কৃমি, নাম শুনলেই কেমন গা গুলিয়ে আসছে তো? মনে হচ্ছে নিশ্চয়ই এর থেকে বাজে কিছু আর হতেই পারে না? কিন্তু ছোটবেলায় আমরা সবাই কম- বেশী এই কৃমির জ্বালায় ভুগেছি, আর আমাদের মায়েরা কত রকমই না ব্যবস্থা করেছেন এই অশান্তি থেকে আমাদের মুক্তি দিতে! তাই এখনকার মায়েদের এই জ্বালা থেকে মুক্তি দিতে আজ হাজির হয়েছি আমরা, স্পেশাল কৃমির যম কালমেঘ পাতার টিপস নিয়ে।
কালমেঘের গুণাগুণ
কালমেঘ পাতা নিশ্চয়ই আপনি চেনেন এবং হয়তো এই পাতার রসও খেয়ে থাকবেন! জানেন কি, এই কালমেঘ পাতাই কিন্তু কৃমির যম! আপনি যদি কৃমি একেবারে সাফ করতে চান তাহলে বেশী এদিক-ওদিক না দৌড়ে বাজার থেকে বা আপনার বাড়ির পাশে যদি কালমেঘ পাতার গাছ থেকে থাকে তাহলে এক্ষুনি সংগ্রহ করুন|
তবে জানেনই তো যে কালমেঘ পাতা বিদঘুটে তেতো। কিন্তু তাও সেই বাধা আপনাকে অতিক্রম করতেই হবে! কালমেঘ পাতায় আন্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান এবং আরো অনেক রকমের বায়ো-অ্যাক্টিভ উপাদান থাকে যা আমাদের শরীরে প্রবেশ করে কৃমিদের মেরে ফেলে এবং স্বাভাবিক দৈহিক উপায়ে তা শরীর থেকে বের করে দিতে সক্ষম হয়| এছাড়া এর তিতকুটে স্বাদও কৃমিগুলিকে মেরে ফেলতে খুব বেশী মাত্রায় সাহায্য করে|
কৃমি এবং তার উপসর্গ
কালমেঘ পাতা কৃমির যম, তা তো আমরা জানলাম। কিন্ত কীভাবে কালমেঘ পাতা কৃমি সাফ করতে ব্যবহার করবেন তা জানার আগে কৃমি কী, কীভাবে আমাদের শরীরে তা প্রবেশ করে এবং এর লক্ষণগুলি কী কী, তা জেনে নেওয়া প্রয়োজন|
কৃমি প্যারাসাইট বা পরজীবী প্রাণী| এটি আমাদের ইন্টেস্টাইনে বাসা বাঁধে এবং আমাদের শরীরের অন্যান্য অর্গ্যানগুলিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করে| এগুলি সাধারণত দূষিত জল বা খাবার থেকে আমাদের শরীরে প্রবেশ করে। এছাড়া সেক্সুয়াল কন্ট্যাক্ট বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা, এমনকি আমাদের নাক ও ত্বকের মাধ্যমেও এই কৃমির সংক্রমণ হয়|
নানা ধরণের কৃমি
কৃমি নানা ধরণের হতে পারে। যেমন, গোলকৃমি, কুচো কৃমি, ফিতা কৃমি ইত্যাদি| কৃমি হলে সাধারণত চুলকানি, মুখে দুর্গন্ধ, পেটে ব্যথা, গ্যাস, ডায়েরিয়া, বেশী খিদে পাওয়া ইত্যদি উপসর্গ দেখা যায়| সাধারণত ছোটো বাচ্ছাদের এই কৃমি বেশী মাত্রায় হয়। তবে বড়দের পক্ষে কিন্তু কৃমি মারাত্মক ক্ষতির সম্ভাবনা রাখে|
কৃমি নাশে কালমেঘের ব্যবহার
সাধারণত বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শিশুদের এই কৃমির কবলে পড়তে হয়| তবে সময়মত নিরাময়ের ব্যবস্থা করলে তা পুরোপুরি সেরেও যায়| আর এই নিরাময়ের ব্যবস্থা করতে হলে আপনার চাই কালমেঘ পাতা| এই পাতা খুব তাড়াতাড়ি কিন্তু কৃমি নাশ করতে পারে| তবে এটি খাওয়ার সবথেকে বড় সমস্যা হলো এর স্বাদ| এই কালমেঘ পাতা কীভাবে খাওয়া যেতে পারে জেনে নিন|
১.
উপকরণ
কালমেঘ পাতা বাটা পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি
কালমেঘ পাতা বেটে তার রস বের করে সকালে খালি পেটে খেলে কিছুদিনের মধ্যেই সমস্ত কৃমি মরে বেরিয়ে যাবে|
বাজারে পতঞ্জলি কালমেঘ পাতার রস পাওয়া যায়| যা কিন্তু বেশ উপকারী এবং ১০০% প্রাকৃতিক উপাদানে তৈরী| আপনি যদি কালমেঘের রস বাড়িতে না তৈরী করতে চান তাহলে এই রস খেলেও সমান উপকার পাওয়া যাবে|
২.
উপকরণ
কালমেঘ পাতা পরিমাণ মতো, জল, অল্প গুড়।
পদ্ধতি
কালমেঘ পাতা, জল ও গুড় একসাথে বেটে ছোট্ট মটরশুঁটির দানার মত বল বানিয়ে নিন| রোদে শুকিয়ে একটি পাত্রে রেখে দিন| প্রতিদিন সকালে খালি পেটে জলের সঙ্গে ট্যাবলেটের মত গিলে খেলেও কিন্তু খুব উপকার পাওয়া যাবে| এটি তেতো রস খাওয়ার থেকে অনেক বেশী সহজ|
কৃমি দেখতে ছোট্ট হলেও এর ক্ষতি কিন্তু খুব বেশী মারাত্মক| এর ফলে ছোট শিশুরা প্রায়ই পেটের ব্যথা বা ডায়েরিয়ার শিকার হয়| তাই আপনাকে সচেতন হতে হবে| অতিরিক্ত বেশী সংক্রমণ হলে চাইল্ড স্পেশালিস্টের পরামর্শ একান্ত প্রয়োজনীয়|
তবে যদি প্রথম অবস্থাতেই কালমেঘ পাতা খাওয়া শুরু করা যায় তাহলে বেশী সংক্রমণ বা ক্ষতির সম্ভাবনা গোড়াতেই নির্মূল হয়| তাই এখন থেকে কৃমির যম এই কালমেঘ পাতাকেই আপনার হাতিয়ার করুন আর কৃমির বংশ নির্বংশ করুন।
মন্তব্য করুন