে সরানো।
একটা মাইক্রো – ইউএসবি পোর্ট এবং একটি স্পিকার জাফরি ডিভাইসের নীচের অংশে অবস্থিত আর একটি ৩.৫ মি.মি অডিও পোর্ট উপরের দিকে আছে। যুগের ফোন ডিসাইনের অনূকরণে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম নিয়ন্ত্রণকারী বোতাম ডান দিকে অবস্থিত। উভয় বোতাম শালীন স্পৃশ্য প্রতিক্রিয়া দেয়। বাম দিকে একটি হাইব্রিড সিম কার্ড ট্রে আছে যাতে হয় দুটো ন্যানো – সিম কার্ড বা একটি ন্যানো সিম ও একটি মাইক্র এস.ডি কার্ড ঢোকানো যায়। আমাদের এই ব্যবস্থা কনো বিশেষভাবে পছন্দ হয়নি।
সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে, ক্যানভাস ৬ এর ডিসাইন কিছুই উদ্ভাবনমূলক না কিন্তু এটা বেখাপ্পাও নয়। যদিও পূর্ণ ধাতুর কাঠামোর কারণে ফোনটাকে মূল্যবান দেখতে লাগে কিন্তু এটাকে বাশ টেকসই বলে মনে হয়।
ডিস্প্লে স্ক্রীন : 8/10
মাইক্রোম্যাক্সের ক্যানভাস ৬ এ আছে একটা বিশাল ৫.৫ ইঞ্চি আই.পি.এস ডিসপ্লে, ফুল এইচডি রেজল্যুশন সহ (১০৮০*১৯২০)। ডিসপ্লেটা উজ্জ্বল এবং তীব্র। এই কারণে সব লেখা বেশ তীব্রভাবে দেখা যাবে। এই ফোনের ব্যাপক পর্দায় ভিডিও দেখতে ভালো লাগবে কারণ স্পন্দনশীল রঙে সব ছবি দেখা যাবে। সূর্যালোকে স্পষ্টতা মোটামুটি ভালোই। মাঝারি মাত্রার উজ্জ্বলতায়, উজ্জ্বল সূর্যালোকে, ফোনের স্ক্রীনে লেখা পড়তে আমাদের কোন অসুবিধা হয়নি। কিন্তু এই ফোনের স্ক্রীনে গরিলা গ্লাস লেপের অভাব আছে। উপরন্তু , কোনো ওলিওফবিক্ লেপ নেই যার ফলে ফোনের স্ক্রীনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সহজেই ধরা দেয়।
হার্ডওয়্যার: 7/10
ফোনের বাইরের আকারের ভিতরে আছে একটা ১.৩ গিগা-হর্ত্সের আট – কোর মিডিয়াটেক এম.টি৬৭৫৩টি চিপসেট। এর সাথে আছে ৩ জি.বি রেম এবং ৩২ জি.বি ইন্টারনল স্টোরেজ, যা ১২৮ জি.বি পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে বহিরাগত মেমরী কার্ড লাগিয়ে। কিন্তু তার জন্য দুটো সিম্ স্লটের মধ্যে একটা ত্যাগ করতে হবে। পিছনের অংশে একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানারের আছে যেটিা মাধ্যমে দ্রুত আপনার ডিভাইস আনলক করা যেতে পারে। যোগাযোগের দিক দিয়ে ক্যানভাস ৬ এ অন্য ফোনের তুলনা মূলক সব বৈশিষ্টই আছে যেমন ওয়াই-ফাই বি/জি/এন্, ব্লুটুথ ৪.০, ফোর-জি (দুটো সিম স্লটেই), থ্রি-জি, জি.পি.এস্ অবং এফ.এম রেডিও।
সফটওয়্যার: 6/10
সফ্টওয়্যারের দিক দিয়ে, ক্যানভাস ৬ অ্যান্ড্রয়েড 5.1 ললিপপ্ মোবাইল অপারেটিন্গ সিসটেমে চলে এবং স্টক্ অ্যান্ড্রয়েডের মত দেখতে লাগে, যদিও আইকনগুলো একটু ভিন্ন। এর সাথে অনেক ব্লোটওয়্যারও থাকে। ভালো দিক হলো যে কোম্পানির কিছু নিজস্ব অ্যাপস্ ছাড়া বেশীর ভাগ ব্লোটওয়্যার অ্যাপস্ মুছে ফেলা যাবে। হোমস্ক্রিনে ডানদিকে স্বাইপ্ করলে আপনি মাইক্রোম্যাক্সের “এরাউন্ড”পরিষেবার পর্দায় পৌছবেন। এই পরিষেবা দিয়ে আপনার আপনার নিকটবর্তী স্থান থেকে গাড়ী বুকিং বা অনলাইন খাদ্য অর্ডার করতে পারবেন। কিন্তু আজকাল অনেক অ্যাপ্লিকেশান পাওয়া যায় যারা একই সেবা প্রদান করে। ফলে মাইক্রোম্যাক্সের “এরাউন্ড”পরিষেবা এখন অপ্রয়োজনীয়।
ক্যামেরা: 6/10
যারা ছবি তুলতে ভালোবাসে তাদের জন্য এই ফোনে রয়েছে এল.ই.ডি ফ্ল্যাশ সহ ১৩ মেগা পিক্সেলের ক্যামেরা ফোনের পিছনের অংশে। সেল্ফী তোলার জন্য রয়েছে সহ ৮ মেগা পিক্সেলের ক্যামেরা সামনের দিকে। কাগজে কলমে যদিও বেশ ভালো শোনায়, কিন্তু ক্যামেরার কার্যকরি কর্মক্ষমতা মাঝারি। ফোকাসিন্গ গতি মোটামুটি দ্রুত কিন্তু সেখানে একটি স্পষ্ট শাটার আছে। বিশেষ খুঁটিনাটি ছবিতে ধরা পড়েনা। এইচ.ডি.আর মোডে বেশী ভালো ফল পাওয়া যায় কিন্তু তাও গর্ব করার মত কিছুই না। বাড়ির ভিতরে তলা ছবি অপরিষ্কার আসে। সামনের ক্যামেরায় তোলা সেল্ফী সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। ১০৮০ পিক্সেলের ভিডিও রেকর্ড করা যেতে পারে কিন্তু তা মাঝারি গুণমানের হয়।
কর্মক্ষমতা: 7/10
আপনি যদি শুধু ওয়েব ব্রাউজ করতে চান কিংবা সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইটগুলি ব্যবহার করতে চান, সেই উদ্দেশ্যে ক্যানভাস ৬ ফোন সফল। ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার বেশীর ভাগ সময় কাজ করে মাঝে মাঝে আমাদের নিবন্ধিত আঙুলের ছাপ চিনতে ব্যর্থ। টেম্পল রান এবং সাবওয়ে সার্ফার প্রভৃতি খেলা সহজেই চালানো যায়। কিন্তু এস্ফাম্ট ৮: এয়ারবর্ণ যাতীয় গ্রাফিক-ইন্টেসিভ গেম খেলার সময় ফোনটা থেমে থেমে যায়। তাছাড়া, এটা দ্রুত উত্তপ্ত হয়ে যায় গ্রাফিক-ইন্টেসিভ গেম খেলার সময়। অডিও প্লেব্যাক ক্ষমতাও মাঝামাঝি ধরনের। যদিও ৩০০০ এম.এ.এইচ ব্যাটারী আছে, মধ্যপন্থী ব্যবহারেও এই ফোন ৮ ঘন্টার বেশী চলেনা। কম ব্যবহার করলে একদিন পর্যন্ত চালানো যেতে পারে।
উপসংহার: 6/10
সব শেষে একটাই প্রশ্ন থেকে যায় যে মাইক্রোম্যাক্স ক্যানভাস ৬ কেনার সিদ্ধান্ত যথার্থ কিনা। আপনি যদি সেরকম ব্যক্তি হন যে ফোন ব্যবহার শুধু কল করার জন্য, ওয়েব ব্রাউজিন্গ এবং সামাজিক নেটওয়ার্কিং সাইট ব্যবহারের জন্য আপনি তাহলে ক্যানভাস ৬ ফোন দিয়ে কাজ চালাতে পারেন। কিন্তু একই মূল্যে অন্য অনেক ফোন পাওয়া যায় যেমন মটোরোলা মটো জি ৪, জুক জেড ১, রেডমি নোট ৩, এবং ল্ ১ এস্ যাদের বৈশিষ্ট মাইক্রোম্যাক্সের ফোনের থেকে অনেক বেশী।
মন্তব্য করুন