একটা সময় ছিল যখন মানুষ প্রত্যেকদিন বাজার থেকে তাজা শাক-সবজি কিনে আনত। কিন্তু ঘরে ঘরে রেফ্রিজারেটর এসে যাওয়ার ফলে সেইদিন আজ আর নেই। মানুষ আজ ফ্রিজের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। খাবার-দাবার বলুন বা শাকসবজী ফ্রিজে স্টোর করে রাখলে তা অনেক দিন ধরেই ব্যবহার করা যায় এবং তা ভালোও থাকে বেশকিছুদিন।
ভারতীয় মহিলারা ফল-সবজী, খাবার-দাবারের পাশাপাশি আটা বা ময়দা মেখে লেচিটিও ২-৩ দিনের জন্য ফ্রিজে রেখে দেন। একসঙ্গে অনেকটা পরিমাণে আটা বা ময়দা মেখে রেখে নিলে একদিনে যতটা প্রয়োজন ততটা লেচি নিয়ে বাকি মন্ডটি দু-তিন দিনের জন্য ফ্রিজে রেখে দেন তারা। কিন্তু জানেন কি এমন অনেক উপকরণই রয়েছে, যা ফ্রিজে রাখা উচিত নয়, তেমনই একটি উপকরণ হল মেখে রাখা আটা বা ময়দা। আর এই প্রতিবেদনে আপনাদের জানাব যে, কেন মেখে রাখা আটা বা ময়দার তাল ফ্রিজে রাখা উচিত নয়।
মাখা আটা ফ্রিজে না রাখার বৈজ্ঞানিক কারন
আটা বা ময়দা মেখে ফ্রিজে না রাখার নেপথ্যে রয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক কারণ। বলা হচ্ছে এমনিতে আটা বা ময়দা মেখে তা ফ্রিজে রাখার ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু সমস্যা তখনই হয়, যখন সেটিকে সঠিক নিয়ম মেনে ফ্রিজে রাখা না হয়। সঠিকভাবে ফ্রিজে কীভাবে আটা মাখা রাখবেন সেই বিষয়ে বিস্তারিত জানাবো। এই গেল এক। আর দ্বিতীয়ত, আটা বা ময়দা মেখে ফ্রিজে রাখার হলে কখনওই তা ৪৮ ঘণ্টার বেশি রাখবেন না। তাহলেই কিন্তু মন্ডটি নষ্ট হতে শুরু করে।
এই বিষয়ে আয়ুর্বেদ কী বলে?
আয়ুর্বেদ অনুসারে, একদিনে আপনার যতটুকু আটা বা ময়দা প্রয়োজন, সেইটুকু পরিমাণি আটা বা ময়দা মাখুন। এটিকে ফ্রিজে বা অন্য কোথাও সংরক্ষণ করার কোনও প্রয়োজন নেই। বাসি আটা বা ময়দা দিয়ে বানানো রুটিতে পুষ্টির মাত্রা অনেকটাই কম থাকে।
ধার্মিক ও অন্যান্য মত
- অনেকেই হয়তো জানেন না, যে ফ্রিজে আটা বা ময়দা মাখা রাখার নেপথ্যে একটা ধর্মীয় বিশ্বাসও রয়েছে। মনে করা হয় কেউ যদি অনেকদিন ধরে বাড়িতে মেখে রাখা আটা বা ময়দা রেখে দেন, তাহলে ভুত-প্রেত-এর মতো দুষ্টু বা নেতিবাচক শক্তি আপনার বাড়িতে বাসা বাধে।
- তন্ত্র মতানুসারে, আটা বা ময়দা দিয়ে অনেক সময়ে একটি মানবদেহের আকার ধারণ করে থাকে, যার প্রতি আকৃষ্ট হয় অতৃপ্ত আত্মারা। আর এর ফলে পরিবারের অন্দরে অশান্তি, বিভেদ এবং ঝামেলার সৃষ্টি হয়ে থাকে।
- আরও বিশ্বাস করা হয় যে, বাসি খাবার রাক্ষস খেয়ে থাকে অতএব মানুষ যদি বাসি খাবার খায় তাহলে তাদের মধ্যেও দানব বা শয়তানের প্রবণতা দেখা দিতে পারে। তাই একান্ত বাধ্যবাধকতা না থাকলে বাড়িতে কোনও বাসি খাবার মজুত করা উচিত নয়।
তাহলে এখন প্রশ্ন হল যদি খুব তাড়াহুড়ো থাকে আর বাড়িতে ময়দা বা আটা মেখে রেখে দেওয়ার দরকার পড়ে তাহলে!
মেনে চলুন এই কয়েকটি টিপস
- আটা বা ময়দা মেখে মন্ডটি একটি এয়ার টাইট পাত্রে রাখুন, যাতে তার মধ্যে এতটুকুও হাওয়া না ঢোকে সেই বিষয়টি নিশ্চিত করুন।
- প্রয়োজনে কিচেন ব়্যাপ (প্লাস্টিক ব়্যাপ) বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে মুড়েও রাখতে পারেন।
- সবচেয়ে ভালো হয় যদি জিপলক ব্যাগে আটা বা ময়দা মাখা রাখতে পারেন।
- আসলে হাওয়া লেগে গেলেই আটা বা ময়দার মন্ড নষ্ট হতে শুরু করে। যা থেকে বানানো রুটিতে কোনও পুষ্টিগুণ থাকে না।
যেকোনও বিষয়ের নেপথ্যেই যুক্তি- পাল্টা যুক্তি কাজ করে। আর তা নিয়েই নানা মানুষের মনে ধর্মীয় বিশ্বাস ও সংস্কার বাসা বাঁধে। তবে সুস্থ থাকাটাই সব মানুষের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত। তাই এই বিষয়টিতে যদি সহমত হন তাহলে আটা বা ময়দা কখনওই ফ্রিজে রেখে খাবেন না। একান্ত যদি দরকার না পড়ে, তাহলে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই আটা বা ময়দা মাখুন।
মন্তব্য করুন