কনুই ও হাঁটুতে কালো দাগ স্বাভাবিক ব্যাপার। গৃহিণী হোক বা কর্মজীবি সবাই এই সমস্যার মুখোমুখি হয়ে থাকেন। শরীরের অন্যান্য অংশ যেমন হাত-পা, মুখ ইত্যাদির দিকে বেশি নজর দিলেও কনুই আর হাঁটুর ব্যাপারটা আমরা প্রায়ই ভুলে যাই বা গুরুত্ব দেই না।
সুন্দর সুশ্রী দেহ পেতে চাইলে প্রতিটা অংশের সমান যত্ন নেয়াটা জরুরি। কনুই আর হাঁটু কম দেখা যায় বলে এর যত্ন নেয়ার বিশেষ দরকার নেই – এটা কিন্তু ভাবা ভুল। ঘরোয়াভাবে যেমন মুখের ত্বক ঠিক রাখা সম্ভব, তেমনি মাত্র ১০ থেকে ১৫ মিনিটে কনুই আর হাঁটুর কালো দাগ দূর করা সম্ভব।
আজকের আর্টিকেল আমি জানাব কনুই ও হাঁটুতে কালো দাগ পড়ার কারণ। সাথে থাকছে কোন কোন প্রাকৃতিক উপাদানে ঐ দুটি জায়গার কালো দাগ দূর করা সম্ভব। আরো জানাব কোন উপাদানের কি উপকারিতা আছে।
কনুই ও হাঁটুতে কালো দাগ কেন পড়ে?
কনুই ও হাঁটুতে কালো দাগের পেছনে আমরাই দায়ী। আমরা আমাদের মুখ, হাত-পায়ের যত্ন নিয়ে যতটা সচেতন, কনুই আর হাঁটুর যত্নের ব্যাপারে ঠিক ততটাই উদাসীন। এই দুটি জায়গা বেশিরভাগ সময়ে পোশাক দ্বারা আবৃত থাকে বলেই হয়তো আমাদের উদাসীনতা কাজ করে। ঠিকমত যত্ন না নেওয়ার কারণে ময়লা জমে কালচে ছোপ পড়ে যায়।
অনেক সময় হাঁটুতে ভর দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়ালে, কনুইতে ভর দিয়ে বসে থাকলেও কালো দাগ পড়তে পারে। আবার শীতকালের শুষ্ক আবহাওয়ার কারণেও কনুই আর হাঁটুর চামড়া শুষ্ক আর নিষ্প্রাণ হয়ে যায়। সে কারণে জায়গাটা দেখতে কালচে দেখায় তখন।
জন্মগত কারণেও অনেকের কনুই আর হাঁটুর চামড়া রুক্ষ, শুষ্ক, আর কালো দেখায়। হরমোনগত সমস্যা থেকেও এই দুটো জায়গা খসখসে হতে পারে আর কালচে ছোপ পড়তে পারে।
ঘরোয়াভাবে কনুই ও হাঁটুর কালো দাগ দূর করার উপায় কি?
শসা, লেবুর রস, অ্যালোভেরা, বেকিং সোডা, ভিনেগার, টক দই ইত্যাদি উপাদান কনুই ও হাঁটুর কালো দাগ দূর করতে কার্যকরী ভূমিকা রাখে৷ প্রাকৃতিক উপাদান হওয়ার কারণে এগুলোর কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই বললেই চলে। তবে সঠিক ব্যবহার না করলে এগুলো থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু থেকে যায়।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার
পদ্ধতি
একটি বাটিতে ১ টেবিল চামচ অ্যাপল সাইডার ভিনেগারের সাথে ১ টেবিল চামচ পানি মিশিয়ে নিন। এবার এই মিশ্রণটি তুলার বলের সাহায্যে কনুই আর হাঁটুর কালো হওয়া জায়গায় লাগিয়ে নিন। ১০ মিনিট রেখে এরপর স্বাভাবিক পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটা একদিন পর পর ব্যবহার করতে হবে।
উপকারিতা
এই ভিনেগারে আছে অ্যাসিটিক অ্যাসিড, যা প্রাকৃতিক ব্লিচিং হিসেবে কাজ করে। অ্যাপল সাইডার ভিনেগার ত্বকের রং উজ্জ্বল করতে অনন্য অবদান রাখে। তাছাড়া এটি তৈলাক্ত ত্বকের জন্যও বেশ উপকারী।
মধু, বেসন, এবং হলুদ
পদ্ধতি
মধু, বেসন, এবং হলুদের মাস্ক তৈরি করার জন্য আধা চা চামচ হলুদ, মধু ১ চা চামচের চার ভাগের এক ভাগ, আর ১ টেবিল চামচ বেসন নিতে হবে। সবগুলো একসাথে মিশিয়ে মিহি পেস্ট তৈরি করে হাঁটু এবং কনুইতে লাগিয়ে নিন। ১০ থেকে ১৫ মিনিট লাগবে এটি শুকাতে। এরপর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং ময়েশ্চারাইজার লাগিয়ে নিন।
উপকারিতা
প্রাচীনকাল থেকেই হলুদের কদর বেশি, কারণ এটি ত্বক উজ্জ্বল ও পরিষ্কার করে। ত্বককে আর্দ্র রাখতে এবং লোমকূপ পরিষ্কার করতে মধু জাদুকরের মত কাজ করে।
বেকিং সোডা, টক দই, লেবুর রস
পদ্ধতি
বেকিং সোডা দিয়ে কয়েকভাবে কালো দাগ দূর করা যায়। ১ টেবিল চামচ বেকিং সোডার সাথে ১ টেবিল চামচ টক দই ভালোভাবে মিশিয়ে দাগের জায়গায় ২-৩ মিনিট আলতো করে মালিশ করুন। ১০ মিনিট পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
১ টেবিল চামচ বেকিং সোডার সাথে সামান্য কাঁচা দুধ মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন। এটি শুকানোর জন্য ৫ মিনিট লাগবে। ৫ মিনিট পরে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে দুই- তিনবার ব্যবহার করলে কালো দাগ নিমিষেই উধাও হয়ে যাবে। ধোয়ার পরে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
১ টেবিল চামচ বেকিং সোডার সাথে ১ টেবিল চামচ লেবুর রস মিশিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দাগের উপরে ম্যাসাজ করুন। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। এভাবে প্রতিদিন ম্যাসাজ করতে থাকুন।
উপকারিতা
বেকিং সোডা ত্বকের মৃত কোষ ঝেড়ে ফেলে ত্বককে করে উজ্জ্বল। পাশাপাশি রোদে পোড়া কালো দাগ দূর করতেও এর জুড়ি নেই। টক দই ত্বককে মসৃণ করে ও আর্দ্র রাখে। অ্যাপেল সাইডার ভিনেগারের মত টক দই তৈলাক্ত ত্বকের জন্য ভাল।
লেবুর রস, চিনি, অলিভ অয়েল
পদ্ধতি
শুধু লেবুর রস দিয়েও দাগ করা যায়। একটি লেবু কেটে এর অর্ধেকটা নিয়ে হাঁটু আর কনুইতে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ঘষুন। ১০ মিনিট পরে শুকিয়ে এলে কুসুম গরম পানিতে ধুয়ে ফেলুন।
আবার এখানে চিনি আর অলিভ অয়েলও লাগাতে পারেন। লেবুর রসটা যখন শুকিয়ে আসবে তখনই না ধুয়ে পরিমাণমত চিনি আর অলিভ অয়েলের মিশ্রণ দাগের উপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে ম্যসাজ করতে থাকুন। শুকিয়ে এলে পরে ভালমত ধুয়ে ময়েশ্চারাইজার লাগান।
উপকারিতা
ত্বকের মৃত কোষ তুলতে চিনির কোন জুড়ি নেই। লেবুর রসও ত্বকের জন্য আরেকটি চমৎকার উপাদান।
শসা এবং অ্যালোভেরা
পদ্ধতি
১ টেবিল চামচ থেঁতলানো শসার সাথে ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল মেশান। এরপর তুলার বলের সাহায্যে দাগের জায়গায় লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে এলে ধুয়ে ফেলুন৷ প্রতিদিন ব্যবহার করলে এক সপ্তাহের মধ্যে ভাল ফল পাবেন।
শুধু ১ টেবিল চামচ অ্যালোভেরা জেল দাগের জায়গায় ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখতে পারেন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
উপকারিতা
শসা-অ্যালোভেরার এই প্রাকৃতিক মিশ্রণ ত্বককে উজ্জল করে এবং ত্বকের আর্দ্রতা রক্ষা করে। অ্যালোভেরা একটি চমৎকার প্রদাহনাশক এবং এটি পিগমেন্টেশনও কমায়। শসা ত্বকের লোমকূপ সঙ্কুচিত করতে সাহায্য করে।
নারিকেল তেল
পদ্ধতি
নারিকেল তেল দিয়ে সবচাইতে ভাল হাঁটু ও কনুইয়ের কালো দাগ দূর করা সম্ভব। প্রতিদিন দাগের জায়গায় তেল ম্যাসাজ করুন। ভালো ফলাফলের জন্য তেলের সাথে সামান্য পানিও মেশাতে পারেন৷ নারিকেল তেলের বদলে চাইলে অলিভ অয়েল বা অন্য কোন তেলও ব্যবহার করতে পারেন৷ গোসলের আগে তেল মালিশ করলে সবচেয়ে ভাল হয়।
উপকারিতা
প্রতিদিন যদি নারিকেল তেল কালো জায়গার উপর ম্যাসাজ করেন, তাহলে কালো দাগের সাথে সাথে ত্বকের মরা কোষও পরিষ্কার হয়ে যাবে। অন্য কোন তেলের চাইতে নারিকেল তেল অনেক বেশি কার্যকরী।
সতর্কতা
ঘরোয়াভাবে কালো দাগ দূর করার সময় কিছু জিনিস মাথায় রাখতে হবে আপনাকে
- লেবুর রস লাগানোর আগে দেখবেন আপনার হাঁটু আর কনুইয়ের চামড়ায় কোন কাটা-ছেঁড়া আছে কিনা। কাটা চামড়ায় ভুলেও লেবুর রস লাগাবেন না। কাটা জায়গায় লেবুতে থাকা সাইট্রিক অ্যাসিডের কারণে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে।
- বেকিং সোডা কখনোই সরাসরি প্রয়োগ করবেন না। এর সাথে প্রয়োজনীয় উপাদান পরিমাণমত মেশাবেন। ব্যবহারের পরে ভালমত ধুয়ে ফেলবেন। ভুল প্রয়োগে চামড়া পুড়ে যেতে পারে।
- ময়েশ্চারাইজার কেনার আগে দেখে নিন সেটা আপনার শুষ্ক কনুই ও হাঁটুর সাথে ম্যাচ করছে কিনা। আবার যখন এটি ব্যবহার করবেন, তখন অনেকটা ক্রিম নিয়ে কালো জায়গায় এমনভাবে লাগাবেন যেন কালো অংশটা পুরোপুরি ঢেকে যায়। বেকিং সোডা ব্যবহারের পর অবশ্যই ময়েশ্চারাইজার লাগাতে ভুলবেন না যেন।
শেষ কথা
কনুই ও হাঁটুর মত আড়ালে আবডালে থাকা অঙ্গের উজ্জ্বলতা ও আর্দ্রতা রক্ষা করতে প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার করুন নিয়মিত। আর নিজের চোখেই দেখুন ম্যাজিক। কম করে হলেও সাতদিনের মধ্যে পার্থক্য দেখতে পারবেন।
আজকের লেখা নিয়ে আপনাদের মতামত, পারমর্শ, জিজ্ঞাসা লিখে পাঠান আমাদের কমেন্টবক্সে। যদি এই লেখা থেকে কোন পদ্ধতি ব্যবহার করে সুফল পান, তাহলে সেটাও জানাতে পারেন। ভাল লাগলে লেখাটিতে লাইক দিন, শেয়ার করুন। আপনাদের রেসপন্স আমাদের লিখতে উৎসাহ দেয়।
ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন, ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন