আমাদের বাঙালিদের মধ্যে একটা কথার প্রচলন আছে, সেটা হল, মাছের মধ্যে রুই আর শাকের মধ্যে পুঁই। এই শাক আমরা নানা ভাবে রান্না করতে পারি। আমাদের অনেকে যেমন এই শাক নিরামিষ খান, তেমনই অনেকে আবার ইলিশ-পুঁই বা চিংড়ি-পুঁই খেতে বেশি ভালবাসি। অনেকে পুঁই শাককে আমিষ শাক বলেন, কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই শাক রান্না করা হয় মাছ দিয়ে। নিরামিষ প্রায় হয়ই না। আর পুঁই শাকের সঙ্গে মাছের তেল, জাস্ট ফাটাফাটি। না, আর আপনাদের লোভ দেখাব না। বরং আজ আপনাদের আমি জানাবো এই পুঁই শাক খেলে ঠিক কী কী উপকার পাওয়া যায়। আসুন সেটাই আমরা দেখে নিই।
কেন পুঁই শাক উপকারী
পুঁই শাক আমাদের চারপাশে প্রচুর হয়। তা বলে কিন্তু একে হেলাফেলা করার কিছু নেই। এতে আছে প্রচুর ভিটামিন বি, সি ও এ। এর সঙ্গেই আছে এতে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম আর আয়রণ। আমাদের শরীরের বৃদ্ধির জন্য যেমন ক্যালসিয়াম বা আয়রণ দরকার, তেমনই ভিটামিন থাকার জন্য আমরা অনেক রোগ থেকে মুক্ত হতে পারি। এছাড়া ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, জিঙ্ক এই সব খনিজ পদার্থ আছে। তাই পুঁই শাক চোখ বুজে খেয়ে নিন।
পুঁই শাকের উপকারিতা
কেন পুঁই শাক উপকারী সেটা তো জানলেন। এবার জানুন পুঁই শাক খেলে আপনি ঠিক কোন কোন দিক থেকে উপকার পেটে পারেন।
১. ডায়াবেটিস কমায়
পুঁই শাকে এক ধরণের অ্যান্টি অক্সিডেন্ট আছে, যার নাম লিপোইক অ্যাসিড। দেখা গেছে এই অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রক্তে শর্করার মাত্রা কমায় আর ইনসুলিনের ভারসাম্য বজায় রাখে। আরও প্রমাণিত হয়েছে যে এটি ডায়াবেটিসের ক্ষেত্রে পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি আর অটোনমিক নিউরোপ্যাথি কমায়। অর্থাৎ বলাই যায় যে এই শাক ডায়াবেটিসের দিক থেকে আপনাকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পারে।
২. ক্যানসার প্রতিরোধ করে
আর সব সবুজ সবজির মতো পুঁই শাকে রয়েছে ক্লোরোফিল। গবেষণায় দেখে গিয়েছে, এই ক্লোরোফিল কিন্তু কার্সিনোজেনিক প্রভাব আটকাতে খুব ভালো কাজ দেয়। আর আমরা সবাই জানি যে কার্সিনোজেনিকের প্রভাবেই ক্যানসার হয়। আর এই কার্সিনোজেনিক প্রভাব হয় খুব বেশি মাত্রায় কিছু গ্রিল করলে। আর এতে থাকা ফাইবার পাকস্থলী আর কোলন ক্যানসার প্রতিরোধ করে। তবে পুঁই শাক কিন্তু ক্যানসার দূর করতে বেশ সক্ষম।
৩. অ্যাজমা আটকায়
একটি গবেষণা করা হয়েছিল ৬ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৪৩৩ জনের মধ্যে যাদের অ্যাজমা আছে। আর তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল ৫৩০ জন মতো শিশুদের যাদের অ্যাজমা নেই। দেখা গেছে, যাদের অ্যাজমা নেই তারা কোনও না কোনও ভাবে পুঁই শাক বেশি খান। আসলে পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন আর এই বিটা ক্যারোটিনই অ্যাজমা হতে দেয় না সহজে।
৪. ব্লাড প্রেসার কমায়
পুঁই শাক কিন্তু পটাসিয়ামের একটি ভালো উৎস। আমরা জানি পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কম করায়। পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা ঠিক রাখে। তাই পুঁই শাক কম খাওয়া মানে শরীরে পটাশিয়াম কম আসা আর তার ফলে ব্লাড প্রেসারকে সঙ্গী করা।
৫. হাড় শক্ত করে
আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করা মানে হাড়ের মজবুতি কমে যাওয়া। পুঁই শাক ভিটামিন কে’র একটি খুব ভালো উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি, ইউরিনে ক্যালসিয়ামের মাত্রাও কম করে। হাড়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য তাই পুঁই শাক খান।
৬. স্বাস্থ্যকর চুল আর ত্বকের জন্য
পুঁই শাকে আছে ভিটামিন এ, যা আমাদের ত্বকের আর স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। ময়েশ্চার ধরে রাখে। অতিরিক্ত তেল বা সিবাম নিঃসরণ হলে ব্রণ হয়। পুঁই শাক যেহেতু এই নিঃসরণ কমায় তাই ব্রণ হয় না। ত্বকের কোষ কোলাজিনের জন্য যে ভিটামিন সি এতো দরকারি, সেই ভিটামিন সি’র উৎস এই পুঁই শাক।
৭. হজমের ক্ষমতা বাড়ায়
আমাদের বাঙালিদের মধ্যে গ্যাস বা অম্বলের মতো সমস্যা তো লেগেই থাকে। কিন্তু পুঁই শাক এই সমস্যা থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এটি হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে আর যেহেতু পুঁই শাকে ফাইবার থাকে তাই কোষ্ঠকাঠিন্য হতে দেয় না। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দেয়। আর যেহেতু খাবার ভালো করে হজম হয় তাই বদহজমের সমস্যা হয় না।
৮. শিশুদের বৃদ্ধিতে
বাড়ন্ত বয়সে শিশুদের যদি নিয়মিত পুঁই শাক খাওয়ানো যায় তাহলে তাদের বৃদ্ধি ভালো হয়। শিশুরা তাদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন, মিনারেল, প্রোটিন সবই এই এক পুঁই শাক থেকে পেতে পারে। তাই বাচ্চাদের ছোট থেকেই পুঁই শাক খাওয়ানো অভ্যেস করাতে হবে।
৯. চোখ ভালো রাখে
চোখ আমাদের শরীরের অত্যন্ত সুক্ষ্ম একটি অঙ্গ। এর আলাদা করে যত্ন নেওয়া খুবই দরকার। পুঁই শাক কিন্তু চোখ ভালো রাখতেও বেশ কার্যকরী। পুঁই শাকে আছে বিটা ক্যারোটিন, লুটেইন আর এই সব উপাদান চোখের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে খুবই দরকারী। লুটেইন থাকে ম্যাকুলায় যেটি রেটিনার একটি অংশ আর এটি অতিরিক্ত আলোর প্রভাব থেকে চোখকে ভালো রাখে। মেক্যুলার ডিজেনারেশনের থেকেও চোখকে রক্ষা করে।
১০. এনার্জি বাড়ায়
আজকের দিনে অনেক কাজ করতে হবে আর তার জন্য দরকার এনার্জি। পুঁই শাক কিন্তু ভালো ভাবে এনার্জি বাড়ায়। পুঁই শাকে থাকা ম্যাগনেসিয়াম এই এনার্জি বাড়াতে সাহায্য করে। পুঁই শাক ফোলেটের একটি ভালো উৎস যা খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। তাছাড়া পুঁই হল ন্যাচারাল অ্যালকালাইন যা সারাদিন আমাদের এনার্জেটিক রাখে।
তাই এখন থেকে বেশি করে পুঁই শাক খান। আর উপকার পাওয়ার পর আমাদের অবশ্যই জানাবেন। আমরা হাজির হব এই ধরণের আরও অনেক তথ্য নিয়ে।
মন্তব্য করুন