বাড়ির মধ্যে ঠাকুর ঘর আমাদের কাছে খুবই পবিত্র একটি স্থান। রোজ এই ঘরে আমাদের কিছুটা সময় অবশ্যই কাটে। আর এখন উৎসব অনুষ্ঠানের দিনে তো একটু বেশি সময় কাটবেই। তাই ঠাকুর ঘরের প্রতি একটু বিশেষ নজর দেওয়ার দরকার রয়েছে বৈকি!
আমাদের বাঙালিদের তো আবার বারো মাসে তেরো পার্বণ, সুতরাং সারা বছর ঠাকুর ঘরে কিছু না কিছু লেগেই থাকে। আজ তাই আপনাদের বিস্তারিত ভাবে জানাবো সারা বছর আপনারা আপনাদের ঠাকুর ঘর কীভাবে সুন্দর আর চকচকে রাখতে পারেন।
১. পিতলের জিনিসের পরিচর্যা
ঠাকুর ঘরে পিতলের জিনিস থাকবে না তা কি হয়! প্রদীপ রাখার জায়গা, থালা, বাসন সব ভাল ভাল জিনিসই তো পিতল দিয়ে তৈরি। আর পিতলের জিনিস ব্যবহার করতে করতে তাতে তেল পড়ে চটচটে আর বাজে দেখতে হয়ে যায়। তখন কি করবেন!
- সপ্তাহে এক দিন সময় করে বসুন ওই পিতলের বাসন নিয়ে। প্রথমে একটি বড় বালতির মধ্যে গরম জল নিয়ে তাতে ডিটারজেন্ট মিশিয়ে ওই পিতলের বাসন তার মধ্যে দিয়ে দিন। ১০ মিনিট রাখুন। এবার একটি ব্রাশ নিয়ে তার মধ্যে ডিটারজেন্ট লাগিয়ে ভাল করে ঘষুন। এতে তেলতেলে ভাব খানিক কমবে।
- আবার গরম জলে ধুয়ে তেঁতুল বা লেবু নিয়ে পিতলের বাসন ভাল করে স্ক্রাব করে নিন। ঠাণ্ডা জলে ধুয়ে নিন।
- হলুদ দিয়ে জলে মিশিয়ে একটা মিশ্রণ তৈরি করুন। সবার শেষে বাসন এতে চুবিয়ে রাখুন ২০ মিনিট। এবার তুলে গরম জলে ধুলে একদম চকচকে পিতলের বাসন।
২. রূপোর বাসনের যত্ন
![ছাই, হাল্কা গরম জলের সাহায্যে রূপোর জিনিস পরিষ্কার](https://dusbus.com/wp-content/uploads/2020/10/Cleaning-Silver-Pot.jpg)
আমাদের অনেকের বাড়িতেই রূপোর প্রদীপ, ভোগের থালা, বাটি থাকে। ঠাকুরের গয়না রূপোর থাকে। সেগুলি পরিষ্কার করার নিয়মও খুব সহজ।
- ছাই খুব ভাল রূপোর জিনিস পরিষ্কার করে। ধুপকাঠি থেকে যে ছাই পান, সেই ছাই দিয়ে রূপোর জিনিস ঘষে নিন। তারপর হাল্কা গরম জলে ধুয়ে নিলেই পরিষ্কার হয়ে যাবে।
- আর খুব ময়লা জমলে! ভাল করে জল গরম করুন। তাতে দিয়ে দিন বেকিং পাউডার। এই মিশ্রণে রূপোর জিনিস দিয়ে খানিক ফুটিয়ে রেখে দিন ঠাণ্ডা হওয়ার জন্য। দেখবেন রূপোর জিনিস একদম নতুন।
৩. তামার জিনিসের পরিচর্যা
তাম্রপাত্র, তামার ঘট, কোশা-কুশি, ঠাকুর ঘরে তামার ব্যবহার বিপুল। আর তামার জিনিস ময়লা হলে কালচে হয়ে যায়। খুব সহজ পদ্ধতি জানাবো।
- একটা পাত্রে সমান অনুপাতে ভিনিগার আর নুন নিন। একটা ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এই পেস্টের মধ্যে ব্রাশ চুবিয়ে এই মিশ্রণ দিয়ে তামার বাসন ঘষে ঘষে পরিষ্কার করুন। তারপর গরম জলে ধুয়ে নিলেই রেডি তামার চকচকে বাসন।
- আর জেদি দাগ হলে? নুন আর ভিনিগারের মিশ্রণ আগুনে বসিয়ে তার মধ্যে তামার জিনিস দিয়ে ১৫ মিনিট ফুটিয়ে নিন। তারপর ঠাণ্ডা হলে ভাল করে জল দিয়ে ধুলেই তামার বাসন একেবার ঝকঝক করবে।
৪. পুজোর তাক পরিষ্কার করবেন কীভাবে
ঠাকুরের আসনের সামনে একটা জায়গা থাকে, যেখানে আমরা প্রদীপ, ধূপ এইসব রাখি। মূলত মার্বেল বা কাঠের হয় এই জায়গা। এখানে তেল পড়ে, ছাই পড়ে। আর আমরা এই জায়গাটা রোজ ধুইও না। তাই খুব ময়লা দাগ হয়ে যায় অনেক সময়ে। এক্ষেত্রে চেষ্টা করবেন রোজ না হলেও অন্তত দুই দিন ছাড়া জায়গাটা ডিটারজেন্ট স্প্রে আর গরম জল দিয়ে ধুয়ে নিতে। এতে দাগ বা ময়লা জমতে পারবে না।
৫. মেঝে পরিষ্কারের নিয়ম
ঠাকুরঘরের মেঝে হয় এমনি সিমেন্টের, না হলে গ্রানাইট পাথরের। সাধারণ সিমেন্টের হলে রোজ একবার মুছে নেবেন। তাহলে ময়লা জমবে না।
- আর সপ্তাহে একবার সাবান জল দিয়ে। গ্রানাইটের মেঝে হলে কিন্তু অ্যাসিড জাতীয় জিনিস দেবেন না মেঝেতে।
- লেবু দেওয়া ডিটারজেন্টও ব্যবহার করবেন না। এতে মেঝে খারাপ হয়ে যাবে। শুধু সাবান জলই যথেষ্ট।
- দেওয়ালে অনেকের টাইলস দেওয়া থাকে। সেক্ষেত্রেও একটু জল দিয়ে মুছে নেবেন মাঝে মাঝে।
৬. এছাড়াও সাধারণ কিছু নিয়ম
উপরের বিষয়গুলি মানার পরেও আরও কিছু জিনিস মানলে অতিরিক্ত সুফল পাবেন, যেমন ঝুল জমছে কিনা দেখে নিন ভাল করে। বিশেষ উৎসবের সময়ে নিয়ম করে ঝুল ঝেড়ে নিন।
- দরজা মাঝে মাঝে অবশ্যই শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে নেবেন। দরজা যেহেতু মূলত কাঠের হয়, তাই জল না ব্যবহার করে শুকনো কিছু দিয়ে পরিষ্কার করাই ভাল।
- ঠাকুরের মূর্তি মাঝে মাঝে পঞ্চামৃত বা এমনিই শুদ্ধ জল দিয়ে পরিষ্কার করুন। এতে বেশ ঝকঝকে থাকে সেগুলি। আর নিয়ম করে মাঝে মাঝে লেবু বা তেঁতুল দিয়ে পরিষ্কার করে নিন পিতলের বা অষ্টধাতুর মূর্তি। বাজারে ব্রাশো বলে এক ধরণের জিনিস পাওয়া যায় এই পরিষ্কার করার জন্য। সেটাও ব্যবহার করতে পারেন।
এই কিছু জিনিস মাথায় রাখলেই সারা বছর আপনার ঠাকুর ঘর আর ঠাকুরের বাসন চকচক করবে।
মন্তব্য করুন