আমরা পুরো ঘর পরিষ্কার রাখতে যতটা নজর দেই, জলের কলগুলো পরিষ্কার রাখতে ততটা মনোযোগ দেইনা বা পরিশ্রম করিনা। আর কলগুলোতে দাগ ও মরিচা ধরলেই পুরো ঘরের সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে যায়। কলের উপরে ও গোড়ায় ময়লা জমে দাগ পড়লে জলের ফ্লো কমে যায় অনেকখানি।
অনেক কারণেই জলের কলে দাগ পড়ে যায়৷ অনেকের ব্যবহারের কারণে হাতের ময়লা কলের উপরের পৃষ্টে জমতে জমতে দাগ পড়ে। আবার পানিতে থাকা ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম কলের গায়ে ও চারপাশে বাদামি দাগ তৈরি করে। লাইমস্কেল, যা ক্যালসিয়াম কার্বোনেট শক্ত রূপ এবং খরজল থেকে উৎপন্ন হয়, কলের চারপাশে জমে পানির ফ্লো কমিয়ে দেয় এবং কলের চেহারা খারাপ করে তোলে।
জলের কলের বিচ্ছিরি দাগ তোলার সহজ টিপস নিয়ে থাকছে আজকে আলোচনা। জানবেন কিভাবে কোন জিনিস ব্যবহার করে বহু পুরনো কলকেও করতে পারবেন নিমেষেই পরিষ্কার।
টুথপেস্টঃ
বহুদিন ধরে ব্যবহারের ফলে বেসিন, শাওয়ার, সিঙ্কের কলে জলের দাগ পড়ে যায়। সেই দাগ হালকা করতে টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারেন। খানিকটা টুথপেস্ট নিয়ে শুকনো স্পঞ্জে লাগিয়ে কলের চারপাশটা মুছে নিলেই কল দেখাবে নতুনের মতো। চাইলে টুথপেস্ট ৫-৭ মিনিট লাগিয়ে রেখে এরপর মুছতে পারেন, তাতে দাগ আরো তাড়াতাড়ি উধাও হবে।
টমেটো কেচাপঃ
স্টিলের জলের কলে জং পড়ে শক্ত দাগ হওয়া নতুন কিছু না। এই দাগ দূর করবে টমেটো কেচাপ। দাগের জায়গায় টমেটো কেচাপ লাগিয়ে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপরে পুরনো অব্যবহৃত ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। ব্রাশ পুরনো হলেও এর ব্রিসেলস যেন শক্ত এবং খাড়া থাকে। অতিরিক্ত ছড়ে যাওয়া ব্রাশ ব্যবহারে স্টিলের ক্ষতি হতে পারে।
ভিনেগারঃ
জলের কলের বিচ্ছিরি দাগ দূর করতে ভিনেগার কয়েকভাবে ব্যবহার করতে পারেন। এর অম্ল জেদি দাগ অপসারণের জন্য বেশি কার্যকরী। তবে ভিনেগারটি যেন হোয়াইট এবং পানি মুক্ত হয় সেটা দেখবেন আর ব্যবহারের আগে অবশ্যই হাতে গ্লাভস পড়ে নিবেন।
- ১ টেবিল চামচ ভিনেগার ও ১ টেবিল চামচ ডিশ ওয়াশিং লিকুইড সোপ একসাথে মিশিয়ে নিন। এরপরে নাইলনের স্ক্রাবারে লাগিয়ে দাগের জায়গায় ঘষে নিন। দাগ চলে যাবে কয়েক মিনিটে। এই মিশ্রণ কল ছাড়াও বেসিনের বাদামী দাগ দূর করতে ব্যবহার করতে পারবেন।
- সমপরিমাণ গরম পানি এবং ভিনেগার একসাথে মিশিয়ে নিন। এবার এতে নরম কাপড় ডুবিয়ে কলের চারপাশটা এবং দাগের জায়গা মুছে নিন, জলের কল নতুনের মতো দেখাবে।
- জলের কলের শক্ত দাগ ও মরিচা দূর করতে চাইলে সরাসরি ভিনেগার ব্যবহার করতে পারেন। নরম কাপড় বা তোয়ালে দিয়ে মরিচার জায়গাগুলো মুড়িয়ে নিন। এরপর সেগুলোর উপরে ভিনেগার ঢেলে ৩০ মিনিট রেখে দিন। ৩০ মিনিট পরে কাপড় সরিয়ে পুরনো ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার করলেই মরিচা ও জেদি দাগ উঠে যাবে।
- দাগের উপর ভিনেগার স্প্রে করুন অথবা ব্রাশ দিয়ে ভিনেগার লাগিয়ে নিন। চাইলে ভিনেগারের বদলে আধা কাপ লেবুর রসও ব্যবহার করতে পারেন। ১৫ থেকে ৩০ মিনিট এভাবে রেখে দিন, দাগ বেশি গাঢ় হলে ১ ঘন্টা রাখতে হবে৷ এরপরে ব্রাশ দিয়ে আবারও জায়গাটি ঘষে পরিষ্কার করুন। সবশেষে পরিষ্কার কাপড় দিয়ে কল মুছে নিন। দ্রুত দাগ তোলার জন্য ভিনেগার ও লেবুর রস একসাথে মিশিয়েও ব্যবহার করতে পারেন।
- কলের পাশাপাশি বাথরুমের শাওয়ার হেডেও বিচ্ছিরি দাগ জমে গেলে সেটা পানি চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করতে পারে। তাই এই দাগ দূর করার জন্য আগে একটি প্যাকেটে হোয়াইট ভিনেগার ঢেলে নিন। তারপর শাওয়ার হেডটা প্যাকেটের ভিতর ঢুকিয়ে রাবার ব্যান্ড বা দড়ি দিয়ে প্যাকেটের মুখটা পেঁচিয়ে রাখুন। সারারাত এভাবে রেখে দিলে ভিনেগার দাগ শুষে নিবে। পরের দিন প্যাকেট খুলে ফেলবেন।
ডিশ ওয়াশিং সোপঃ
বারবার ব্যবহারের ফলে স্টিলের কলের উজ্জ্বলতা হারিয়ে যায়। হারানো উজ্জ্বলতা ফেরাতে ডিশ ওয়াশিং লিকুইড সোপে কাপড় ভিজিয়ে নিন। এরপর ভেজানো কাপড় ও গরম পানির সাহায্যে কলের দাগ মুছে ধুয়ে ফেলুন। ধোয়ার পরে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছতে পারেন যতক্ষণ না পর্যন্ত কল চকচক করছে।
বেকিং সোডাঃ
বেকিং সোডা কলের বিচ্ছিরি দাগ দূর করার জন্য আরেকটি ভালো অপশন হতে পারে। সামান্য বেকিং সোডা আর পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। দাগের উপরে লাগিয়ে ব্রাশ দিয়ে ঘষে তুলে ফেলুন। মাত্র কয়েক সেকেন্ডেই জলের কল হয়ে উঠবে সুন্দর ও ঝকঝকে।
মেটাল-প্লেটেড জলের কল পরিষ্কারের নিয়মঃ
সাধারণ স্টেইনলেস স্টিলের কলের চাইতে ধাতবের আবরণীযুক্ত বা মেটাল-প্লেটেড জলের কল পরিষ্কার করা বেশ কঠিন। একটু অসাবধান হলেই কলের আবরণ ছড়ে যেতে পারে বা নষ্ট হতে পারে। এই জাতীয় কল পরিষ্কারের জন্য লেবু, ভিনেগার, সাধারণ পানি, এবং শক্ত ব্রাশ একদমই ব্যবহার করা যাবেনা।
শুধুমাত্র মাইক্রোফাইবারের কাপড় দিয়ে প্রতিদিন কল মুছে রাখলে বিচ্ছিরি দাগ অনেকটাই এড়ানো সম্ভব। হালকা দাগ পড়লে মাইল্ড সোপ আর ডিস্টিলড ওয়াটারের মিশ্রণ বানিয়ে স্পঞ্জ বা মাইক্রোফাইবার কাপড়ে লাগিয়ে কল মুছবেন। জেদি দাগের জন্য ডিস্টিলড ওয়াটারে সামান্য বেকিং সোডা মিশিয়ে পাতলা একটি মিশ্রণ তৈরি করুন এবং পরিষ্কার করুন। কখনোই জোরের সাথে ঘষবেন না, তাতে মেটালের ক্ষতি হবে। আর পরিষ্কারের জন্য শুধু ডিস্টিলড ওয়াটার ব্যবহার করবেন, কারণ সাধারণ পানির খনিজ পদার্থ মেটালে জমে দাগ তৈরি করবে।