শরীর থাকলে শরীর খারাপ তো করবেই। আর আপনার শরীর তো যে কোনো সময়েই খারাপ হতে পারে। আপনার হাতের কাছে টাকা থাক বা না থাক, কোনো রকম শরীর খারাপই তো আর সেই দেখে হবে না। কিন্তু সেই মুহূর্তে টাকা না থাকলে কি চিকিৎসা হবে না? একদমই না। তাই জন্যই তো আজ আপনাদের সঙ্গে পরিচয় করাবো মেডিক্লেইম পলিসির যা আপনার যে কোনো আপতকালীন পরিস্থিতিতে আপনাকে চিন্তামুক্ত রাখবে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক এই সম্বন্ধে।
মেডিক্লেইম পলিসি কি?
মেডিক্লেইম পলিসি হল ভারতের পাবলিক আর প্রাইভেট ইনস্যুরেন্স কোম্পানী দ্বারা পরিচালিত মেডিকেল ইনস্যুরেন্স যা আপনাকে যদি হঠাৎ কোনো কারণে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তাতে সাহায্য করে। বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে এই মেডিক্লেইম পলিসি কাজ করে, যেমন ধরুন হঠাৎ কোনো শরীর খারাপের জন্য অপারেশন করতে হলে বা কোনো দুর্ঘটনা হলে আপনার এই পলিসি থাকলে তা আপনাকে সাহায্য করবে।
কয়েকটি মেডিক্যাল ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর নাম
আসুন আমরা দেখে নিই এবার কয়েকটা কোম্পানী যাদের কাছে আপনি এই পলিসি করতেই পারেন।
১. অ্যাপোলো মিউনিখ হেলথ ইনস্যুরেন্স
অ্যাপোলো হাসপাতাল আর জার্মানীর মিউনিখ হাসপাতালের যৌথ উদ্যোগে এই হেলথ ইনস্যুরেন্সের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিবার, যে কোনো ব্যক্তি বা কর্পোরেট জগতের বৃহত্তর ক্ষেত্রে এই কোম্পানী পলিসি করে থাকে। ১ লক্ষ টাকা থেকে ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ইনস্যুরেন্স করা যায়। বয়স হতে হবে ৬৫-র মধ্যে।
২. স্টার হেলথ অ্যান্ড অ্যালায়েন্স ইনস্যুরেন্স
এটা ভারতের প্রথম নিজস্ব সংস্থা যা ২০১৪ সালে ২৮ টি এইরকম কোম্পানীর মধ্যে প্রথম হয়েছিল। এখানেও ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ইনস্যুরেন্স করা যাবে। আবার সিনিয়র সিটিজনদের জন্য আলাদা প্ল্যান রয়েছে।
৩. বাজাজ অ্যালায়েন্স ইনস্যুরেন্স
এটিও একটি খুব ভালো কোম্পানী। নানারকম প্ল্যান আছে এনাদের। বিশেষত মহিলাদের জন্য আলাদা করে প্ল্যান রয়েছে।
৪. রিলায়েন্স জেনারেল ইনস্যুরেন্স
নানারকম প্ল্যান রয়েছে। যেমন ক্রিটিক্যাল ইনস্যুরেন্স প্ল্যানে ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়স পর্যন্ত ২০ লক্ষ পর্যন্ত টাকা পাওয়া যেতে পারে। আবার হেলথ গেইন প্ল্যানে আপনি ৩, ৬ বা ৯ লক্ষ পর্যন্ত টাকা পেতে পারেন।
৫. ন্যাশনাল ইনসিওরেন্স প্ল্যান
এটা একটা সরকারী আওতাভুক্ত প্ল্যান। আপনি এখানে নিজের জন্য আবার পরিবারের জন্য ইনস্যুরেন্স করতে পারেন। পরিবারের জন্য ৫০ লক্ষ টাকা অবধি ইনস্যুরেন্স করতে পারেন।
৬. টাটা এ.আই.জি প্ল্যান
টাটা সবদিক থেকেই একটি বিশ্বস্থ সংস্থা। তাই আপনি এদের প্ল্যান দেখতেই পারেন। ৫০ বছর বয়স পর্যন্ত প্ল্যান করতে পারেন আর টাকার পরিমাণ ৫ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে পরিবারের ক্ষেত্রে বয়স সীমা হবে ১৮ থেকে ৬৫ বছর।
এছাড়াও আপনারা আরও অনেক কোম্পানীর ইনস্যুরেন্স প্ল্যান পেয়ে যাবেন। আপনারা আপনাদের সুবিধা মতো করে নিতে পারেন। শুধু গুগলে গিয়ে মেডিক্লেইম কোম্পানী বলে সার্চ করলেই পেয়ে যাবেন।
কীভাবে কাজ করে এই পলিসি
মেডিক্লেইল পলিসি মূলত দুইভাবে কাজ করে।
১. ক্যাশলেস পদ্ধতি
এখানে আপনার আগে থেকে কোনো টাকা খরচ করতে হবে না। আপনি যে হাসপাতালে গেছেন, সেই হাসপাতালের ইনস্যুরেন্স ডেস্ক থেকে ফর্ম নিয়ে পূরণ করতে হবে। তারপর সেই ফর্ম হাসপাতাল অথরিটি, ডাক্তার দিয়ে স্ট্যাম্প দিয়ে পাঠানো হয় ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর কাছে। সেখানে সকল তথ্য ভালো ভাবে যাচাই করে টাকার অনুমোদন গ্রাহ্য হলে ফ্যাক্স করা হয়।
২. রিইম্বার্সমেন্ট পদ্ধতি
এই পদ্ধতি আগেরটার থেকে একদম আলাদা। এখানে শুরুতে আপনাকে টাকাটা খরচ করতে হবে। কিন্তু তারপর আপনি সমস্ত রশিদ নিয়ে একজায়গায় করে যদি ইনস্যুরেন্স কোম্পানীর কাছে পাঠান, তাহলে তারা আপনার সমস্ত তথ্য ভালো ভাবে দেখে টাকা পাঠিয়ে দেবে।
কয়েকটি বিষয় জানুন ইনস্যুরেন্স করার আগে
মেডিক্লেইম করার আগে আপনাকে কয়েকটা বিষয় জানতেই হবে। যেমন ধরুন, আপনি নিজের জন্য করছেন না পরিবারের জন্য করছেন সেটা দেখতে হবে। যদি পরিবারের জন্য করেন তাহলে ভালো করে পড়ে নিন। কারণ, পরিবারের একজনের মৃত্যু হলে প্ল্যানে অন্য সদস্যদের সমস্যা হতে পারে। অন্যদিকে একজন ব্যক্তির জন্য করলে সেখানে অবশ্যই অন্য কোনো বিষয় আসতে পারে না।খুব ভালো করে রিন্যুয়াল করার পদ্ধতি জেনে নিন। অনেক সময় এই ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে যদি রিন্যুয়াল না করা থাকে। আর দেখবেন যে কোম্পানী থেকে করছেন সেই কোম্পানীর প্রি-এক্সিসটিং ডিসিজ প্ল্যান আছে কিনা! এটা আপনার সকল রোগকে এই পলিসির আওতায় নিয়ে আসে। আপনি যদি প্ল্যান করার সময় ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন, তারপর যদি তার থেকে হার্ট ডিসিজ হয়, তাহলে এই প্ল্যান সেই রোগকেও এই আওতায় আনে।
আশা করি আপনারা মেডিক্লেইম সম্বন্ধে খানিক জানলেন। এরপর শরীর খারাপ হলে হাসপাতালের খরচের কথা ভেবে আর মাথায় হাত দিতে হবে না। শুধু দরকার ঠিক সময়ে ঠিক প্ল্যানটা করার। তাহলেই আপনি সবসময় হাসি মুখে থাকতে পারবেন।
মিউচুয়াল ফান্ড সম্বন্ধে জানুন বিস্তারিত | What is a Mutual Fund? – Explained in Detail
মন্তব্য করুন