আদা যে শুধু একটা মশলার উপাদান নয়, তা তো আপনারা সবাই জানেন। আদার ভেষজ গুণ অসীম। এমনিতে তো আদা চা আমরা সবাই খেয়ে থাকি সর্দি-কাশি হলে বা মাথা ধরলে। উপকারও পাই। কিন্তু জানেন কি, আদা আমাদের ভেতর থেকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি খুব সুন্দর ভাবেই ত্বক আর চুলকেও ভালো রাখতে পারে। আজ আসুন জেনে নেওয়া যাক কীভাবে কাঁচা আদা খেলে আমরা ত্বক আর চুলকে সুন্দর রাখতে পারি।
ত্বকের যত্নে কাঁচা আদা

আমাদের ত্বকের যত্ন নিতে কাঁচা আদার ব্যবহার করেই দেখতে পারেন। এতে কিন্তু আপনি খুবই উপকার পাবেন।
১. বয়সের ছাপ হতে দেয় না
এখন আমাদের কাজের চাপ, চিন্তা, ব্যস্ততা এইসবের জন্য অল্পবয়সেই মুখে বার্ধক্যের ছাপ পড়তে থাকে। অনেক কিছু মেখে হয়তো বাইরে থেকে সাময়িক ফল পেতে পারেন, কিন্তু স্থায়ী সমাধান কিছু হবে না। এক্ষেত্রে আপনি কাঁচা আদা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টি-এজিং উপাদান আর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট উপাদান টক্সিন বের করে দেয়। মুখে রক্ত সঞ্চালনের মাত্রা বাড়ায়।
➡ আপনার মুখে বয়সের ছাপ? দূর করুন সহজে
কীভাবে খাবেন
রোজ সকালে খানিক কাঁচা আদা মুখে নিয়ে চিবিয়ে নিন। প্রথম দিকে সমস্যা হবে। কিন্তু অভ্যেস করলে উপকার পাবেনই।
২. শীতে ত্বকের কুঁচকে যাওয়া আটকায়
শীতকালে আমাদের ত্বক সবারই কম-বেশী কুঁচকে যায়। রক্ত শীতে খানিক ঘন হয়ে যায়। তাই শরীরের সব জায়গায় সমান ভাবে রক্ত পৌঁছতে পারে না। মুখেও পৌঁছতে পারে না। তাই চামড়া কুঁচকিয়ে যায়। আদা খেলে কিন্তু এই সমস্যার থেকে মুক্তি পাওয়া যায় আর স্কিন থাকে টানটান।
কীভাবে খাবেন
গরম জলে ৪ টেবিল চামচ মতো আদা কুচি দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এবার এই জল ঠান্ডা করে খেতে থাকুন। দেখবেন খুব তাড়াতাড়ি উপকার পাবেন।
৩. শ্বেতী রোগ কমাতে
শ্বেতী রোগ নিয়ে আমাদের অনেক বাছ-বিচার আছে। এই রোগ হলে দেখতে তো খারাপ লাগেই, তা অনেকসময় সামাজিক অসম্মানের কারণও হয়ে থাকে। কিন্তু জানেন কি কাঁচা আদা খুব সুন্দরভাবে এই শ্বেতীকে কমিয়ে আনতে পারে।
কীভাবে খাবেন
কাঁচা আদা মুখে ফেলে রাখুন শুধু। ব্যাস আর কিছুই করতে হবে না। এছাড়া আপনারা আদা বাটাও মাখিয়ে রাখতে পারেন ওই শ্বেতীর জায়গায়। কয়েক সপ্তাহেই উপকার পাবেন।
৪. পোড়া দাগ দূর করে
আপনার ত্বকে যে কোনো দাগই থাকুক না কেন, তা যদি রোদে পোড়া কালো দাগই হয়ে থাকে, তার থেকেও আদা আপনাকে মুক্তি দেবে।
কীভাবে খাবেন
কাঁচা আদার রস করে নিন আগে। তারপর তা রোজ খেতে থাকুন খালি পেটে। এছাড়া কাঁচা আদাও আপনি পোড়া জায়গায় ঘষতে পারেন। ৪ থেকে ১২ সপ্তাহ করে দেখুন।
৫. ব্রণ দূর করতে
ব্রণ মূলত হয় ব্যাকটেরিয়া থেকে। আদায় থাকা অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল উপাদান তাই ব্রণ দূর করতে সাহায্য করে। ব্রণর জ্বালাও কমাতে সাহায্য করে। নিয়ম করে তাই আদার ব্যবহার করুন।
কীভাবে খাবেন
আদার রস করে নিয়ে খালি পেটে খেতে থাকুন। আর সঙ্গে আদার একটা টুকরো হাল্কা করে ঘষতে থাকুন ব্রণর জায়গায়। কয়েক সপ্তাহেই ফল পাবেন।
চুলের জন্য
ত্বকের জন্য যে আদা খুবই ভালো সেটা তো জানলেনই। এবার চুলের জন্যও যে কাঁচা আদা খুবই জরুরী তা দেখে নিন। তবে এক্ষেত্রে লাগাতে পারলে বেশী উপকার পাওয়া যাবে।
১. চুলের গ্রোথ বাড়ায়
আদা স্ক্যাল্পে রক্তের সঞ্চালন বাড়ায়। হেয়ার ফলিকল মজবুত করে। তাই চুলের বৃদ্ধি খুব ভালো হয়।
উপকরণ
৪ চামচ কাঁচা আদা বাটা, ৭ ফোঁটা জোজোবা অয়েল।
পদ্ধতি
দুটি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে রাখুন ৩০ মিনিট। গোটা স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন। তারপর ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে একদিন করুন।
২. ড্রাই হেয়ারের জন্য খুবই ভালো
অনেকেরই চুল খুব ড্রাই হয়। শীতকালে তো আরও ড্রাই হয়ে যায়। এর থেকেও রক্ষা করবে আদা। আদায় থাকা ভিটামিন, জিঙ্ক, ফসফরাস চুলের ড্রাই ভাব কমায়।
উপকরণ
আদা বাটা ৫ চামচ, টক দই।
পদ্ধতি
দু’টি উপকরণ ভালোভাবে মিশিয়ে চুলে সম্পূর্ণ মেখে নিন। তারপর ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে নিন গরম জল দিয়ে আগে। তারপর নর্মাল জল দিন। এটাও সপ্তাহে দু’দিন করতে পারেন।
৩. চুল পড়া কমায়
সাধারণ সমস্যা চুল পড়া। এর থেকে আদার রস সুন্দরভাবে মুক্তি দেয়।
➡ চুল পড়া থেকে মুক্তি পান আদার তেলে
উপকরণ
আদার রস পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি
আদার রস তুলো দিয়ে স্ক্যাল্পে লাগিয়ে রাখুন মিনিট ১৫ মতো। তারপর ধুয়ে ফেলুন। রোজ রাতে করুন। ২ সপ্তাহেই উপকার পাবেন।
৪. আগা ফাটা বন্ধ করে
চুলের আগা ফাটাও একটা সাধারণ সমস্যা। অতিরিক্ত গরমে আর দূষণে আমাদের চুলের আগা ফেটে যায়। আদার ব্যবহার এখানেও কামাল দেখায়।
উপকরণ
আদার রস পরিমাণ মতো।
পদ্ধতি
এই আদার রস আপনি লাগিয়ে নিন গোটা চুলে। তারপর ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটাও সপ্তাহে দু থেকে তিনদিন করুন।
৫. খুশকি কমাতে সাহায্য করে
খুশকি নিয়ে অনেক আর্টিকেলই তো পড়েছেন আমাদেরই সাইটে। আজ জেনে নিন আদা কীভাবে খুশকি দূর করতে পারে।
উপকরণ
৪ চামচ আদার রস, ২ চামচ পাতিলেবুর রস।
পদ্ধতি
এই দুটো উপকরণ মিশিয়ে চুলে থুপে থুপে লাগান তুলো দিয়ে। রাখুন ৩০ মিনিট মতো। তারপর মাইল্ড শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
মন্তব্য করুন