ভূতে ভয় থাকলে রাতের ঘুম কেড়ে নিতে পারে আজকের লেখা। আপনার শহরের আনাচে কানাচে আজও ঘুরে বেড়ায় অশরীরী। বলা হয় কলকাতার বিশেষ বিশেষ কয়েকটি বাড়িতে গেলে আচমকা দেখে ফেলতে পারেন কোন ছায়ামূর্তি। সত্যি না মিথ্যা তা জানা নেই। তবে আপনাদের কয়েকটি জায়গার খোঁজ দিতে পারি, যেখানে গেলে “তেনাদের” দেখা মিলতে পারে।
হেস্টিংস হাউস
ভারতের প্রথম গভর্ণর জেনারেল ওয়ারেন হেস্টিংসের প্রাসাদ যা বর্তমানে কলকাতার একটি প্রসিদ্ধ ওমেন কলেজ। ১৭৭৫ থেকে ১৭৮৫ পর্যন্ত এটি ভারতের প্রধান প্রশাসনিক ভবন ছিল এটি। পরবর্তীকালে এটি সরকারী অতিথিশালায় পরিণত হয় লর্ড কার্জনের দ্বারা ১৯০১ সালে। লোকমুখে শোনা যায় এই অট্টালিকারও নানা রহস্যময় কাহিনী যেটি সবচেয়ে প্রচলিত সেটি হল অনেকে নাকি রাতের বেলা সেই সময়ের জুড়ি গাড়ি করে একজনকে নামতে দেখেন। তাদের বিশ্বাস এটি হেস্টিংসের আত্মা। আসলে তিনি নাকি ইংল্যান্ড থেকে কিছু কাগজপত্র আনেন যা হারিয়ে ফেলেন ও সেটা তিনি ১৭৭৫ সাল থেকে আজ অব্দি নাকি খুঁজেই চলেছেন। আবার অনেকে বলেন, ১৭৮৭ সালে তিনি ঘুষের অভিযোগে অভিযুক্ত হন। তিনি সেই সময় এই বাড়িতেই থাকতেন ও তাঁর কাছে নাকি এই অভিযোগের বিরুদ্ধে তথ্য ছিল। সেই তথ্যাদি তিনি নাকি সেদিন থেকে আজ অব্দি খুঁজেই যাচ্ছেন। ভাবুন তো একবার! আচমকা সত্যি যদি হেস্টিংস সাহেবের ভূত সামনে চলে আসে কি হবে? আপনাদের কি হবে জানা নেই, কিন্তু আমার পিলে নির্ঘাত চমকাবে।
আরেকটি কাহিনী হল একটা ছেলেকে নিয়ে। বাচ্ছা ছেলেটা নাকি ফুটবল খেলতে খেলতে বুকে আঘাত পায় ও মারা যায়। সেই থেকে নাকি এখানে কোন বাচ্ছা ভয়ে খেলতে পারে না। কারণ খেলতে গেলেই অজানা কোন ভয় অচকিৎ’এ এসে যায় তার মনে। আবার অনেকে নাকি রাত্রিবেলা একটা সাদা ঘোড়াকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছে যার কোন অস্তিত্ব সকালে থাকে না। শোনা যায় ঘোড়াটা নাকি একজনের বন্দুকের গুলিতে মারা যাওয়া ঘোড়ার আত্মা। যা হেস্টিংস হাউসের আশেপাশে আজও ঘুরে বেড়ায়।
জাতীয় গ্রন্থাগার
বই প্রেমিকদের কাছে এটি তীর্থক্ষেত্র। এমনি প্রেম করার পরিবেশও যে খুব খারাপ তা নয়। বর্তমান জাতীয় গ্রন্থাগার স্থাপিত হয় ১৮৩৬ সালে। তৎকালীন গভর্নর জেনারেল লর্ড মেটকাফ প্রায় ৪৬৭৫ টা বই ফোর্ট উইলিয়াম কলেজ থেকে এখানে আনেন।
এই বিখ্যাত বাড়িটিও ভৌতিক হিসাবে স্বীকৃত। শোনা যায় যে লেডি মেটকাফ নাকি অপরিস্কার বা সঠিক জায়গায় জিনিস না রাখা খুব অপছন্দ করতেন। তাই নাকি আজও যদি কেউ যথাস্থানে বই না রাখেন বা যত্রতত্র আবর্জনা ফেলার চেষ্টা করেন তবে নাকি তিনি কানের কাছে গরম হাওয়া অনুভব করেন।
আবার এই বিল্ডিঙে যে সংস্কার চলছে তা করতে গিয়ে নাকি কিছু শ্রমিক মারা যান। তারা এতটাই কাজের প্রতি দায়বদ্ধ ছিলেন যে তারা আজও নাকি কাজ করেন।
আবার শোনা যায় এক বাংলা ভাষার ছাত্র এখানে গবেষণা করতে এসে গেটের কাছে দুর্ঘটনায় মারা যান। সে নাকি আজও আসে তার গবেষণা সম্পন্ন করতে। তাই সকালে অনেকে দেখেন টেবিলে কাগজ ছড়ানো, কিন্তু, এটি খোলে সকাল দশটায়। তাই বই প্রেমিক, ভূত প্রেমিক বা সাধারণ প্রেমিক যে কেউ ঘুরে আসতেই পারেন এখান থেকে।
রাইটার্স বিল্ডিং
বিবাদী বাগে রাইটার্স বিল্ডিং বা মহাকরণ আমরা সবাই দেখেছি। লাল রঙের এই বিল্ডিং ছিল ভারতের প্রথম প্রশাসনিক ভবন। ১৭৭৭ সালে এটির নির্মাণ শুরু হয় ও নকশা করেন থমাস বলে একজন। ২০১৩ সাল পর্যন্ত এটি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর অফিস ছিল।
এই বাড়ি নিয়েও নানা কাহিনী আছে। এখানেই বিনয়-বাদল-দীনেশ সিম্পসনকে হত্যা করেন। শোনা যায় তাঁর অতৃপ্ত আত্মা নাকি আজও প্রতিশোধের জন্য অপেক্ষা করছে। অনেকেই এখানে রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে কান্নার শব্দ পান।
অনেক ফাঁকা ঘর আছে এখানে। সেই ঘরগুলো নিয়েও অনেক কাহিনী আছে। সন্ধ্যের পর কেউই এখানে থাকতে চান না। একটি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়কে বলতে যে তিনি যখন জরুরী অবস্থার সময় রাতে থাকতেন এখানে তিনিও নাকি কিছু অদ্ভূত শব্দ পান।
রবীন্দ্র সরোবর মেট্রো স্টেশন
এটি একটি অন্যতম ব্যস্ত মেট্রো স্টেশন। টালিগঞ্জ থেকে এটির দূরত্বই সবচেয়ে বেশি। এই দীর্ঘ সময়ের পথেই ঘটে থাকে অধিকাংশ দুর্ঘটনা। আজ অব্দি ঘটা প্রায় ৭০% আত্মহত্যা এখানেই হয়েছে। তাই অনেকে একে বলেন Paradise of Suicide। এখানে রাতের শেষ ট্রেনে অর্থাৎ রাত ১০.৩০ র ট্রেনে অনেকেই ছায়া দেখতে পান। বা দেখতে পান ট্রেন ছাড়লে যে লোকটাস্টেশনে ছিল সেই লোকটা আর নেই। এইরকম অভিজ্ঞতা নাকি অনেকেরই হয়েছে।
সাউথ পার্ক স্ট্রীট সেমিট্রি
কলকাতা শহরের অন্যতম কবরস্থান। ১৭৬৭ সালে এটি নির্মিত হয়। এখানে অনেক প্রসিদ্ধ কবর আছে। আর এখানকার পরিবেশ অনায়াসেই এই জায়গাকে ভৌতিক হিসাবে গড়ে তুলেছে। একটু বিকেলের দিকে, যখন আলো খানিক হাল্কা হয়ে আসবে, তখন কবরগুলোর মধ্যে দিয়ে হেঁটে দেখলে গা ছমছম করবেই। অনেকে নাকি এখানে ছবি তোলার পর সেই ছবি পরে দেখতে গিয়ে দেখেছেন ছবি আসেনি। তখন কিন্তু এসেছিল। আবার অনেকের ছবি তোলার সঙ্গে সঙ্গে হাপানির সমস্যা হয়েছে যা তার আগে ছিলই না। অনেকে আবার কবরের গা দিয়ে রক্ত গড়াতে দেখেছেন। কী বীভৎস না!
তবে এই সব জায়গার সম্পর্কে নানান কাহিনী বহু যুগ ধরে চলে আসছে। সবটাই শোনা। চাক্ষুষ ভূত দেখেছেন এরকম কেউ আমাদের সন্ধানে নেই। আপনাদের সন্ধানে আছে নাকি? থাকলে জানাবেন নীচের কমেন্ট বক্সে। তাহলে, কী ভাবছেন? যাবেন নাকি কোন হন্টেড হাউস ট্রিপে! সে যেতেই পারেন। কিন্তু …… বাকিটা জানতে হলে পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা করুন।
মন্তব্য করুন