পুরুষরা নানা ভাবে ধরা দেয় একজন নারীর জীবনে। কখনো বাবা, ভাই বা সন্তান আবার কখনো স্বামী বা বন্ধুরূপে। কিন্তু একটা সময় পর সব মেয়ের মনেইএকটা প্রশ্ন ঘুরপাক খেয়ে আসে তা হলো– সব পুরুষই কি একরকম?
স্বভাবতই এই প্রশ্নটির উত্তর খুঁজতে মনস্তত্ত্ব বিদরা হন্যে হয়ে বেড়িয়েছেন এবং বহু সাহিত্যিক নিজেদের লেখার কলম অব্দি ভেঙেছেন। আর আসল উত্তর তাদের হাতছানি দিয়ে অধরাই থেকে গেছে এটা বলাই বাহুল্য। তো চলুন আজ আমরা চেষ্টা করবো এর উত্তর খুঁজে পেতে।
সব পুরুষই সুযোগ-সন্ধানী:
- আধুনিক সমাজ হোক কি ঐতিহাসিক, পুরুষদের সবসময় শোষক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে এসেছে। প্রাচীনকালে অত্যাচারী রাজা, জমিদার, সেনাপতি রূপেই পুরুষদের চরিত্রকে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
- আধুনিক সমাজেও এটা ঘরে ও বাইরে সমান ভাবে কোন না কোনো সম্পর্কে প্রতিফলিত হয়। কিন্তু এটি মোটেই সত্যি নয়।
- সব পুরুষ সুযোগ সন্ধানী হয় না। বরং তারা সুযোগ নেওয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। ঈশ্বরচন্দ্রবিদ্যাসাগর এর বিধবাবিবাহ আইন প্রবর্তন, রামমোহনের সতীদাহ প্রথা নিবারণ বা পশ্চিম ভারতের জ্যোতিবাফুলের নারী শিক্ষা প্রসারের কাজ এই কথার সাক্ষ্য দেয়।
- অতএব, এর থেকে বোঝা যায় যে নারী উন্নতির পেছনে পুরুষদের কিন্তু একটা বড় ভূমিকা আছে।
পুরুষরা আবেগ নিয়ে খেলে:
- একথা পূর্ণসত্য কখনই নয়। সেই সমস্ত প্লেবয় পুরুষরা এই শ্রেণী ভুক্ত যাদের নিজেদের উপর কোনো বিশ্বাস নেই।
- সেই বর্গের পুরুষকুল যারা মেয়েদের মন শুধুমাত্র আবেগের উপর ভর দিয়ে জিততে চায় তারা নারী তো বটেই নিজেদের পরিবারের ইমোশন এরও সঠিকভাবে মূল্যদিতে পারেনা।
- আজকের সমাজেও দশরথ মাঝির মতো নিরক্ষর ব্যক্তি আছেন যিনি কেবল নিজের স্ত্রীর ইমোশন নয় সমস্ত নারি জাতির ফিলিংস বুঝেছেন এবং তাদের স্বার্থে এক যুগান্তকারী নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।
পুরুষরা কেবল দৈহিক সৌন্দর্যে আগ্রহী হয় :
- এটি অবশ্যই প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা। কারণ আজকের নেটের যুগে এমন লংডিস্টেন্স রিলেশন দেখা গেছে যেখানে কেউ পরস্পরকে দেখেননি
- ইতিহাসও এটার প্রমান দেয়। বিখ্যাত প্রেমিক প্রেমিকা লায়লা মজনুর অমর প্রেমকাহিনী আমরা সবাই জানি। কিন্তু মজনু যে লায়লার জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেন তিনি মোটেই আহামরি কোন সুন্দরী ছিলেন না।
- আবার হীর রানঝার ক্ষেত্রেও একই কথা খাটে। প্রকৃত পুরুষ মনের সৌন্দর্য ও চারিত্রিক গুণাবলীর রকম দেখে।
পুরুষেরা শুধুমাত্র শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে উৎসাহী:
- যেকোনো সম্পর্কে প্রথমে মনের যোগাযোগ তৈরি হয়, তারপর আসে যৌনতা এবং সেটা অবশ্যই আপেক্ষিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে।
- স্বামী ও স্ত্রী এর পবিত্র সম্পর্ক এই পর্যায়ের। ভক্তি শাস্ত্রে রাধা-কৃষ্ণের প্রেমকে বন্ধুত্বের পবিত্র মর্যাদা দান করা হয়েছে এবং সেটি নিষ্কাম বলে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। তাতে রয়েছে বন্ধুত্বের রস।
- সেই বন্ধুত্বের ছাপ আজও দেখা যায় কলেজ ইউনিভার্সিটি গুলোতে যেখানে ছেলেরা কোনো বিকৃত কাম মনোভাব ছাড়া একটি মেয়েকে সুরক্ষিত ভাবে বাড়িতে ছেড়ে আসে বা কখনো তাকে পড়াশোনায় হেল্প করে।
সব পুরুষ বিশ্বাসঘাতক:
- এই কথাটা কিন্তু পুরুষ সমাজ মহিলাদের জন্যেও ব্যবহার করতে পারে।হয়তো দাম্পত্য কলহের জন্য পুরুষ অনেক সময় অশান্তি ও ঝগড়া ঝাটি থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন। কিন্তু সেটার অর্থ কখনোই পরকীয়ার আনন্দে গা ভাসিয়ে দেওয়া নয়।
- অনেক সময় কিছু মহিলারা অতিরিক্ত সতর্কতাবশত অতিরিক্ত পজেসিভ হয়ে পড়েন। সেটাতে পুরুষরা অস্বস্তিতে পড়লে তারা সেটা নিয়ে ভুলও বোঝেন। ফলে ট্রাস্ট ইস্যু তৈরি হয়।
তাই এক পাক্ষিক বিচার করা ঠিক নয়। কিছু মানুষের জন্য একটি প্রজাতিকে দোষারোপ করা যুক্তি যুক্ত কাজ নয়। সবপুরুষ একরকম এটির মূলে রয়েছে একধরনের নিরাপত্তা হীনতা। সেটা থেকে নিজেদের মুক্ত করে যৌথ উদ্যোগে নিজেদের বোঝার চেষ্টা করতে হবে। নারীও পুরুষতো একে অপরের পরিপূরক তাই না!
মন্তব্য করুন