সকালে ঘুম থেকে ওঠার জন্য ফোনে অন্তত ১০টা অ্যালার্ম দেওয়া। একটা করে বাজে আর আপনি বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েন। এইভাবে সকাল আটটার সময়ে ওঠার কথা থাকেলেও আপনার ঘুম দশটার আগে ভাঙছে না! আমরা প্রায়শই এমন বহু মানুষ দেখি, যারা দিনের অধিকাংশ সময় কাটিয়ে দেন স্রেফ ঘুমিয়ে। বিষয়টি মজাদার বলে মনে হলেও বিপদ কিন্তু ওত পেতে রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ দিনে ৭-৮ ঘণ্টা পর্যন্ত ঘুমোতে পারেন। কিন্তু কেউ যদি প্রতিদিন ৯ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি ঘুমোন তখনই কিন্তু তাকে অতিরিক্ত ঘুম বলা হয়ে থাকে। তবে হ্যাঁ মাসে এক আধ-দিন আপনি দশ ঘণ্টা ঘুমোতেই পারেন, কিন্তু সেটা যদি আপনার প্রতিদিনের অভ্যাসের মধ্যে চলে আসে, তখনই তা বিপজ্জনক। কারণ অতিরিক্ত এই ঘুমের কারণেই একাধিক শারিরীক ও মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। বিশ্বাস না হয় জেনে নিন-
১) স্ট্রোক
অনেকে বলে বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্ত তার নেপথ্যে অন্যতম কারণ কিন্তু অতিরিক্ত ঘুম। একাধিক গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, যারা দৈনিক ৯ ঘণ্টার বেশি ঘুমোন, তাদের স্ট্রোকের ঝুঁকি আরও কয়েক গুণ বেড়ে যায়।
২) হার্ট অ্যাটাক
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যাঁরা দিনে আট ঘণ্টার বেশি ঘুমোন, তাদের হৃদযন্ত্রের রক্তের প্রবাহ স্বাভাবিকের থেকে অনেকটাই কমে যায়। যার ফলে একরকম যন্ত্রণা অনুভূত হয়, যা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ১০ শতাংশ বাড়িয়ে দেয়।
৩) লাগামছাড়া ওজন বৃদ্ধি
স্বাভাবিকের থেকে বেশি ঘুমোলে যে ওজন বাড়ে, তা কিন্তু গবেষণা স্বীকৃত। গবেষকরা দেখেছেন যে, যারা দিনে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি সময় ধরে ঘুমোয় তাদের ওজন বাড়ার প্রবণতা ২১ শতাংশ বেশি হয়ে থাকে। আর ওজন বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আরও একাধিক রোগ-বালাই শরীরে বাসা বাধতে শুরু করে।
৪) তীব্র যন্ত্রণা
অনেকক্ষণ ধরে শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়াকলাপ বন্ধ থাকলে এমনিকেই শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গে ব্যথা অনুভব হয়। আর ঘুমোনোর সময় এমনিতেই হাত-পা অচল থাকে। আর একভাবে অনেকক্ষণ ধরে শুয়ে থাকার ফলে শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে তীব্র যন্ত্রণা অনুভব হতে পারে। শুধু তাই নয়, অতিরিক্ত ঘুম কিন্তু মাথা ধরিয়ে দিতে পারে।
৫) ডায়াবেটিস
ঘুমোলে ডায়াবেটিস? বিশ্বাস করছেন না তো! কানাডার একদল গবেষক তাঁদের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, যারা স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত ঘুমোন তাদের শরীরে গ্লুকোজের মাত্রা ভারসাম্যহীনতা দেখা দেয়। যার ফলে ডায়াবেটিস বা মধুমেহ রোগের প্রকোপ ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
৬) খিটখিটে ভাব
অতিরিক্ত ঘুমোলে মস্তিষ্ক একটা দীর্ঘক্ষণ কাজ করা বন্ধ রাখে। এরপর যখন ঘুম ভাগে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত জল ও খাবার না পৌঁছানোর ফলে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যেতে পারে, বিরক্তিভাব জন্মাতে পারে।
অতিরিক্ত ঘুমের কবল থেকে বাঁচার উপায়
- ১০-১২টা অ্যালার্ম দিয়ে তা বারে বারে বন্ধ করে দেওয়ার বদলে ১৫ মিনিটের গ্যাপে ৩টে অ্যালার্ম দিন। অ্যালার্মের টিউনটি একটু বিদঘিুটে বা বিকট ধরনের রাখতে পারেন, এতে ঘুম ভেঙে যাবে সহজেই।
- এমনিতেই রাতে শোওয়ার সময়ে পাশে ফোন নিয়ে ঘুমোনো উচিত নয়। তাই ফোন অ্যালার্ম দিলেও ফোনটি হাতের কাছে না রেখে একটু দূরে রাখুন। এতে অ্যালার্ম বন্ধ করতে বিছানা ছেড়ে ওঠার তাগিদ থাকবে।
- যাদের প্রতিদিন অনেকক্ষণ ঘুমোনোর অভ্যেস তারা বাড়ির কাউকে বলুন আপনাকে ডেকে দিতে। এতে চোখে-মুখে ঠান্ডা জলের ঝাপটা দিয়ে হোক বা জানলার পর্দা সরিয়ে মুখে রোদ ফেলে হোক- আপনাকে ওঠানোর দায়িত্ব যদি কেউ নেন তাহলে খুবই ভাল।
- ছুটির দিনে অতিরিক্ত ঘুমোনোর প্রবণতা থাকে। সেটা অবশ্য শারীরিক ক্লান্তি থেকেই আসে। তবে এই অভ্যেস ত্যাগ করুন। প্রতিদিন একটি নির্দিষ্ট সময়ে ঘুম থেকে ওঠার অভ্যেস করলে অতিরিক্ত ঘুমের হাত থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
- খাওয়া দাওয়ার প্রতি বিশেষ যত্নবান হন। স্বাস্থ্যকর খাবার ও পর্যাপ্ত জলপান করুন।
- অতিরিক্ত ঘুমের প্রবণতা এড়াতে বেশি রাত পর্যন্ত না জেগে সকালে ওঠা অভ্যাস করুন। এতে আপনার কাজ যেমন নির্ভুল হবে, তেমনই ঘুমও রুটিনে বাধা পড়বে।
মন্তব্য করুন