আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চওড়া কপালটা দেখতে ভালো লাগে না জানি। একরাশ ঘন চুলের স্বপ্ন তো ছেলে মেয়ে সবারই থাকে। একটা সময়ের পর চুল তো পড়বেই। কিন্তু, কম বয়সেই যদি এই সমস্যা হয় তাহলেই সব শেষ। পার্সোনালিটির দফারফা, কনফিডেন্সের অভাব আর পার্টনারের কাছে রোজ বকা খাওয়া। আর এই সবের দুশ্চিন্তায় আরও চুল উঠে যাওয়া। না না বন্ধুরা, ভয় দেখাচ্ছি না। বরং, তোমাদের মুশকিল আসান করতেই আজ হাজির হয়েছি আমি।
টাক পড়া আসলে কী
যেমন গাছের পাতা সবসময় থাকে না, তেমনি আমাদের চুলও সবসময় থাকবে না। বিষয়টা খুলেই বলি। চুল আমাদের শরীরের একটা সজীব উপাদান। আর যে কোনো সজীব বিষয়েরই ক্ষয় হবেই। তাই চুলও উঠবেই। রোজই আমাদের চুল পড়ে, যেমন রোজই হয়তো কিছু কোষ মরে যায়। কিন্তু, সমস্যাটা আসলে অন্য জায়গায়। দেখতে হবে চুল কী পরিমাণে পড়ছে আর সেই তুলনায় নতুন চুল গজাচ্ছে কি না! যদি তা না হয়, মানে চিরুনি লাগালেই গোছা গোছা চুল উঠছে আর চুল গজাচ্ছে না, তাহলেই আস্তে আস্তে দেখা যাবে কপালের দিকটা চওড়া হয়ে যাচ্ছে মানে সামনের চুল পড়ে যাচ্ছে যা ক্রমশ গোটা মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে। তখনই আমরা বলি টাক পড়ে গেছে।
কেন টাক পড়বে কম বয়সে?
নানা কারণেই টাক হতে পারে। আজকের দূষণের দুনিয়ায় সুস্থ থাকার কথা ভাবতেই পারি না আমরা। তো সেখানে চুলের মতো বিষয় যে ধুলো-বালি বা বাইরের নোংরায় ক্ষতিগ্রস্থ হবেই তাতে সন্দেহ কী! তার ওপর আমাদের ব্যস্ততায় সবসময় ভালো করে সময় নিয়ে চুল পরিষ্কারও করতে পারি না। তাই চুল অযত্নে রুক্ষ, শুষ্ক হয়ে ঝরে যায়। আবার যখন তখন বাইরের খাবার খেয়ে নেওয়া বা ভালো পুষ্টিকর খাবার না খাওয়ার জন্যও অনেকসময় চুল পুষ্টি না পেয়ে গোড়া আলগা হয়ে যায়, ফলে চুল পড়ে। অতিরিক্ত স্ট্রেস, টেনশন থেকে তো চুল পড়েই, আবার হেরিডিটি সূত্রেও টাক হতে পারে।
উপায়ও আছে ম্যাজিকের মতো
হ্যা, এবার আমরা দেখে নেব কী কী করলে টাক আর পড়বে না, তোমরাও এক মাথা সিল্কি ও বাউন্সি চুল নিয়ে তাক লাগাতে পারো।
১। নারকেল তেল ও পাতিলেবুর মিশ্রণ
উপকরণ
৫/৬ টেবিল চামচ নারকেল তেল ও ২/৩ ফোঁটা লেবুর রস
পদ্ধতি
প্রথমে নারকেল তেল ও লেবুর রস ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার ওই মিশ্রণটা আস্তে আস্তে মাথার তালুতে ম্যাসাজ করতে হবে প্রায় দশ থেকে পনেরো মিনিট। এবার ঘন্টা দুয়েক রেখে দিতে হবে, এর বেশি নয়। এবার চুলের ধরণ অনুযায়ী নির্দিষ্ট শ্যাম্পু দিয়ে শ্যাম্পু করে নিতে হবে ভালো করে। এভাবে নিয়মিত করতে থাকলে উপকার পাওয়া যাবে। আসলে নারকেল বা নারকেল তেলের মধ্যে থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান চুলের গোড়া মজবুত করে ও পুষ্টি যোগায়। তাই তালু ভালো থাকে, চুল কম পড়ে।
২। অলিভ অয়েল, মধু ও দারচিনির হেয়ার মাস্ক
উপকরণ
চুলের দৈর্ঘ্য অনুযায়ী অলিভ অয়েল, ১/২ চা চামচ মধু ও ১ চা চামচ দারচিনির গুঁড়ো
পদ্ধতি
প্রথমে অলিভ অয়েল গরম করে নিতে হবে। এবার এতে মধু ও দারচিনির গুঁড়ো মিশিয়ে ভালো করে মিশ্রণটা বানাতে হবে। এই মিশ্রণ এবার চুলের গোড়ায় ও গোটা চুলেই ভালো করে দিতে হবে ও পনেরো থেকে কুড়ি মিনিট চুলে রাখতে হবে। এবার শ্যাম্পু করে নিতে হবে। এতে চুলের গোড়া মজবুত হবে ও চুল কম পড়বে।
৩। নিমপাতা
উপকরণ
নিমপাতা ১০/১২ টা, ৪/৫ গ্লাস জল
পদ্ধতি
চার থেকে পাঁচ গ্লাস জল গরম করতে বসাতে হবে ও তাতে নিমপাতা দিয়ে দিতে হবে। এবার জলটা ফুটিয়ে অর্ধেক করে আনতে হবে। এই জল ঠান্ডা করে মাথা ধোয়ার জন্য যদি সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন ব্যবহার করা যায়, তাহলে খুব ভালো উপকার পাওয়া যাবে। তাছাড়া নিমপাতা বেটে চুলের গোড়ায় দিলেও যথেষ্ট উপকার পাওয়া যায় টাক পড়ার ক্ষেত্রে।
৪। অলিভ অয়েল ও রসুনের তেল
উপকরণ
এক বোতল অলিভ অয়েল, কয়েক কোয়া রসুন
পদ্ধতি
প্রথমে একটা বোতলে অলিভ অয়েল নিতে হবে। তারপর এর মধ্যে কয়েক কোয়া রসুন দিয়ে রেখে দিতে হবে এক সপ্তাহ মতো। এই এক সপ্তাহ পর আপনার তেল তৈরি হয়ে যাবে। মাথায় এই তেল এবার লাগানো শুরু করলে চুল পড়া বন্ধ হবে ও টাক আসবে না। আসলে রসুনে থাকা ভিটামিন সি, উচ্চমাত্রার সালফার, সেলেনিয়াম চুল পড়া বন্ধ করে। এছাড়াও রসুন চুলের উকুন মারতেও বেশ কার্যকর।
৫। জবাফুল ও লেবুর রসের মিশ্রণ
উপকরণ
এক গ্লাস জল, দু’টি জবা ফুল, কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস
পদ্ধতি
প্রথমে এক গ্লাস মতো জল গরম করতে দিতে হবে। জল ফুটে আসলে তার মধ্যে দু’টি জবা ফুল দিয়ে আরও তিন-চার মিনিট ফোটাতে হবে। এবার জলটা নামিয়ে ঠান্ডা করতে হবে। এই ঠান্ডা জলে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিতে হবে। এবার শ্যাম্পু করার পর যেখানে টাক পড়া শুরু হয়েছে সেখানে এই মিশ্রণটি দিয়ে লাগিয়ে রাখতে হবে। আসলে জবা ফুলে আছে ভিটামিন এ, সি ও আলফা-হাইড্রোক্সিল অ্যাসিড যা চুল’কে মজবুত করে।
তাহলে বন্ধুরা, জেনে গেলে টাক’কে বাই বাই বলার যাদুমন্তর। কিন্তু, মূলত যদি অনেকদিনের সমস্যা হয় টাক, তাহলে এইগুলো ব্যবহারের পাশাপাশি ডাক্তারের পরামর্শ নিতেই হবে। আর তারও আগে ভালো করে খেতে হবে, ঘুমোতে হবে আর চিন্তাকে দূর হটাতে হবে। নিজে আগে ভালো থাকো, হাসিখুশি থাকো, দেখবে তোমার চুলও খিলখিলিয়ে হাসছে।
বরের বিয়ার বেঁচে গেলে ফেলবেন না চুল শ্যাম্পু করে নিন বিয়ার দিয়ে
মন্তব্য করুন