ধরুন আপনি কোনো রেস্টুর্যান্টে গেলেন। ওয়েটার দিব্যি আপনার সাথে ফটাফট ইংরাজিতে কথা বলতে লাগলো। কিন্তু থতমত খেয়ে আপনি কি করবেন বুঝে উঠতে না পেরে ইংরাজিতেই খানিক অর্ডার দেওয়ার চেষ্টা করে আটকে গেলেন। ব্যাস, ওয়েটার আর সাথে থাকা মানুষের সামনে আপনার লজ্জার একশেষ! কিংবা রাস্তায় কেউ আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করলো ইংরাজিতে, আপনার ভাঙা ইংরাজি শুনে সে মুচকি হেসে চলে গেল! আর ইন্টারভিউ দিতে গিয়ে নাজেহাল অবস্থার কথা আপনি নিশ্চয়ই আর মনে করার চেষ্টা করবেন না!
আমাকে বা আপনাকে, সবাইকেই কিন্তু কম-বেশী এই পরিস্থিতির সামনে পড়তে হয়েছে বেশ কয়েকবার। আর তাতেই নিশ্চয়ই আপনার ইংরাজি বলাতে তৈরি হয়েছে আতঙ্ক? যে যাই বলুক, ইংরাজিতে ফটাফট কথা বলতে পারা কিন্তু এখনকার দিনে মাস্ট। আর যুগের সাথে তাল মেলাতে হলে কিন্তু ‘বাবা ইংরাজি’র দয়া ছাড়া আপনার গতি নেই!
কিন্তু ইংরাজি বলার কথা ভাবলেই যদি আপনি ঘামতে শুরু করেন, আর টেনশনে পেটের ভেতরটা গুড়গুড় করতে শুরু করে , তাহলে এবার আতঙ্কের দিন শেষ। ইংরাজির থেকে আপনার ভয় তাড়াতে এবার গড়গড় করে ইংরাজিতে কথা বলার জন্য সহজ ১০টি টিপস নিয়ে হাজির আমরা। দেখুন।
১. বেশী ভাববেন না
ইংরাজি বলার কথা ভাবলেই বা সেরকম কোনো পরিস্থিতির কথা মনে হলেই কি আপনার প্যালপিটেশন হয়? আসলে ইংরাজি নিয়ে তাহলে বোধহয় আপনি একটু বেশীই ভেবে ফেলছেন। দেখুন, বাংলাতে যখন আপনি কথা বলেন, তখন তো না ভেবেই আপনি দিব্যি বাক্যগুলো পরপর নিখুঁতভাবে বলে ফেলেন। ঠিক না ভুল, সে নিয়ে আপনাকে বেশী মাথাও ঘামাতে হয় না।
মানছি ইংরাজি আপনার আমার মাতৃভাষা নয়, ছোট থেকেই ওতে আমরা সেভাবে স্বচ্ছন্দ নয়। কিন্তু ভেবে দেখুন, ইংরাজিতে কথা বলার সময়ও আপনি যদি না ভেবে কথা বলতে চেষ্টা করেন, তাহলে ফ্লুয়েন্সিটা খানিক আসে। ওতে ভেবে কথা বলার সময়টা খানিক বাঁচে, আর দিব্যি গড়গড়িয়ে বলাও যায়।
২. গ্রামার ভাববেন না
ছোট থেকেই আপনি নিশ্চয়ই মন দিয়ে গ্রামার পড়েছেন? তাই ইংরাজিতে কথা বলতে গেলেই নিশ্চয়ই গ্রামার ঠিক আছে কিনা, ঠিকঠাক টেনস বলছেন কিনা, সেদিকে আপনার বেশী খেয়াল রাখতে যান? আর খেয়াল রাখতে গিয়েই বাকিটা গুবলেট হয়ে যায়?
ইংরাজিতে যারা গড়গড় করে কথা বলেন, তাঁদেরটা আপনি যদি খেয়াল করেন, দেখবেন তাঁরা কিন্তু মোটেই অতো গ্রামার আর টেনসের দিকে নজর রাখেন না। ফ্লুয়েন্টলি বলে ফেলেন। তাই আপনিও ফ্লুয়েন্টলি কথা বলুন, দেখবেন, এখানে কিন্তু ফ্লুয়েন্সিটাই আসল, কে কত দারুণ গ্রামার জানে, সেটা কিন্তু নয়। তবে একদম আবার ভুলভাল বলে বসবেন না। একটু নজর কিন্তু আপনাকে রাখতেই হবে।
৩. রোজ খবরের কাগজ পড়ুন
ইংরাজিতে যদি দারুণ কথা বলতে চান, তাহলে এই অভ্যাসটি এবার আপনাকে করে ফেলতেই হবে। সকালে উঠে রোজ কাগজ পড়লে আপনি বাক্য, টেনস কেমন কি হয়, এমনিতেই বুঝে যাবেন। আর এর ফলে আপনার ভোক্যাবুলারিও কিন্তু বাড়বে।
অনেকসময় দেখবেন বলতে গিয়েও বুঝতে পারেন না যে কোন শব্দটা ঠিক বলবেন, ভোক্যাবুলারি বাড়ার ফলে ওই সমস্যা কিন্তু কমবে। আর জোরে জোরে পড়ার চেষ্টা করুন। দেখবেন যদি আপনার উচ্চারণের সমস্যা থাকে, তাহলে ওই জোরে জোরে পড়ার ফলে ওটা কিছুদিন পর আপনিই দূর হয়ে যাবে।
৪. টিভিতে খবর শুনুন
শুধু পড়লে তো হবে না। একটা ভাষা ঠিকভাবে বলাটা আয়ত্ত করতে গেলে শোনাটাও কিন্তু একটা পার্ট। মন দিয়ে তাই টিভিতে ইংরাজি নিউজ শুনুন। শুনুন ওখানে কীভাবে কী উচ্চারণ করা হচ্ছে। ওখানে ইংরাজিটা কিন্তু খুবই ফর্মাল কায়দায় বলা হয়।
আর আপনাকেও তো ফর্মালি ইন্টারভিউ দিতেই হয়। তাই নিউজ শুনলে আপনি ওই ফর্মাল ইংরাজি বলাটা খানিক রপ্ত করে ফেলতেই পারবেন।
৫. আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা অভ্যেস করুন
ইংরাজিতে কথা বলাটাকে নর্মালভাবে নিন। এটা তো আলাদা কোনো ব্যাপার নয়। ঠিক যেমন ভাবে বাংলায় কথা বলেন, তেমনই সাধারণ একটা ব্যাপার। আর বাংলায় কথা বলার সময় একটা বডি ল্যাঙ্গোয়েজ তো আপনার খানিক নিজের আয়ত্তেই থাকে।
আর কথা বলার সময় ওই বডি ল্যাঙ্গোয়েজ কিন্তু খুব দরকারি। তাই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ইংরাজিতে কথা বলুন জোরে জোরে, নিজে নিজেই। লজ্জা যদি করে, তাহলে দরজা বন্ধ করে করবেন। ফ্লুয়েন্টলি ইংরাজিতে কথা বলার সাথে সাথে ওই স্বাভাবিক বডি ল্যাঙ্গোয়েজটাকেও যদি একবার আয়ত্ত করে ফেলতে পারেন, দেখবেন আর কোনো সমস্যাই থাকবে না।
৬. ইংরাজিতে কথা বলুন
শুধু একা একা ইংরাজিতে কথা বলা প্র্যাকটিস করলেই তো হবে না। অন্যদের সাথেও তো আপনাকে ফ্লুয়েন্টলি কমিউনিকেট করতে হবে। তাই এবার থেকে বাড়িতে বা রাস্তায়, কাজের জায়গায়, যেখানে সম্ভব, ইংরাজিতেই কথা বলার অভ্যেস করুন। দেখবেন ঠিকভাবে কথা বলতে পারলে আপনার আত্মবিশ্বাসই বেড়ে যাবে!
৭. ইংরাজি সিনেমা দেখুন
ইংরাজিতে কথা বলা কিন্তু শুধু ওই নিউজ চ্যানেল শুনলেই হবে না। ওতে কেবল এক পক্ষের কথা বলা থাকে। আপনি বিভিন্ন ডিবেট শুনুন, তাছাড়া ইংরাজি সিনেমা দেখারও অভ্যেস করতে পারেন।
এতে কিন্তু দু তরফেরই কথা বলা থাকে। ফলে কথা কী করে বলতে হয়, কথা শুনে উত্তর কী করে দিতে হয়, বা বলা ভালো কমিউনিকেট কী করে করতে হয়, তার একটা স্পষ্ট ধারণা তৈরি হয়ে যায়।
৮. ম্যানার্স জানুন
গুড মর্নিং, গুড ইভিনিং ইত্যাদি ফর্মাল ম্যানার্স আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন। ইংরাজিতে কথা বলার সাথে এগুলো ঠিকভাবে রপ্ত করাও কিন্তু খুব দরকার। কথার টোন প্র্যাকটিস করুন।
৯. নিজে নিজেই মনে মনে ইংরাজিতে ভাবুন
ট্রান্সলেট করার অভ্যেস ছাড়ুন। ইংরাজিতে কী বলবেন, সেটা যদি প্রথমে বাংলায় ভেবে পরে ইংরাজিতে ট্রান্সলেট করেন, তাহলে তার থেকে খারাপ কিন্তু আর কিছুই হয় না। সরাসরি ইংরাজিতে ভাবুন। আর এতে যদি খানিক অসুবিধা হয়, তাহলে এমনিই ইংরাজিতে ভাবুন মনে মনে।
কোনো একটা এমনি টপিক বেছে নিন। সেটা কিন্তু যা খুশী হতে পারে। আর সেটা নিয়ে ইংরাজিতে ভাবুন যা ভাবার। দেখবেন, ভাবতে ভাবতে ইজিলি বলতেও পারছেন।
১০. নিজের ওপর কনফিডেন্স রাখুন
আর হ্যাঁ, নিজের ওপর কনফিডেন্স রাখা কিন্তু খুব দরকার। কনফিডেন্স থাকলে দেখবেন ভুল থেকেও শিক্ষা নিয়ে আবার নতুন উৎসাহে লেগে পড়ছেন। আর তাতে কাজটা আরও স্মুদ হবে, আরও বেশী তাড়াতাড়ি শিখবেন।
তাহলে আর চিন্তা কীসের? এবার সব জায়গাতেই কিন্তু আপনি গড়গড়িয়ে ইংরাজি বলতে পারবেন, কোনো টেনশন ছাড়াই! শুধু কনফিডেন্সটা রাখুন, ব্যাস। আগাম অল দ্য বেস্ট জানিয়ে রাখলুম আমরা ‘দাশবাসে’র তরফে!
মন্তব্য করুন