প্রচলিত প্রবাদ অনুসারে, লাখ কথা না হলে বিয়ে হয় না। নিজের পছন্দমতো কাউকে বিয়ে করা হোক বা পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে- বিয়ে নিয়ে আলোচনা হওয়া খুবই দরকার। কারণ মনে রাখতে হবে বিয়ে এমন একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান যেখানে দুটি হৃদয় মধুর বন্ধনে আবদ্ধ হয়।
ভারতীয় সংস্কৃতি অনুসারে মনে করা হয় যে, বিবাহ কেবল এক জন্মের নয়, সাত জন্মের বন্ধন। আরও বলা হয় যে, এটি এমনই একটা পবিত্র সম্পর্ক যেখানে দুটি পবিত্র মনই নয়, তার পাশাপাশি আবদ্ধ হয় দুটি পরিবারও। দুটি ভিন্ন মতাদর্শের মানুষ যখন একটি সম্পর্কে আবদ্ধ হন, তখন দুজনের মধ্যে বোঝাপড়া ভালো হওয়া দরকার।
সার্ভে করে পরিসংখ্যান পাওয়া গিয়েছে যে ভারতবর্ষে হাজারজন দম্পতির মধ্যে ৯০% বিয়ে হয়েছে বাড়ির পছন্দে অর্থাৎ কিনা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ। বাকি সংখ্যা হল লাভ ম্যারেজ। প্রেম করে বিয়ে হোক কিংবা দেখা-শোনা করে বিয়ে, দুইয়েরই কিছু ভালো দিক আর কিছু মন্দ দিক রয়েছে। দেখুন আপনাদের মতের সাথে মিলছে কিনা!
লাভ ম্যারেজ বা প্রেম করে বিয়ে
- প্রেম করে বিয়ে করার ক্ষেত্রে পুরুষ বা নারী তাঁদের মনের মতো সঙ্গী বেছে নিতে পারেন। সেক্ষেত্রে পরিবারের তরফে আলাদা করে কোনও চাপ আসে না। এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি স্বাধীনভাবে নিজেই নিজের জীবনসঙ্গী খুঁজে নেওয়ার সুযোগ পান।
- প্রসঙ্গত, আজকাল প্রেম করে বিয়ে করা খুবই সাধারণ ব্যাপার। সেইসঙ্গে খুব ট্রেন্ডিও। আজকের তরুণ প্রজন্মের মধ্যে নিজেই নিজের জীবনসঙ্গীকে বেছে নেওয়ার একটা প্রবণতা থাকে।
- সেক্ষেত্রে নিজের জীবনসঙ্গীর মধ্যে সে কী কী গুণ প্রত্যাশা করে সেইসবও দেখে নেওয়ার সুযোগ থাকে লাভ ম্যারেজের ক্ষেত্রে।
- প্রথম দর্শনে প্রেম হোক বা দীর্ঘদিনের সম্পর্ক। প্রেম করে বিয়ে করার ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যেকার পারস্পরিক বোঝাপড়ার সম্পর্ক খুব ভালোভাবেই তৈরি হয়।
- একে অপরের দোষ-গুণ, ভালোলাগা, খারাপ লাগা, ইচ্ছা-অনিচ্ছা সব বিষয়েই একটা প্রচ্ছন্ন ধারণা তৈরি হয় যা খুবই ইতিবাচক দিক।

অসুবিধাঃ
- অনেক সময়ে প্রেম করে বিয়ে করার ক্ষেত্রে পরিবারের সাপোর্ট পাওয়া যায় না। আপনার পছন্দের জীবনসঙ্গীকে যদি আপনার পরিবারের মানুষ, বিশেষত মা-বাবা মেনে না নেন, তাহলে আপনার জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠতে পারে।
- স্বামী-স্ত্রী যদি দুটি আলাদা কমিউনিটির হন তাহলে একে অপরের নিয়ম-নীতি রপ্ত করতে অনেকটা সময় লাগে। অনেকসময় ইচ্ছা না থাকলেও একে অপরের মতো চলতে বাধ্য হন।
- প্রেম করে বিয়ে করর পর যদি স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া অশান্তি হয় তাহলে পরিবারের তরফে সাপোর্ট পাওয়া যায় না।
- এই বিয়ের সবচেয়ে মুশকিল হল যে আগে থেকে দুজন দুজনের সম্পর্কে অনেকটাই জানার ফলে নিজেদের প্রতি আকর্ষণ খুব জলদি হারাতে থাকে।
অ্যারেঞ্জ ম্যারেজ বা বাড়ির লোকের পছন্দে বিয়ে

- সম্বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ার রীতি ভারতীয় সংস্কৃতিতে অতি প্রাচীন। এই বিবাহ রীতি অনুসারে পরিবারের তরফেই জীবনসঙ্গী খোঁজার কাজ চলে।
- পাত্র বা পাত্রীর মা-বাবা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা একত্রিত হয় একজন সর্বগুণসম্পন্ন নারী বা পুরুষের হাতে তুলে দেন তাঁদের বাড়ির মেয়ে বা ছেলেকে।
- সেক্ষেত্রে দুই পরিবারের ব্যাকগ্রাউন্ড, স্টেটাস বা সামাজিক অবস্থান বিচার করেই বিয়ে দেওয়া হয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে দুটি হৃদয়ের মিলনের চেয়েও বিয়ে যেন দুটি পরিবারের কাছে একটা উৎসবের চেহারা ধারণ করে।
- একটা সময় ছিল যখন সম্বন্ধ করে বিয়ে দেওয়ারই পক্ষপাত ছিল মানুষ। প্রেম করে বিয়ে সেই অর্থে মেনে নিতে পারতেন না অনেকেই।
অসুবিধাঃ
- কিন্তু একটি মুদ্রার সর্বদা দুটি পিঠ থাকে। ভালো দিক থাকবে কিন্তু খারাপ দিক থাকবে না এমনটা তো হতে পারে না। তাই অ্যারেঞ্জ ম্যারেজেও নানা অসুবিধার দিক রয়েছে।
- পণ দেওয়া আর পণ নেওয়া দুটোই আইনত অপরাধ হলেও আজকের দিনে দাঁড়িয়েও বহু মেয়ের বাবা মোটা টাকা পণ দিয়ে নিজের মেয়েদের পাত্রস্থ করেন। যা অ্যারেঞ্জ ম্যারেজের ক্ষেত্রে দেখা যায় এখনও।
- অনেক সময়ে কনের খুঁত যা আসলে সমাজের দিক থেকে নিম্ন মনের ভাবনা, তা ঢাকতেও (মেয়ের গায়ের রঙ কালো হলে, বা মেয়ের পরিবার গরিব হলে) মোটা টাকা পণ দিতে হয় ছেলের বাড়ির লোকেদের।
- অনেক সময়ে ছেলে-মেয়ের গুণ দেখে নয়, তাদের আর্থিক সঙ্গতি দেখেই তাদের বিচার করা হয়। যেমন মেয়ের বাড়ি বেশি বড় লোক না ছেলের বাড়ি, বা ছেলে বেশি ভালো চাকরি করে নাকি মেয়ে ইত্যাদি।
- সম্বন্ধ করে বিয়ে হলে একে অপরকে জানতে অনেকটা সময় লেগে যায়। তার ওপর শ্বশুরবাড়ি থেকে যদি সন্তান নেওয়ার চাপ আসে তাহলে তা নববধূর পক্ষে আরও কঠিন হয়ে যায়।
- সম্বন্ধ করে বিয়ের পর অনেক সময়ে গার্হস্থ্য হিংসার শিকার হতে হয় নববধূকে, যা সমাজের কাছে আজও একটা লজ্জার বিষয়।
সব কথার শেষ কথা
দেখুন বিয়ে সম্পূর্ণ নিজস্ব ব্যাপার। লাভ না অ্যারেঞ্জ করবেন সেটা এই প্রতিবেদন বলে দেবে না। আপনাকেই তা ঠিক করতে হবে। আমরা আপনাকে ভাবতে সাহায্য করতে পারি মাত্র। তবে শেষে একটা কথা বলবো যে, বিয়ে লাভ করে করবেন না করুন বা অ্যারেঞ্জ তা নিয়ে যতই সুবিধা অসুবিধা থাকুক না কেন, দিনের শেষে সংসার করবেন দুটি মানুষ। আর তাদের বৈবাহিক জীবনের সাফল্য নির্ভর করবে তাদেরই হাতে। এতে বিয়ের ধরন নিয়ে কিছু যায় আসে না। সুখী থাকাটা সম্পূর্ণ নিজেদের ব্যাপার।
মন্তব্য করুন