শিরোনাম শুনেই নিশ্চয়ই ভাবতে বসলেন যে এ আবার কী নিয়ে আর্টিকেল রে বাবা! আমরা আসব সেই বিষয়ে। তার আগে আপনার মাথায় হাত দিয়ে দেখুন তো আপনার চুল কী এখনও খুব খসখসে আর শুষ্ক? কিন্তু আপনি তো ভালো শ্যাম্পু আর কন্ডিশনার ব্যবহার করেছেন, তাও কেন কোনও লাভ হচ্ছে না! কিছু একটা সমস্যা তাহলে কোথাও আছে। এই সমস্যা লুকিয়ে আছে এই পরোসিটি বা আপনার চুলের ছিদ্রতার উপর।
আপনি যদি এটি সম্বন্ধে ভালো করে জেনে রাখেন, তাহলে আপনার যেমন চুল বা স্ক্যাল্প ভালো রাখতে সুবিধে হবে, তেমনই ঠিক প্রোডাক্ট কিনতেও সুবিধে হবে। আসুন জেনে নিই হেয়ার পরোসিটি সম্বন্ধে বিস্তারিত।
হেয়ার পরোসিটি কী
হেয়ার পরোসিটি আপনার চুলের সেই ক্ষমতা বোঝায় যার দ্বারা আপনি বুঝতে পারবেন আপনার স্ক্যাল্প আর চুল কতটা কালার, ময়েশ্চার, তেল বা অন্য উপাদান গ্রহণ করতে সক্ষম। আপনার চুলের কিউটিকল কতটা ব্যবহার করা উপাদান গ্রহণ করতে পারে সেটাও কিন্তু এই হেয়ার পরোসিটির উপর নির্ভর করে।
আর এই বিষয়ে জানা থাকলে আপনি ঠিক প্রোডাক্ট কিনতে যেমন পরবেন, তেমনই ঘরেও উপযুক্ত পরিমাণে নিজস্ব প্যাক বানাতে পারবেন। কারও চুল হয় হাই পরোসিটির আবার কারও চুল হয় লো পরোসিটির। আমরা এবার আলোচনা করব হেয়ার পরোসিটির প্রকারভেদ সম্বন্ধে।
ক. লো পরোসিটি
এই ক্ষেত্রে আপনার চুলের কিউটিকল খুব ঘন ভাবে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকে। তাই ময়েশ্চার সহজে চুলে ঢুকতে পারে না। এই ধরণের চুল যেমন ময়েশ্চার চুলে ঢুকতেও দেয় না, তেমনই চুলের ভিতরে থাকা ময়েশ্চারের কাজ করার ক্ষমতাও কমিয়ে আনে। এই ধরণের চুল তেলও ভালো করে নিতে পারে না, তাই চুলের সার্বিক স্বাস্থ্য ঠিক থাকে না।
খ. সাধারণ বা মিডিয়াম পরোসিটি
এই ধরণের চুলে ময়েশ্চার খুব ভালো ভাবে যায়। তেলও তার কাজ করতে পারে ঠিক মতো। তাই চুল হয় সুন্দর, চকচকে। এই ধরণের চুল স্টাইল করার জন্যও অনবদ্য।
গ. হাই পরোসিটি
এই ধরণের চুল অতিরিক্ত ময়েশ্চার নিয়ে নেয়। তাই চুল নেতিয়ে থাকে, ভলিউম বাড়ে না চুলের। চুল তেমন সিল্কি হয় না।
চুলের পরোসিটির ধরণ জানার পর এবার আপনাদের নিশ্চয়ই জানতে ইচ্ছে করছে আপনার চুল কোন ধরণের? তাহলে কয়েকটি সহজ পদ্ধতি আপনাদের বলে দিই।
১. দ্য ফ্লোট টেস্ট
ক. প্রথমে কয়েকটি চুল নিয়ে ঘরের সাধারণ তাপমাত্রায় রাখা জলের পাত্রে ফেলে দিন।
খ. আপনার ওই চুল যেন পরিষ্কার থাকে, সেটা দেখে নেবেন।
গ. ২ থেকে ৪ মিনিট ধরে এবার দেখুন ওই চুল।
ঘ. যদি চুল একদম নিচে চলে যায় জলের, তাহলে বুঝবেন আপনার হাই পরোসিটির চুল। যদি আস্তে আস্তে জলে নিচে যায়, তাহলে বুঝবেন আপনার নর্মাল পরোসিটির চুল। আর যদি আপনার চুল জলের উপরে বা মাঝখানে ভাসে তাহলে বুঝবেন আপনার চুল লো পরোসিটির।
২. দ্য স্লিপ অ্যান্ড স্লাইড টেস্ট
ক. আপনার একটি চুল বুড়ো আঙুল আর তর্জনী আঙুলের মাঝে নিয়ে ঘষতে থাকুন উপর থেকে নিচ পর্যন্ত।
খ. যদি আপনার আঙুল তাড়াতাড়ি নিচে নেমে না আসে, তাহলে বুঝবেন আপনার হাই পরোসিটির চুল। আর যদি খুব সহজেই স্লিপ হয়ে নেমে আসে তাহলে লো পরোসিটির চুল। আর যদি চুল থেকে আঙুল নর্মাল ভাবে নেমে আসে, তাহলে আপনার সাধারণ পরোসিটির চুল।
৩. স্প্রে বোটল টেস্ট
ক. একটি চুল নিন আর তার উপর জল স্প্রে করুন।
খ. যদি চুলের উপর জল বিন্দু বিন্দু হয়ে থাকে, তাহলে আপনার লো পরোসিটির চুল। যদি চুল জল শুষে নেয়, তাহলে আপনার হাই পরোসিটির চুল। কিন্তু যদি চুলে জল কিছুক্ষণ থাকে তারপর শুষে নেয় চুল, তাহলে নর্মাল পরোসিটির চুল আপনার।
এ ছাড়াও আরও কিছু পরীক্ষা আছে যার মাধ্যমে আপনি আপনার চুলের পরোসিটির কথা বুঝতে পারবেন। যেমন,
৪. ফ্রেগনেন্স টেস্ট
এমন একটি জায়গায় যান যেখানে বেশ শক্তিশালী গন্ধ আছে, মানে কোনও পারফিউম দোকানে বা ফাস্ট ফুডের দোকানে। এবার সেখানে কিছুক্ষণ থাকুন। তারপর বাড়ি ফিরে যদি দেখেন আপনার চুল থেকে সেই গন্ধ আসছে তাহলে বুঝবেন আপনার চুল হাই পরোসিটির। আর যদি গন্ধ না পান তাহলে বুঝবেন আপনার চুল লো পরোসিটির। আর যদি হাল্কা গন্ধ পান তাহলে বুঝবেন নর্মাল পরোসিটির চুল আপনার।
৫. প্রোডাক্ট টেস্ট
আপনার ব্যবহার করা প্রোডাক্টের মাধ্যমেও আপনি বুঝতে পারেন আপনার চুলের পরোসিটি কী। যেমন, যদি আপনার ব্যবহার করা প্রোডাক্ট তাড়াতাড়ি চুল শুষে নেয় তাহলে বুঝবেন তা হাই পরোসিটির চুল। আর যদি দেখেন চুলে ব্যবহার করা তেল বা কন্ডিশনার অনেকক্ষণ ধরে স্ক্যাল্পে আছে, তাহলে বুঝবেন আপনার লো পরোসিটির চুল। আর যদি দেখেন আপনার চুলে এর মাঝামাঝি কাজ হচ্ছে, তাহলে বুঝবেন আপনার চুল নর্মাল পরোসিটির।
৬. হেয়ার ড্রাইং টেস্ট
চুল জলে ভিজিয়ে সাধারণ ভাবে শুকোতে দিন। যদি আপনার চুলের শুকোতে বেশি সময় না নেয় তাহলে আপনার চুল হাই পরোসিটির চুল। আর যদি চুল শুকোতে বেশি সময় নেয় তাহলে আপনার চুল লো পরোসিটির। আর যদি সাধারণ ভাবেই শুকোয়, তাহলে তা নর্মাল পরোসিটির চুল।
৭. সাইন টেস্ট
লো পরোসিটির চুল বেশি উজ্জ্বল হয় কারণ তা আলো প্রতিফলিত করে। হাই পরোসিটির চুল হয় অনুজ্জ্বল কারণ তা আলো শুষে নেয়। আর যদি চুল সাধারণ ভাবে উজ্জ্বল দেখায়, খুব কম বা বেশি নয়, তাহলে তা নর্মাল পরোসিটির চুল।
৮. ট্যাঙ্গল টেস্ট
যদি আপনার চুলে জট পড়ে আর তা ছাড়াতে খুব সমস্যা হয়, তাহলে বুঝবেন আপনার হাই হেয়ার পরোসিটি। যদি জট তাড়াতাড়ি ছাড়ানো হয়, তাহলে তা লো পরোসিটির চুল। আর এর মাঝামাঝি হলে, আপনার চুল নর্মাল পরোসিটির।
৯. প্রোটিন টেস্ট
চুল হাই পরোসিটির হলে তা প্রোটিন ট্রিটমেন্টে ভালো সাড়া দেয়। আর লো পরোসিটির হলে তা এই প্রোটিন ট্রিটমেন্টে খুব সহজে সাড়া দেয় না। আর নর্মাল পরোসিটির চুলে প্রোটিন ট্রিটমেন্ট উপযুক্ত সময় মেনে নিয়ম মাফিক কাজ দেয়।
এবার যখন আপনি জেনেই গেলেন আপনার চুল কোন পরোসিটির, তাহলে শুরু করুন চুল ভালো রাখার পদ্ধতি।
লো পরোসিটি হেয়ার কেয়ার
যেহেতু এই চুল খুব কম ময়েশ্চার শোষণ করে, আপনি তাই এই কাজগুলো করতে পারেন,
ক. চুলে আর্গন তেল, নারকেল তেল বা জোজোবা তেল ব্যবহার করতে পারেন। তেল ম্যাসাজ করার আগে খানিক গরম করে নিন।
খ. দুই সপ্তাহ পর পর আপনার চুল কন্ডিশনিং মাস্ক দিয়ে সুন্দর করুন। সেই মাস্কে যেন অ্যাভোকাডো, কলা অলিভ তেল থাকে।
গ. ভালো করে শ্যাম্পু করুন স্ক্যাল্প আর চুল থেকে ময়লা তোলার জন্য।
নর্মাল পরোসিটি হেয়ার কেয়ার
এই ধরণের চুল ময়েশ্চার, তেল সবই উপযুক্ত পরিমাণে নিতে পারে। তাই খুব একটা আলাদা যত্নের দরকার নেই। সাধারণ যত্ন নিলেই হবে। তবে রাসায়নিক উপাদান বেশি ব্যবহার করবেন না। এতে চুল শুষ্ক হয়ে যাবে।
হাই পরোসিটি হেয়ার কেয়ার
এই ধরণের চুলে শুষ্কতা বা জট পড়া এগুলো বেশি হয়। তাই এই চুলের যত্ন বেশি করে নিতে হয়।
ক. এক দিন ছাড়া ছাড়া চুলে কন্ডিশনার ব্যবহার করুন চুলের ময়েশ্চার ধরে রাখার জন্য।
খ. জোজোবা তেল, নারকেল তেল বা অলিভ তেল দিয়ে চুল ম্যাসাজ করুন ভালো করে। এতে চুলের ময়েশ্চার বজায় থাকবে।
গ. চুলে হিট দেওয়া বা অতিরিক্ত সিরাম, জেল ব্যবহার না করাই ভালো।
১০টি ওয়াটার ফল বিনুনি স্টাইল বা হেয়ার স্টাইল যা এনে দেবে নতুন লুক
মন্তব্য করুন