কি? ছুটিতে মধ্যপ্রদেশ যাবার প্ল্যান করছেন? অথচ খাজুরাহোর নামেই আপনার বাড়ির লোক নাক সিট কোচ্ছেন? নানা, ওরকম করারও কিছু নেই। খাজুরাহো মন্দির কিন্তু সেই বিখ্যাত মন্দির যা ‘টেম্পল অফ লাভ’ নামে পরিচিত! মধ্যপ্রদেশে বেড়াতে যাচ্ছেন অথচ আপনার ট্যুর ডেস্টিনেশনে খাজুরাহো মন্দির নেই এ হতে পারে না!
খাজুরাহো অবশ্য নামেই ‘মন্দির’, আদতে খাজুরাহো বললেই আমাদের মনে যা ভেসে ওঠে সেটা আর যাইহোক কোনো ভক্তি গদগদ মন্দিরের ছবি নয়। খাজুরাহো মানেই একটা কৌতূহল, রহস্য, ঠোঁট চাপা মুচকি হাসি। একটু ইতিহাস জানা মানুষ যে দৃষ্টিতে খাজুরাহোকে, তার ওই অপূর্ব সুন্দর ভাস্কর্যগুলোকে দেখবেন, সাধারণ মানুষ সেগুলিকে দেখবেন অন্য দৃষ্টিতে, কারণ তার কাছে খাজুরাহো মানেই ‘কি অশ্লীল আর কি খারাপ’ ছাড়া আর কিছুই নয়! খাজুরাহোকে বর্তমানে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে’র তকমা দিয়েছে। তা সত্ত্বেও ইতিহাস না জেনেই অনেকে খাজুরাহোকে অবজ্ঞা করেন। অশ্লীল বলে দেগে দেন তার অপূর্ব সুন্দর ভাস্কর্যগুলোকে।
খাজুরাহোর কিছু কথা
মধ্যপ্রদেশের বেশ খানিকটা প্রান্তিক এলাকায় খাজুরাহো মন্দিরগুলি অবস্থিত। ইতিহাস বলে এই মন্দিরগুলি বানানো হয়েছিল ৯৫০-১০৫০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে চান্দেলা রাজাদের রাজত্বকালে। রাজশিল্পীদের উদ্যোগে মন্দিরগাত্র জুড়ে কঠিন পাথরের গায়ে ফুটে উঠতে লাগল অদ্ভুত সব কারুকাজ—যার মধ্যে বেশিরভাগটাই দেবদেবীদের মিলন মুহূর্তের ছবি। নগ্ন শরীর, আর যৌনতা–প্রাচীন বা ভারতীয় ঐতিহ্যে বিভিন্ন সংস্কৃত কাব্যে দেখি যে এই সমস্তর অনুপুঙ্খ বিবরণ। অর্থাৎ প্রাচীনকালে ভারতীয় সংস্কৃতিতে মিলনের বর্ণনাকে অশ্লীল বলে চিহ্নিত করা হয়নি। তাহলে আজ কেন খাজুরাহোকে দেখতে এত লুকোচুরি?
কেন খাজুরাহোর ভাস্কর্যের ছবি দেখলে আমরা মুখ ফিরিয়ে নিই ‘খারাপ’, ‘নোংরা’ বলে! কেন কোনারকের মন্দির বা পুরীর মন্দির দেখতে যেভাবে যাই সেভাবে খাজুরাহো মন্দিরকে দেখতে যাই না? আসলে মন্দিরগাত্রে মিলনের ভাস্কর্য খোদাই করাকেও তখন ধরা হত আনন্দ, প্রাচুর্য ও প্রকৃষ্টতার চিহ্ন হিসেবেই। যা এখন আমাদের কাছে ‘নোংরা’। বিশিষ্ট ভারত বিশেষজ্ঞ উদয়ন ইন্দুরকারও এই ভাস্কর্যের মধ্যে অশ্লীল কিছু দেখেননি। তাহলেই ভেবে দেখুন প্রায় হাজার বছর আগেও মানুষ ভাবনা-চিন্তার দিক দিয়ে কেমন এগিয়ে ছিল! যৌনতা তাদের কাছে ছিল নিতান্তই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার।
মুসলমান শাসনের সময় এই মন্দিরগুলির বেশীরভাগ ধ্বংস করা হয়। পরে মন্দিরগুলি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
খাজুরাহো মিথ না ইতিহাস
খাজুরাহো মন্দিরের ইতিহাস, কেন সেগুলিকে নির্মাণ করা হয়েছিল এ সম্পর্কে ইতিহাস নীরব। সমসাময়িক ঐতিহাসিকের জবানীতে জানা যায় মাহমুদ গজনীও নাকি ভারতে এসেছিলেন এই মন্দিরগুলি লুঠের উদ্দেশ্য নিয়ে। তবে সফল হননি। তবে ইতিহাসের থেকেও আমরা অনেকসময় মিথে বিশ্বাস করে ফেলি। আর সেগুলিকেই সত্যি কাহিনী বলে মানতে শুরু করি। খাজুরাহো নিয়েও সেরকমই কিছু জনপ্রিয় যৌনতায় ভরা মুচমুচে পুরাকাহিনী প্রচলিত আছে, যা ওখানে গেলেই গাইড আপনাকে শোনাবেই। আসুন তার কিছু জেনে নিই।
খাজুরাহো মিথ
হিন্দু পুরাকথা বা কিংবদন্তি অনুযায়ী বারানসীতে হেতম্বী নামে পরমা সুন্দরী এক ব্রাহ্মণ কন্যা ছিলেন। অল্প বয়সেই তিনি বিধবা হন। একবার গ্রীষ্মের এক জ্যোৎস্না আলোকিত রাতে তিনি যখন সরোবরে স্নান করছিলেন, তখন স্নানরতা অবস্থায় তাঁকে দেখে চন্দ্রদেব মুগ্ধ হন ও তাঁকে কামনা করেন। চন্দ্র মানুষের রূপ ধারণ করে পৃথিবীতে আসেন এবং হেতম্বী ও চন্দ্রদেব মিলিত হন। শারীরিক মিলনের ফলে হেতম্বী গর্ভবতী হয়ে পড়েন ও নিজের ভুল বুঝতে পেরে চিন্তিত হয়ে পড়েন। চন্দ্রদেব তখন ভবিষ্যৎবাণী করেন যে হেতম্বীর গর্ভে যে সন্তান আছে, সে হবে বিপুল ক্ষমতার অধিকারী ও খাজুরাহোর প্রথম রাজা।
হেতম্বী বারানসী ত্যাগ করে দূরে খেজুরবনে গিয়ে সন্তানের জন্ম দেন। সন্তানের জন্মের পর হেতম্বী তাঁর নাম রাখেন চন্দ্রবর্মণ। পিতার মতোই সে সাহসী ও শক্তিশালী হয়ে ওঠে। চন্দ্রের আদেশে চন্দ্রবর্মণ ওই এলাকায় মন্দির নির্মাণ করেন ও মন্দিরগাত্রে ‘ইরোটিক’ মূর্তি খোদাই করেন। শোনা যায় হেতম্বী আর চন্দ্রদেবের কাম ও প্রেমের নিদর্শন হিসেবেই খাজুরাহো গড়ে ওঠে। তাই মন্দির জুড়ে শুধু যৌনতা আর কামের ছবি। চন্দ্রের ভবিষ্যৎবাণী ছিল এই মন্দির আসলে হেতম্বীকে তার পাপ থেকে মুক্তি দেবে।
এছাড়া খাজুরাহো মন্দিরগুলি সম্পর্কে আর একটি মিথ আমরা পেয়ে থাকি। সে মিথ অনুসারে হেতম্বী ছিলেন কলিঞ্জর রাজ্যের রাজব্রাহ্মণ মনিরামের কন্যা। অল্প বয়সেই তিনি বিধবা হন। মনিরাম একদিন ভুল করে রাজাকে অমাবস্যার রাতকে পূর্ণিমা বলে ফেলেন। হেতম্বী পিতার এই ভুল জানার পর চিন্তিত হয়ে পিতার সম্মান রক্ষার্থে চন্দ্রদেবের কাছে প্রার্থনা জানান। চন্দ্র হেতম্বীর রূপে মোহিত হন ও তাঁরা মিলিত হন। হেতম্বী গর্ভবতী হয়ে পড়েন। মনিরাম এই ঘটনাটি জানতে পেরে শোকে মুহ্যমান হয়ে নিজেকে অভিশাপ দিয়ে পাথরের মূর্তিতে পরিণত করেন। পরবর্তীকালে হেতম্বীর সন্তান চন্দ্রতেয় চান্দেলা রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন ও খাজুরাহো মন্দির নির্মাণ করেন।
তাহলে জেনে নিলেন তো কেন খাজুরাহোকে বলে ‘টেম্পল অফ লাভ’। দেরি কীসের? এবারই না হয় খাজুরাহো বেড়ানোর প্ল্যানটা করে ফেলুন। দেখবেন ইতিহাসও হচ্ছে, আর তার সাথে প্রেমও হচ্ছে!
https://dusbus.com/bn/sex-korar-samoy-condom-bybohar-nischit-surokha-dey-ki/
মন্তব্য করুন