আশা করি কলকাতা হানাবাড়ি পর্ব ১ পড়ে আপনাদের ভালো লেগেছে। যাওয়ার চেষ্টা করেছেন নাকি? তা এখনও না গিয়ে থাকলে একবার ঘুরেই আসুন না ! আচ্ছা, চলুন, আজ তাহলে আপনাদের গন্তব্যের তালিকাটা আরেকটু বাড়িয়ে দিই। এখানে আরও ৫ টা ভূতুড়ে জায়গা আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।
কলকাতা হাইকোর্ট
উপনিবেশের সময় এটি নির্মিত হয়, ১৭৭৪ সালে। এটি ভারতের প্রাচীন আদালত। তখন অবশ্য এটি কলকাতা হাইকোর্ট না, ভারতের সুপ্রিম কোর্ট হিসাবে কাজ করত। ১৯৭৭ সালে আনেক্স বিল্ডিং তৈরি হয় চাপ কমাবার জন্য। শোনা যায় এখানে একজন অপরাধীর মৃত্যু ঘোষণা হবার পর থেকে নাকি এখানে অনেক দারোয়ান বা অন্যান্য অনেকেই সন্ধ্যের দিকে তার ছায়া দেখেছেন। তাই অনেকেই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বেড়িয়ে যেতে চান কাজ সেরে। ভাবুন খালি!
পুতুল বাড়ি
শোভাবাজার ঘাটের কাছে এই পুতুলবাড়ি বা বৃহৎ অট্টালিকা অবস্থিত। নিমতলা ঘাটও এখানে খুব কাছে। অসংখ্য পুতুল নির্মান করে বাড়িটি সাজানো। বিশ শতকের গোড়ায় যখন হুগলী নদীর নাব্যতা বৃদ্ধি পায় তখন কলকাতা বন্দরের গ্রহনযোগ্যতা তৈরি হয়। তাই মশলা, পাটের জিনিস এইসব অনেক পরিমাণে আসতে থাকে। এগুলো রাখার জন্য মজুত করে বড় বড় বাড়ি বানানো হয়। পুতুল বাড়ি সেরকমই এক অট্টালিকা। এই অঞ্চলে যে বাবুরা থাকতেন তারা এই বাড়িটাকে ব্যবহার করতেন মেয়েদের এনে তাদের ওপর অত্যাচার করার জন্য। এখানে মেয়েদের ধর্ষন করে খুন করা হত। তাই ধরা হয় সেই সব মেয়েদের আত্মা এখানে আজও রয়েছে। এই বাড়িতে এখনও কিছু মানুষ বাস করেন। তারা কিছু অদ্ভুত শব্দ পান। ওপরের অংশে তারা যেতে বারণ করেন।
নিমতলা মহাশ্মশান
১৮২৭ সালে এই ঘাট নির্মিত হয়। ২০১০ সালে এই ঘাটের চুল্লীর ও পরিকাঠামো সূত্রে অনেক টাকা ব্যয় করেন কেন্দ্রীয় সরকার। এটি একটি বিখ্যাত শ্মশান। এখানে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখদের শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শ্মশান নিয়ে এমনিতেই আমাদের অনেক গা-ছমছমে ভাব থাকে। এই ঘাটও তার ব্যাতিক্রম নয়। কালীপুজোর রাতে নাকি এখানে অঘোরীরা আসে। তারা নাকি তান্ত্রিক কাজের জন্য অর্ধদগ্ধ মাংস খায়। মৃতদেহ নিয়ে তারা শবসাধনা করে। অর্থাৎ গোটা ব্যাপারটাই খুব ভয়ানক ও রহস্যমায়।
দ্য রয়্যাল ক্যালকাটা টার্ফ ক্লাব
১৮৪৭ সালে এটি নির্মিত হয়। এটাকে আমরা রেস কোর্স বলি সাধারণত। এখানেও ভৌতিক গল্প প্রচলিত আছে। ১৯৩০ সাল নাগাদ জর্জ উইলিয়াম নামে একজন ঘোড়া প্রেমিক তার সাদা ঘোড়াকে খুব ভালোবাসত। এই ঘোড়াটি প্রায় সবকটা রেস জিতত। কিন্তু, বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ঘোড়াটার জেতার ক্ষমতাও কমে যায়। একদিন একটি রেসে হেরে যাবার পর পরের দিন সকালে ঘোড়াটার মৃতদেহ মাঠে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এই ঘোড়াটার ভূতই আছে বলে এখন শোনা যায়। পূর্ণিমার দিন সন্ধ্যেবেলা রেসকোর্সের গা ঘেঁষে গেলে নানা ভৌতিক ডাক শোনা যায়।
হাওড়া ব্রিজের নীচে
মল্লিক ঘাট ফুলের মার্কেটের কাছে যে অংশ ব্রীজের সেখানে নাকি অশরীরী আত্মা আছে। একদম ভোরে যারা যান হাঁটতে তারা নাকি অনেকসময় দেখেছেন যে মাঝ নদীতে হাত তুলে কেউ বাঁচাও বাঁচাও বলছে। কিন্তু, বাঁচাতে গেলেই বিপদ। সে আর নাকি ফিরে আসতে পারবে না। আবার অনেকসময় চারপাশ থেকে অনেক অদ্ভুত আওয়াজ আসে। গঙ্গায় আত্মহত্যা বা দুর্ঘটনা এই সবই এই ধরনের কাহিনীর জন্ম দিয়েছে।
তাহলে একদিন সবাই চলে যান দলবেঁধে ভৌতিক পরিবেশের ছোঁয়া পেতে। তবে একা যদি যেতে ইচ্ছে হয় তাহলে আরেকবার ভেবে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ, কী বলেন!
মন্তব্য করুন