শতাব্দীর সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ সময়ে আমরা দাঁড়িয়ে আছি। কোভিডের জন্য মৃত্যু, অক্সিজেনের অভাব, ওষুধের অভাব, হাসপাতালে বেডের অভাব সব মিলিয়ে বেঁচে থাকাই এখন সবচেয়ে বড় চিন্তার বিষয়।
এর মধ্যে যাদের আর্থিক দিক মজবুত তাঁদের মনে আশার আলো থাকলেও বেশির ভাগ মানুষ, যাদের সেরকম আর্থিক বল নেই, তাঁদের জন্য এই সময় সত্যিই খুবই কষ্টের। কিন্তু যদি আপনার একটি করোনা ইনসিওরেন্স করা থাকে, তাহলে অনেকটা মনে ভরসা থাকে, তাই না!
১. করোনা কবচ পলিসিঃ
এই পলিসি করোনার চিকিৎসাজনিত সব খরচ বহন করার জন্য। শুধু নিজের জন্য নয়, পরিবারের মানুষদেরও এই পলিসির আওতায় আনা যাবে। তিনটে সময়ের জন্য আপনি এই পলিসি করতে পারেন। আপনি এই পলিসি করতে পারেন সাড়ে ৩ মাস অর্থাৎ ১০৫ দিনের জন্য, সাড়ে ৬ মাস অর্থাৎ ১৯৫ দিনের জন্য, বা সাড়ে ৯ মাস বা ২৯৫ দিনের জন্য। সবচেয়ে বড় কথা হল, আপনি ১৫ দিনের মধ্যে পরিষেবা পেতে শুরু করবেন। অর্থাৎ কম সময়ের মধ্যে আপনি আর্থিক সুবিধে পাবেন।
প্রাইভেট বা সাধারণ জেনারেল ইনসিওরেন্স কোম্পানির মাধ্যমে আপনি এই ইনসিওরেন্স করাতে পারেন। বাড়িতে যদি চিকিৎসা হয় সেই খরচ, হাসপাতালে ভর্তির আগের ও পরের খরচ, সঙ্গে রাস্তায় অ্যাম্বুল্যান্সের খরচ, সবটাই এই পলিসি কভার করবে। খরচ কভার করা হবে ৫০,০০০ টাকা থেকে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত। ১৮ বছর বয়স থেকে ৬৫ বছর বয়সের মানুষ এই আওতায় আসবেন।
এবার দেখে নিন কোন ইনসিওরেন্স কোম্পানি কত প্রিমিয়াম রাখছেন,
- এসবিআই করোনা কবচ – ১৪৭/- – ৪৮৪৮/-
- ইউনাইটেড ইন্ডিয়া করোনা কবচ – ১৭৭/- – ৭৭৫০/-
- স্টার করোনা কবচ – ৩৫০/- – ৩৪৯৯/-
- ওরিয়েন্টাল করোনা কবচ – ৪০৪/- – ২২২৩/-
- নিউ ইন্ডিয়া অ্যাসিওরেন্স করোনা কবচ – ৫৮৫/- – ১০০৭৮/-
- বাজাজ অ্যালায়েন্স করোনা কবচ – ৭৪৫/- – ৩৩৭৮/-
আপনি কত প্রিমিয়াম দিচ্ছেন তার ওপরেই নির্ভর করবে আপনি ঠিক কত দিনের জন্য কভার পাবেন।
২. করোনা রক্ষা পলিসিঃ
যার নামে এই পলিসি আছে তিনি যদি করোনা পজিটিভ হন, তাহলে ১০০% খরচ দিয়ে দেবে এই পলিসি। ৫০,০০০ থেকে ২,৫০,০০০ পর্যন্ত এই পলিসি সুবিধে দেবে। ১৮ থেকে ৬৫ বছর বয়সি মানুষ এই পলিসির সুবিধে পাবেন। এখানেও কভার পাবেন সাড়ে তিন মাস, সাড়ে ৬ মাস বা সাড়ে ৯ মাসের জন্য। তবে এখানে পজিটিভ পরীক্ষিত হলেই এই পলিসি পাবেন। এই পলিসি পাওয়ার জন্য টানা ৭২ ঘণ্টা হাসপাতালে থাকতে হবে।
- এসবিআই করোনা রক্ষা পলিসি – ১৫৬.৫০/- – ২২৩০/-
- স্টার হেলথ ইনসিওরেন্স – ৭৬৯/- – ৬১২৭/-
পার্থক্য কোথায়ঃ
আইআরডিএ (Insurance Regulatory Development Authority of India) করোনার সময়ে প্রত্যেক হেলথ ইনসিওরেন্স কোম্পানিকে এই গাইডলাইন দিয়েছিলেন যে বাধ্যতামূলক ভাবে এই দুই পলিসি তাঁদের দিতে হবে। দুটি দিতে পারলে খুব ভাল, কিন্তু একটি দিতেই হবে। তবে এই দুই পলিসির পার্থক্য আছে। করোনা কবচ আপনার যে অর্থ খরচ হচ্ছে সেটি বুঝে আপনাকে টাকা দেবে। একে বলা হচ্ছে ‘ইনডেমনিটি রিস্ক বেসিস’।
কিন্তু করোনা রক্ষা পলিসিতে পলিসি টার্মে আপনার প্রিমিয়াম অনুযায়ী স্পষ্ট বলা থাকবে আপনি কত পাবেন। এক্ষেত্রে আপনার কত খরচ হল সেটা দেখা হবে না। একে বলা হচ্ছে ‘বেনিফিট বেসিস’।
অন্যদিকে, করোনা কবচ যেমন আপনার নিজের সঙ্গে আপনার সম্পূর্ণ পরিবারের জন্যও বটে, কিন্তু এই করোনা রক্ষা শুধুমাত্র আপনার জন্য। অর্থাৎ করোনা রক্ষা ‘ইনডিভিজুয়াল’ বেসিস।
আরও যা জানা উচিতঃ
সবার আগে যেটা অবশ্যই জনতে হবে সেটা হল এই পলিসি কখন আপনার ‘ক্লেম’ রিজেক্ট করতে পারে। আপনি তখনই এই ইনসিওরেন্সের সুবিধে পাবেন যখন আপনি সরকার অনুমোদিত কেন্দ্র থেকে করোনা পরীক্ষা করাবেন। সুতরাং আপনাকে দেখে নিতে হবে আপনি কোন জায়গা থেকে টেস্ট করাচ্ছেন আর তা সরকার অনুমোদিত কিনা।
আর এই দুই পলিসির ক্ষেত্রেই ‘ওয়েটিং পিরিয়ড’ থাকছে। অর্থাৎ আপনার পলিসি কেনার পর আর ক্লেম করার মাঝের সময়। এই সময় মূলত ১৫ দিন আর ৩০ দিনের মধ্যে। এর মধ্যে যদি আপনি ক্লেম করেন তাহলেও তা রিজেক্ট হতে পারে।
আপনি যে কোনও ইনসিওরেন্স কোম্পানি থেকে প্ল্যান করাতে পারেন। তার জন্য অবশ্যই প্ল্যান পলিসি টার্ম ভাল করে পড়ে নিতে হবে। বিভিন্ন ইনসিওরেন্স কোম্পানির সাইটে ভাল করে দেখে নিতে হবে। অর্থাৎ একটু ভাল করে গবেষণা করে নিতে হবে। কারণ আপনাকে এই পলিসিতেও অর্থ ইনভেস্ট করতে হবে। কিন্তু এই দুইয়ের মধ্যে যে কোনও একটি অবশ্যই আপনাদের করে রাখা উচিত।
মন্তব্য করুন