সামনেই কালী পুজো। কলকাতা সহ গোটা রাজ্যেই ধুমধাম করে সেদিন কালী পুজো অনুষ্ঠিত হবে। আপনিও হয়তো ঠাকুর দেখতে বেরবেন। কালী পুজো মানেই আমাদের কাছে আলোর পুজো। কিন্তু জানেন কি পশ্চিমবঙ্গে কালী পুজোর ইতিহাস বহু প্রাচীন। প্রাচীনকাল থেকেই বাংলার বেশীরভাগ মানুষই বিশ্বাস করতেন শাক্ত ধর্ম মতে। বড় বড় জমিদার থেকে শুরু করে ডাকাতরা—দেবীর কৃপা ও আশীর্বাদ পাবার জন্য সবাই ঘটা করে আয়োজন করতেন কালী পুজোর। এখনও বাংলায় সর্বাধিক জনপ্রিয় ও প্রচলিত পুজো হল কালী পুজো। আর গত কয়েক বছরে পাড়ার বিভিন্ন ক্লাবগুলোতে কালী পুজোর ধুম কি পরিমাণে বেড়েছে সে তো আপনি জানেনই।
আমরা বাঙালীরা বিশ্বাস করি যে কালী ঠাকুর কখনও তাঁর ভক্তদের খালি হাতে ফেরান না। আর তাই বোধহয় সারা রাজ্য জুড়েই অসংখ্য কালী মন্দির ছড়িয়ে রয়েছে, আর তাদের ঘিরে রয়েছে নানা মিথ, পুরাকাহিনী ও লোকবিশ্বাস। আজ জেনে নিন জাগ্রত তিনটি কালী মন্দিরের কথা—যেখানে লোকে বিশ্বাস করে আপনি যদি দেবীর আশীর্বাদ চাইতে যান, তাহলে দেবী আপনাকে খালি হাতে ফেরাবেন না। সবসময়ই আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করবেন।
কালীঘাট
কালীঘাটের কালী মন্দিরটি বোধহয় পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম প্রাচীন কালী মন্দিরের মধ্যে একটি। মন্দিরটিকে এখন যে অবস্থায় দেখছেন, সেটির বয়স মাত্র দু’শ বছর হলেও কালীঘাটের মন্দিরের ইতিহাস এর থেকেও বহু প্রাচীন। মনসামঙ্গলেও এর নাম পাওয়া যায়। বুঝতেই পারছেন কালীঘাটের প্রাচীনত্ব ও মাহাত্ম্যের কথা। সেই ষোড়শ-সপ্তদশ শতক থেকেই বাংলার মানুষ দূর-দূরান্ত থেকে আসতেন কালীঘাটে দেবীর আশীর্বাদ চাইতে। দেবী অবশ্য আশীর্বাদ দিতেনও। কালীঘাট অঞ্চলে যান, শুনতে পাবেন মন্দিরকে ঘিরে হরেক গল্পকথা।
রাজা, জমিদার থেকে সাধারণ মানুষ–দেবী নাকি কাউকেই ফেরাতেন না। তাই আশীর্বাদ যদি পেতে চান, চান যদি আপনার মাথায় দেবীর কৃপা বর্ষিত হোক, তাহলে কালীঘাটে গিয়ে মা কালীর পুজো দিন। দেবীর মাহাত্ম্য এখনও সমানভাবে প্রচলিত। লোকে বলে যেকোনো পাপ নাকি কালীঘাটে কালী মায়ের আশীর্বাদে খণ্ডন হয়ে যায়। কলিযুগে তো আমরা সবাইই কমবেশি পাপী। গঙ্গা যা দূষিত হয়ে গেছে, গঙ্গাস্নানে সে পাপ তাই আর দূর হয় না। ভরসা তাই কালীঘাট। দেবীর কাছে আশীর্বাদ চান, আপনার জীবনের সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন উনি।
তারাপীঠ
তারাপীঠে দেবীর জাগ্রত হবার কাহিনী তো বহুল প্রচলিত। বহু দূর থেকে মানুষজন এখানে দেবীর চরণে পুজো দিয়ে মানত করতে আসেন। হিন্দুদের পবিত্র ৫১ পীঠের মধ্যে তারাপীঠ অন্যতম। সতীর চোখের মণি এখানে পড়েছিল। দেবী এখানে মা তারা রূপে পূজিত হন। শোনা যায়, আপনি আপনার জীবনের যেকোনো সমস্যা নিয়ে তারাপীঠে মা তারার কাছে আসুন, ফল পাবেনই। স্বামী অন্য মেয়ের প্রতি আসক্ত? আপনার কথা শোনেন না? বাড়িতে নিত্য অশান্তি, ঝামেলা লেগেই আছে? শাশুড়িকে কিছুতেই ম্যানেজ করতে পারছেন না? ছেলে-মেয়ে আপনার কথা শুনছে না?
ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা থেকে বরকে ম্যানেজ—যেকোনো সমস্যা নিয়ে চলে আসুন মায়ের কাছে। মন দিয়ে প্রার্থনা করুন। ধ্যান করুন। ভক্তিভরে মায়ের পুজো দিন। ফল পাবেনই। আর কে বলে মা কালীর আপনার মতো তুচ্ছ মানুষের কথা শোনার সময় নেই? জগতের মা তিনি। তিনি আপনার কথা শুনবেন না তো আর কে শুনবে? তাই নিশ্চিন্তে তারাপীঠে যান। মনের আশ মিটিয়ে প্রার্থনা করুন। কথা দিচ্ছি, খালি হাতে ফিরবেন না।
দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির
শুধু কলকাতা কেন, গোটা পশ্চিমবঙ্গেরই কালী ভক্তদের অন্যতম পছন্দের তীর্থস্থান এটি। স্বয়ং শ্রীরামকৃষ্ণ এখানে মা কালীর পুজো করতেন। মা কালী নাকি তাঁকে দেখাও দিয়েছিলেন! তাহলে বুঝতেই পারছেন দক্ষিণেশ্বরের মাহাত্ম্য? তবে আমার আপনার মতো পাপী-তাপীদের মা দর্শন দেবেন না। সে আশা দুঃস্বপ্নেও করবেন না। আমরা সাধারণ মানুষ, সাধারণ প্রার্থনা নিয়ে মায়ের কাছে যান, পুজো দিন। মা পূর্ণ করে দেবেন আপনার সব প্রার্থনা। আপনার অভাব অভিযোগ—সব মায়ের পায়ে জানান। বলছি না, মা আছেনই। খালি হাতে ও খালি মনে—দু’টোর কোনোটা নিয়েই আপনাকে ফিরতে হবে না।
তাহলে আর মনের দুঃখ কীসের? সব কষ্ট ঝেড়ে একবার শুধু মা কালীর পায়ে আশ্রয় নিয়েই দেখুন। ভক্তিভরে তাঁকে প্রণাম করুন। মা আপনাকে ফেরাবেন না।
মন্তব্য করুন