কাল মহাশিব রাত্রি। আপনিও নিশ্চয়ই শিবের পুজো করবেন, উপোষও করবেন সারাদিন ধরে। আর তারপর শিবের মাথায় জল ঢেলে আসবেন। এই নিশ্চয়ই আপনার পরিকল্পনা? কিন্তু শিব রাত্রি তো করবেন, নিষ্ঠা ভরে সব কাজও করবেন যা যা আপনি করে থাকেন শিব রাত্রির দিন। কিন্তু জানেন কি, মহাশিব রাত্রির পুজো নিষ্ঠা ভরে করলে কী কী হতে পারে? না জানা থাকলে এখনই পড়ে নিন আজকের আর্টিকল।
ব্যাধের গল্প জানেন তো?
পুরাণে বর্ণিত সেই ব্যাধের বিখ্যাত গল্পটি নিশ্চয়ই আপনারা জানেন? এক দেশে এক ব্যাধ ছিল। শিকার করেই দিন কাটত তার। নিষ্ঠুর সেই ব্যাধের দাপটে কাঁপত বনের সব পশুরাই। তা একদিন পশুহত্যা করে ব্যাধের মনে এলো অনুশোচনা। এক বক শিকার করে ফেরার পথে অভিভাবকহীন কিছু শিশু বককে দেখতে পেল সে। মা-কে হারিয়ে হয়তো তারা কাতর, কাঁদছে। ব্যাধের মনে ভয় হল, তার অবর্তমানে তার পরিবারেরও কি এরকম অবস্থা হবে? প্রথমে ভয়, তারপর ভয় থেকে এলো তীব্র গ্লানি, অনুশোচনা। ক্লান্ত ব্যাধ রাতে এক গাছের ডালে আশ্রয় নিলো।
ঘটনাচক্রে সেই দিনটিই ছিল পুণ্য শিবরাত্রিরই দিন। ব্যাধ যে গাছে শুয়ে ছিল, সেই গাছের তলায় ছিল একটি শিবলিঙ্গ। আর অনুশোচনায় সিক্ত ব্যাধের চোখের জল পড়েছিলো সেই শিবলিঙ্গে। এই অনুশোচনা আর নিজের পাপকে বুঝে তার জন্য আত্মগ্লানি—এটাই ছিল ব্যাধের এতদিনের জীবনে শ্রেষ্ঠ পুজো। তাই শিব তাকে মুক্তি দিলেন তার এতদিনকার সব প্রাণীহত্যার পাপের ভার থেকে।
পুরাণ বর্ণিত ব্যাধের ওই গল্প সূত্রেই জানা যায়, শিবরাত্রির দিন যে শিবের কাছ থেকে যাই চাইবে, শিব নাকি তা পূরণ করবেন। এই গল্পের অবশ্য নানা ভ্যারিয়েশন পাওয়া যায়। তবে এ কথা স্বতঃসিদ্ধ, অতি পাপীর প্রবল পাপও নাকি তিনি স্খালন করে দেন ওইদিন। তাছাড়া উপবাসে শিবরাত্রি পালন করলে নাকি যশ, ঐশ্বর্য, সুখ, সমৃদ্ধি—ইত্যাদিও শিব দান করে থাকেন। আর এগুলো কে না চায় বলুন তো? তাই শিবরাত্রি তো করতেই হবে।
শিবরাত্রি কি মেয়েদের পুজো?
আমাদের গ্রাম বাংলায় কিন্তু শিবরাত্রিকে মূলত মেয়েদের পুজো হিসেবেই দেখা হয়। কেন? তার পেছনেও আছে কিন্তু এক গল্পই। পুরাণে আছে শিবরাত্রির দিনই বিয়ে হয়েছিল শিব আর পার্বতীর। আর স্বামী হিসেবে শিবকে পাওয়ার জন্য পার্বতীর তপস্যার কথা তো আপনারা সবাই জানেন। শিবের মতো বর পাওয়া কি আর যে সে কথা বলুন? পার্বতীর তপস্যার জোর আছে বলেই না তিনি পেয়েছিলেন স্বয়ং দেবাদিদেব মহাদেবকে! তা এখনকার দিনে তো আপনার আর শিবের মতো বর পাওয়ার জন্য তপস্যা করার সময় নেই। তাছাড়া আপনার তপস্যারই বা আর সেই জোর কোথায় বলুন! অগত্যা বছরে একটি দিন শিবরাত্রির উপোষেরই ভরসা। উপোষ আর লিঙ্গে জল ঢালাতেই শিবের সন্তুষ্টি। আর আপনার শিবের মতো বর পেতে চাওয়ার প্রার্থনার সার্থকতা।
আর তাছাড়া ভাবুন তো সেই সময়ের কথা, যখন মেয়েরা জন্মেই শিখত, তাদের জীবনের সার্থকতা নাকি রামের মতো স্বামী পাওয়াতেই! সেই সমাজে যে মেয়েরা ‘ভালো’ বর পাওয়ার জন্য শিবের শরণ নেবে, এতে আর অবাক হওয়ার কি আছে! আর যখন স্বয়ং পার্বতীই চেয়েছেন শিবকে, তারা তো কোন ছার! তাই শিবরাত্রির ধারণা। শিবের মতো বরে তাদের জীবনকে এক্কেবারে পাকাপোক্ত করার ব্যবস্থা আর কি! যেন শিবের মতো বরেই তাদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত! তাই হাল আমলের আধুনিকারা যতই অফিসে যান, আর সব ব্যাপারে স্বামীকে টেক্কা দিতে চেষ্টা করেন, আল্টিমেটলি তাঁদেরও কিন্তু আসতেই হয় বছরের ওই একটি দিনে বাবা মহাদেবের চরণে, কষ্ট করে করে ফেলতে হয় উপোষ। কারণ যতই ‘স্বাধীন’ হন তাঁরা, ঠিকঠাক বরটি না পেলে যে হবে না!
কাল আপনিও শিবরাত্রি করবেন জানি। কিন্তু শিবের থেকে কী চাইবেন নিষ্ঠা ভরে পুজোর শেষে, সেটার দায়িত্ব কিন্তু আপনারই। মনে রাখবেন নিষ্ঠা ভরে চাইলে শিব কিন্তু কাউকেই ফেরান না।
মন্তব্য করুন