শহরে জাঁকিয়ে পড়েছে তীব্র শীত সঙ্গে দোসর কনকনে উত্তরে হাওয়া। আকাশে কখনো রোদের উঁকিঝুঁকি তো কখনো মেঘাচ্ছন্ন কুয়াশাময় শীতলতা। এরই মধ্যে চলছে চা দোকানে আগুন জ্বেলে হাত সেঁকা, আবার কেউ কেউ গরম ভারী ভারী পোশাকে একেবারে জবুথবু।
বাইরে কনকনে ঠান্ডার দাপট থেকে বেঁচে কোনোরকম ঘরে লেপের উষ্ণ আশ্রয় খোঁজা এক পরম সুখ বলা বাহুল্য। কিন্তু বাইরের পারদ পতন এতটাই হিমশীতল হয়ে দাঁড়ায় যে ঘরের ভেতরেও তিষ্ঠানো দায় হয়। আপনি বলবেন কেন রুমহিটার আছে তো? কিন্তু শীতের শেষে বিল আসবে মোটা! কিন্তু যদি বলি সেটা ছাড়াই আপনি ঘর গরম রাখতে পারবেন আর কারেন্টের বিল লাগবে না দিতে প্রচুর! তার জন্য মানুন এই দশটি পন্থা।
১. উজ্জ্বল রং:
- উজ্জ্বল রং তাপমাত্রা ধরে রাখতে সক্ষম লাল, কমলা ইত্যাদি রং দিয়ে দেয়াল রং করালে অনেক তাপমাত্রা আবদ্ধ করে রাখতে সক্ষম কারণ এদের তরঙ্গদৈর্ঘ বেশি।
- সম্ভব না হলে বাড়ির ইন্টেরিয়র ডেকোরেশন এ পরিবর্তন করুন। বেডশীট, সোফার কভার ও জানালার পর্দা উজ্জ্বল রং এর করুন। এতে বাড়ির সৌন্দর্য ও বাড়বে।
- ঘরে একটি বড় লাইট দেবার পরিবর্তে ছোট ছোট এলইডি বা বাল্ব প্লেস করে লাগাতে পারেন। টেবিল এর উপরে বা ওয়াল ক্যাবিনেট এর পাশে। তাতে ঘর আলোকিত ও গরম থাকবে।

২. আসবাবের পরিবর্তন:
- ঘরের ভেতরে ঠান্ডা দেয়ালের ভেতর দিয়েই আসে।তাই যেসব সামগ্রী দেয়াল সংলগ্ন সেগুলো ঘরের ভেতরের দিকে প্লেস করে রাখুন।
- ধরুন কোনো টেবিল দেয়ালে ঠেকানো আছে।সেখানে বসে কাজ করলে আপনার শরীরে আরো দ্রুত ঠান্ডা সঞ্চারিত হবে। তাছাড়া কাঠ এমনিতেই তাপের কুপরিবাহী।
৩. পর্দার ব্যবহার:
- ঘরের দরজা ও জানালা দিয়েই বেশি ঠান্ডা হাওয়া ঘরে ঢোকে। এই জন্য বাড়ির দরজা ও জানলার ওপর ভারী ও মোটা পরতের পর্দা ব্যবহার করুন।
- আবার দিনের বেলা বাড়ির রোদের উষ্ণতা যাতে ঘরে প্রবেশ করে তার জন্য দিনের বেলা জানালা ও দরজা খুলে রাখুন পর্দা সরিয়ে।
৪. কার্পেট কামাল:
- শীতকালে দেখবেন সবচেয়ে বেশি যেটা নিয়ে উদ্বেগ থাকে তা হলো পা গরম মোটেই হতে চায়না। তার প্রধান কারণ হলো ঘরের মেঝের হিমশীতল হওয়া। যদি সেটা মার্বেল বা টাইলস নির্মিত হয় তবে তো কথাই নেই।
- শীতের সময় মেঝে ঢেকে দিন কার্পেট বা শতরঞ্জি দিয়ে। এখন হালফ্যাশন এর পাটের নানা আধুনিক কারুকাজের চাটাই পাওয়া যায়। ব্যবহার করে দেখতে পারেন। এটাও ঠান্ডা উপরে ছড়াতে বাধা দেয়।
৫. দেয়াল কভারিং:
- দেয়াল যত দ্রুত তাপ ছেড়ে ঠান্ডা হয় তত দ্রুত তাপগ্রহন করতে পারেনা।তাই দেয়াল এর প্রতি নজর দেয়া দরকার ঠান্ডা প্রতিরোধে।
- দেয়ালে পোস্টার, ছবি, ক্যানভাস বা ট্যাপেস্ট্রি ঝুলিয়ে রাখতে পারেন। পারলে বুক সেল্ফ রাখুন।এগুলো ভালো ইন্সুলেটর এর কাজ করে আর আপনি থাকবেন আরামপ্রদ।
৬. আয়নার ব্যবহার:
- জানালা যদি বড়ো হয় তবে তার পাশে ৩০° কোণে কাত করে আয়না বা আরশি রাখতে পারেন।
- কাঁচ আলোর পুনঃপুনঃ প্রতিফলন ঘটিয়ে আলোকশক্তিকে তাপশক্তিতে রূপান্তরিত করবে। এইভাবে ঘরে উষ্ণতা বাড়বে।
৭. শূন্যস্থান পূরণ:
- ছোটবেলায় একটু আধটু শূন্যস্থান পূরণ আমরা সবাই করেছি। এখানেও তাই করতে হবে আর কি। দরজা জানলার ফাঁক গলেই কিন্তু ভিলেন হাওয়া প্রবেশ করে ঘরে।
- সেটা ঠেকাতে দরজা জানালার ফাঁকে রাবার বেল্ট, কাগজ বা সিলভার ফয়েল ব্যবহার করে গোঁজা দিতে পারেন।
৮. রান্নাবান্না:
- শীতকালে ছোটখাটো রান্না বা ভাজাভুজি রান্নাঘরে না করে সেটা রুমেই করুন।
- রুমের ভেতরে করলে সাবধানে করবেন অবশ্যই। স্টোভ বা ইন্ডাকসন এক্ষেত্রে ভালো। তবে বেশি সময় ধরে না করাই শ্রেয়।
- এটা ঘরের তাপমাত্রা বেশ কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেবে।
৯. লোক সমাগম:
- বাতাসের ধর্ম হলো নীচ থেকে উপরের দিকে ওঠা। এই সুবিধেকে কাজে লাগিয়ে চেষ্টা করুন বাড়ির সদস্যরা যাতে একটা রুমেই থেকে গ্রূপ এক্টিভিটি বেশি করা যায়।
- বেশি লোক থাকলে তাদের শ্বাস প্ৰশ্বাস ও বডিহিট বায়ুকে গরম করে তার চাপ নামিয়ে দেবে। এর ফলে হিট সঞ্চালন বাড়বে।
১০. নিজেকে গরম রাখুন:

- শীতকালে শুস্কতা বেশি থাকে তাই জল বেশি করে খান। জল আপনাকে হাইড্রেট করে বডি টেম্পারেচার ধরে রাখবে ও হাইপোথার্মিয়ার সম্ভাবনা কমাবে।
- শীতকালে কাঁপুনি তাড়াতে শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ এর কার্যকারিতা বাড়িয়ে ব্যায়াম করুন ও আলসেমি ভাগান।
- ত্রিস্তরীয় বলয় বানান পোশাকের। ভেস্ট, উলের জামা তারপর লেদারের জ্যাকেট ব্যবহার করুন বা নর্থফেস। শরীরের উষ্ণতা যেননা বেরোয় কোনোভাবেই।
- শীতের শাকসবজি খান। মরশুমী ফল ও খান। আদা, মধু, দারচিনি ইত্যাদি সেবন করুন ইম্যুনিটি বাড়িয়ে জ্বর, সর্দি থেকে দূরে থাকুন।
- বেশি করে ঝাল খান। ঝাল খেলে জিভ জ্বালা করলেও শরীরের তাপমাত্রা বাড়ে আর রক্তনালীর সংবহন ক্ষমতা বেড়ে যায়। ফলে হাত পা থাকবে গরম।
মন্তব্য করুন