আপনাদের মধ্যে নিশ্চয় এমন অনেকেই রয়েছেন যাঁরা লাজুক প্রকৃতির এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামাজিক উদ্বেগের শিকার হন। আর এর কারণে জীবনের প্রতিযোগীতায় আপনি অনেকটাই পিছিয়ে পড়ছেন, হীনমন্যতায় ভুগছেন।
জানেন কি, আজকের জনপ্রিয় নায়ক হৃতিক রোশন ছোট থেকে অনেক বড় বয়স পর্যন্ত তোতলানোর সমস্যার কারণে হীনমন্যতায় ভুগেছেন, আর আজ তিনি সুপারস্টার।
নিজের প্রবল ইচ্ছাশক্তি এবং মানসিক দৃঢ়তার জন্যই কিন্তু তিনি তাঁর সমস্ত প্রতিবন্ধকতা এবং দুর্বলতাগুলিকে কাটিয়ে উঠতে পেরেছেন। এছাড়াও অনুষ্কা শর্মা, শ্রদ্ধা কাপুর, সামিরা রেড্ডি, দীপিকা পাডুকোনের মতো ব্যক্তিত্বরা বিভিন্ন সময় মানসিক অবসাদের শিকার হলেও নিজেরাই বেরিয়ে এসেছেন সেই পরিস্থিতি থেকে। এরা পারলে আপনি কেন পারবেন না! এর জন্য মেনে চলুন সহজ কিছু উপায়।
১.নেতিবাচক চিন্তাকে চ্যালেঞ্জ করুন
আপনাকে কোনও গুরুদায়িত্ব দেওয়া হলে আপনার কি গলা শুকিয়ে আসে, গলা কেঁপে যাচ্ছে মনে হয়, সর্বোপরি নার্ভাস বোধ করেন? এমন অবস্থায় আপনার মনের নেতিবাচক চিন্তাভাবনাকে সবার আগে চিহ্নিত করার চেষ্টা করুন। কোনও কাজ করার আগেই আপনার মনের যে নেতিবাচক ভাবনা-চিন্তাগুলি খুঁজে বের করুন এবং এগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করা উচিত। মনে রাখবেন আপনার সমস্যা আপনাকেই সমাধান করতে হবে।
২.আত্মবিশ্বাসে পরিপূর্ণ থাকুন
ইতিবাচক মনোভাব মনের মধ্যে আস্থা গড়ে তোলে। মনে রাখবেন, শিক্ষা এবং অনুশীলন আপনাকে আত্মবিশ্বাসের দিকে পরিচালিত করবে। ধরুন আপনাকে কোনও গ্রুপ ডিসকাশনে অংশ নিতে বলা হয়েছে সেখানে নিজের মনের জোর নিয়ে কথা বলার অভ্যাস করুন। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলার অভ্যাস করুন। এর জন্য অনুশীলনে কোনও ঘাটতি রাখবেন না, কীভাবে সেরা পারফরম্যান্স দেবেন সেই চেষ্টা করে যান।
৩.নিজের মনের ভয়কে চিহ্নিত করুন
যেকোনও ধরণের আলোচনায় বক্তব্য রাখার সময় অন্যান্য অংশগ্রহণকারীরা আপনার সম্পর্কে কী ভাবছেন এই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলুন। এমনকী যদি এই উদ্বেগ আপনাকে তাড়িয়ে বেড়ায় তাহলে তাকেও উপেক্ষা করুন। নিজেকে অন্যান্য বক্তার থেকে সেরা মনে করুন, দেখবেন ধীরে ধীরে উদ্বেগ কেটে গিয়েছে।
৪.বিব্রতকর পরিস্থিতি গ্রহণ করুন
অচেনা মানুষের সামনে বিব্রত বোধ করা খুবই বেদনাদায়ক। আপনি যদি সামাজিক উদ্বেগে ভোগেন বা লাজুক হন তাহলে আপনাকে কিন্তু এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে অবশ্যই যেতে হবে। মনে করুন, কোথাও আপনাকে ইংরাজিতে বক্তব্য রাখতে হবে, কিন্তু ইংরেজিতে পোক্ত না হওয়ায় আপনি বিব্রত বোধ করতে পারেন। তবে সেই বিব্রতকর পরিস্থিতিকে স্বীকার করে নিন। পরিস্থিতিকে যত বেশি করে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন, ততই ভালো।
৫.নিজের দিকে নয়, মানুষের দিকে মনোনিবেশ করুন
ধরুন আপনি এমন একটা পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন যেখানে আপনার কোনও বিশেষ খুঁত মানুষের সামনে প্রকাশ পেয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এই নিয়ে বেশি না ভেবে অন্যান্য মানুষের দিকে মনোনিবেশ করুন। এতে দেখবেন অনেকটাই হালকা লাগবে।
৬.শ্বাস-প্রশ্বাস নিয়ন্ত্রণ করুন
উদ্বেগ বাড়লে আপনার নিঃশ্বাস-প্রশ্বাসও অনেক দ্রুত হয়। ফলে শরীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং অক্সিজেনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। ফলে মাথা ঘোরা, হার্টবিট বেড়ে যাওয়া, পেশীর টান অনুভূত হতে পারে। আর এই সবকিছুর জন্য বড় করে ধীরে শ্বাস নিন। দেখবেন আপনার নিঃশ্বাস অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে। এর জন্য দমের অভ্যাস করতে পারেন। প্রতিবার ২ সেকেন্ড শ্বাস বন্ধ রেখে ছাড়ুন। এইভাবে অভ্যাস করুন।
৭.নিজেকে সোশ্যালাইজ করুন
নিজেকে যতটা গুটিয়ে রাখবেন ততই দেখবেন উদ্বেগ আপনাকে বিচলিত করছে। আপনি যত সামাজিক হবেন ততই দেখবেন নিজের আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন। আর আত্মবিশ্বাসে ভরপুর মানুষের জীবনে কখনওই উদ্বেগ বাসা বাঁধতে পারে না।
8.অন্যের সঙ্গে কথাবার্তা বলুন
সামাজিক উদ্বেগের সমস্যায় যাঁরা ভোগেন তারা স্বাভাবিকভাবে সমাজের কাছ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে চান। কিন্তু এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে যতটা সম্ভব মানুষের সঙ্গে কথা-বার্তা বলুন এবং যোগাযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করুন
৯. একবারে একটি কাজ করার চেষ্টা করুন
একসঙ্গে একাধিক কাজ কখনওই করার চেষ্টা করবেন না। মাল্টিটাস্কিং কিন্তু আপনার উদ্বেগ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে পারে।
১০.জীবনধারার বদল করুন
খাওয়া দাওয়া এক্ষেত্রে একটা বিশেষ ভুমিকা গ্রহণ করে, তাই সামাজিক উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দূর করতে।
- ক্যাফেনযুক্ত পানীয় যেমন চা, কফি বা কোনও এনার্জি ড্রিঙ্ক বা সোডা-জাতীয় পানীয় এড়িয়ে চলুন।
- সর্বদা সক্রিয় থাকুন।
- প্রত্যেকদিন অন্তত আধ ঘণ্টা হাঁটা, দৌড়, সাঁতার, শারীরিক কসরত বা ব্যায়াম অনুশীলন করুন।
- খাদ্যতালিকায় ওমেগা ফ্যাট-যুক্ত (তিসির বীজ,আখরোট) খাবার রাখুন।
- দিনে ৭-৮ ঘণ্টা ঘুমোন।
- মদ্যপান থেকে বিরত থাকুন।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ
উপরিউক্ত টিপস মেনে চলার পরেও যদি আপনি এই সমস্যা কাটিয়ে উঠতে না পারেন, তাহলে অবশ্যই কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
মন্তব্য করুন