গঙ্গার ধারে এই দিকটায় আলো একটু কম। অনেক দিন পরই আসা গেল এইদিকে। অনেক দিন পরই আবার এইভাবে সূর্যাস্ত দেখা হল তন্বীর। ক্যালাইডোস্কোপের মতো আকাশটার দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রংটা কেমন ঝাপসা হয়ে আসে। অর্ঘ্য খানিক গেছে কোথাও, আশেপাশেই। স্মৃতিগুলো তাই বেয়ে আসার অনুমতি পেল এতক্ষণে। অর্ঘ্য কেন জানি না মাঝে মাঝেই চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে তন্বীর। কিছু খোঁজার জন্য তাকায়, না খুঁজে হারাবার জন্য, ওই জানে। আজও খুব একটা যে ব্যতিক্রম হবে এমন আশা ছিল না তন্বীর।
কেমন যেন মনে হয় আজকাল তন্বীর। মনে হওয়াটাকে অপরাধবোধ বলবে কিনা, ঠিক বুঝতে পারে না। অর্ঘ্যর কাঁধে মাথা রেখেও আজকে মনে পড়ছে ওর কথা। খুব মনে পড়ছে। তাও তো দেখতে দেখতে তিন-সাড়ে তিন বছর হয়েই গেল। ঘটনার পর ঘটনা, স্মৃতির ওপর স্মৃতি চাপিয়ে চাপিয়ে একটা ইমারত তো দাঁড় করানো গিয়েছিল। কিন্তু সময় খুব একটা ভালো সিমেন্টের কাজ করেনি। তাই ভিত থেকে জল উঠছে অনর্গল।
হ্যাঁ, নতুন এই যে বাড়িটা তৈরি হচ্ছে তন্বীদের, তার ভিতের একটা জায়গা থেকে জল উঠছে খুব। দু’দিন আগেই তন্বীর বাবা-মা এসে দেখে গিয়েছিলেন কী সমস্যা হচ্ছে। খানিক কথা কাটাকাটি, ঝামেলা এইসবও হয়েছিল কন্সট্রাক্টারের সঙ্গে। তন্বীর খুব আসার ইচ্ছে ছিল, আসতে পারেনি। তাই আজ একবার সময় করে দেখতে এল জায়গাটা। সঙ্গে অর্ঘ্যও এল। সাদার্ন অ্যাভেনিউয়ের আচমকা নেমে আসা সন্ধ্যে আর গড়িয়াহাটের কিলবিল করা আলোগুলো থেকে খানিক দূরে একটা জায়গা খুঁজছিল তন্বীরা।
বেলুড়ের এই জায়গাটা পছন্দ হয়েছিল সবারই। তন্বী অবশ্য বেলুড়ের গঙ্গার ঘাট আবিষ্কার করেছিল সেই তিন বছর আগেই, সুদীপ্তর হাত ধরে। আবিষ্কারই বটে। দক্ষিণেশ্বরে পুজো দিতে গিয়ে ফাঁকতালে মাথায় গঙ্গাজল ছিটোনোর জন্য ঘাটে যাওয়া ছিল না কিনা! হাত দিয়ে চোখ বন্ধ করে সুদীপ্ত আস্তে আস্তে নামিয়ে আনছে একদম শেষ সিঁড়িতে। চোখ থেকে হাত যখন সরায়, সামনে তখন অথৈ জল আর সিঁদুররঙা আকাশ। আলতো করে কপালে চুমু খায় সুদীপ্ত। দিনের শেষ আলোয় সুদীপ্তর গায়ের গন্ধ মাখতে থাকে তন্বী। পায়ের নীচে জল, তলিয়ে যাওয়ার মানে বোঝাচ্ছে।
সন্ধ্যে হয়ে গেছে অনেকক্ষণ। খুবই অন্ধকার হয়ে গেছে জায়গাটা। আর থাকা ঠিক হবে না ভেবে দুজনেই ঘাটের থেকে রওনা দিল। অর্ঘ্য বরাবরই প্রোটেক্টিভ, সচেতন। তাই আর বসতে দিল না। হাঁটতে হাঁটতে বাড়ির কাছে এসে দেখল তখনও খানিক কাজ চলছে। অর্ঘ্য ওর ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া চোখ দিয়ে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে থাকল আর কোথাও থেকে জল উঠছে কিনা! খানিক পর এসে তন্বীকে বলল, না রে, এবার একদম পারফেক্ট প্লাস্টার হয়েছে। আর কোনো লিকেজ নেই। বোধহয় জল আর উঠবে না।
তন্বী অর্ঘ্যর হাতটা দু’হাত দিয়ে শক্ত করে ধরে বলল, জানি তো, জল আর উঠবে না। কিন্তু তাও কেন তন্বীর বারবারই মনে হতে থাকে জায়গাটা যেন খানিক ভিজে ভিজে!
ভ্যালেন্টাইন’স ডে স্পেশাল ১৫ টি রোম্যান্টিক হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ
মন্তব্য করুন