চড়াই-উৎরাই জীবনের অভিন্ন অঙ্গ। যেকোনো সম্পর্ক ও তার ব্যতিক্রম নয়। কর্মজীবনে ব্যস্ততা, ডিপ্রেশন ও পারিবারিক-সামাজিক চাপ সামলাতে সামলাতে নিজেদের অজান্তেই আমরা প্রিয়জনের সাথে অত্যন্ত ছোটখাটো ভুল বোঝাবুঝিতে ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙছি।
শুধু তাই নয়, ‘শর্ট টেম্পার্ড’ তকমা এঁটে গর্বে নিজেদের বুক চওড়া ও করি। আসলে এগুলো জাজমেন্টাল হওয়া ও সমব্যথী মনোভাব উধাও হবার ফলশ্রুতি মাত্র! যার চূড়ান্ত পরিণতি হয় বিচ্ছেদের অশ্রু।
ঠিক এইখানেই আপনার দৈনন্দিন জীবনে ধৈর্যের মাহাত্ম্য রয়েছে। ধৈর্যের ফলেই এরকম অকিঞ্চিতকর পরিস্থিতি থেকে আপনি শুধু উদ্ধার পাবেন না বরং পজিটিভিটি সঞ্চয় করবেন। আজ দেখে নিন তবে ভালোবাসার সমীকরণে ধৈর্যের ভারসাম্য রাখতে কি কি স্টেপ নেবেন।
ধৈর্য কেন দরকার রিলেশনশিপে?
- ধৈর্য হলো আত্ম-সংযম অনুশীলন করবার প্রথম সোপান। একই সাথে আপনার ধৈর্য ও সহনশীলতা আপনি আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীর প্রতি কতটা দায়িত্ববান সেটার ও পরিচায়ক। এর বলেই কিন্তু দুজনের জীবনের আসা নানা চ্যালেঞ্জ এর মোকাবিলা করার পারদর্শিতা অর্জন করা যায়।
- অন্যদিকে, ধৈর্য্য ধরতে পারলে স্বাভাবিক ভাবেই আপনার দাম্পত্যজীবন দীর্ঘমেয়াদি হবার রাস্তায় পাড়ি দেয়। সম্পর্কে নিরাপত্তা,স্থিতিশীলতা ও সুখ বিরাজ করে। পাশাপাশি এটা আপনাকে মানসিকভাবে অন্যকে নিজের মতো করে থাকতে দিতে শেখায় ও ইমোশনাল স্পেস এর সীমানা বাড়িয়ে তোলে।
- আপনার কমফোর্ট জোন অনেকখানি প্রসারিত হয় যার ফলে আপনি সঙ্গীর খুঁত,ত্রুটি ইত্যাদির পেছনে সময় নষ্ট না করে তার সম্পর্কে ভালো কথা চিন্তা করবার অবকাশ পান। এডজাস্টমেন্ট বা মানিয়ে নেবার দক্ষতা তৈরি হয়ে যায়। পরোক্ষে বলা যায় ধৈর্য থাকলে আপনার ম্যাচুরিটি আসে ফলে অন্যের কাছে আপনি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠেন।
ধৈর্য বাড়াতে কি কি করবেন?
সহিষ্ণুতা:
- পৃথিবীতে দুজন মানুষের সব বিষয়ে মত মিলবে এরকম কোন বেদবাক্য কোথাও লেখা নেই। তাই অপরজনের দৃষ্টিভঙ্গিকে সম্মান করুন। কোন ব্যাপারে মতের অমিল হতেই পারে কিন্তু তার ফলে তিক্ততা যাতে না আসে সেটা দেখা আপনার কর্তব্য। সহিষ্ণুতা থাকলে আপনি অনেকটা খোলা মনে সঙ্গীকে বুঝতে পারবেন ও অবাঞ্ছিত ঝামেলা সহজেই এড়িয়ে যেতে পারবেন।
- ধরা যাক আপনার ছোটখাটো বিষয়েই রাগ হয়ে যায়। মেজাজ কাবু করতে হিমশিম খান? তবে কি করবেন? দেখুন আপনার ট্রিগার পয়েন্ট আপনার থেকে কেউ ভালো জানে না। যখনই মনে হবে যে আপনার রাগের বাঁধ ভাঙতে চলেছে তখনই চেষ্টা করুন নিজের আবেগকে প্রশমিত করার। যদি না কাজ হয় তবে সেই জায়গা থেকে উঠে চলে যান বা ফোন কেটে দিন, ‘সুইচ অফ’ টেকনিক কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করার ভালো উপায়।
শ্রোতা হন:
- আমরা আমাদের মনের ভার,যন্ত্রনা ব্যক্ত করেই হাল্কা হই। প্রত্যেকের জীবনের অভিজ্ঞতা আলাদা হয় তাই নিজের সমস্যার কথা বলার আগে পার্টনার এর যে ইস্যু বা অভিমত রয়েছে সেটাকে প্রাধান্য দিতে শিখুন। তার কথা মন দিয়ে শুনুন ও প্রতিক্রিয়া করুন। এতে সামনের জন আপনার মেন্টাল সাপোর্ট এর গুরুত্ব উপলব্ধি করার সুযোগ পাবে যার ফলে দেখবেন অর্ধেক সমাধান হয়ে গেছে।
- কমিউনিকেশন গ্যাপ তৈরি হতে দেবেন না। যদি তার মুড সুইং চলছে অথবা এমনিই কিছু ভালো লাগছেনা তবে জোর করে কথা বলার চেষ্টা না করে অপেক্ষা করতে শিখুন। অভিমান হলে মানানোর সময় যদি মনে হয় সামনের জনের কথা কিছুটা বেঠিক তবে খুঁটিনাটির উর্দ্ধে উঠে খানিক কম্প্রোমাইজ ও করুন তবে আত্মসম্মান এর সাথে আপোষ করে নয়।
স্বীকৃতি:
- বাস্তববাদী হয়ে ওঠা সম্পর্কের গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। আপনার গার্লফ্রেন্ড বা বয়ফ্রেন্ড নর্মাল লাইফে যেমন তাকে অনুরূপ ভাবে মেনে নিতে চেষ্টা করুন।
- নিজের আদর্শ বা স্বপ্নের মানুষে তাকে পরিবর্তন করতে গেলেই বিপত্তি! তার দোষ,গুণ, পছন্দ, অপছন্দ ইত্যাদিতে ইন্টারফেয়ার করে নিজের প্রত্যাশা চাপিয়ে দেবেন না মোটেই। কারণ, আমাদের এক্সপেক্টেশন ব্যর্থ হলেই আমরা অধৈর্য্য হয়ে উঠি।
অপেক্ষা করতে শিখুন:
- কথাতেই আছে সবুরে মেওয়া ফলে। তাই যদি আপনার পার্টনার আপনার কাছে কোনকিছু নিয়ে প্রতিশ্রুতি দেয়, হতে পারে ডিনার ডেট বা একসাথে মুভি বা শপিং প্ল্যানিং তবে অপেক্ষা করতে শিখুন। বিশ্বাস রাখুন যে সে তার কথা রাখবেই। ওভারথিংকিং এর ভূত মাথায় চড়তে দেবেন না।
- ইতিবাচক মানসিকতাই আপনার ধৈর্য বাড়িয়ে দেয়। যদি সব আশা অনুযায়ী নাও হয় তবেও হতাশ হবেন না। নিজেকে বোঝান যে এটাই হয়তো হবার ছিল এবং পরিকল্পনা মাফিক জীবনে সবকিছু হয় না ও তিনি আগে কি কি প্রমিস আপনার জীবনে রেখেছেন ও পালন করেছেন কিংবা একসাথে কাটানো সুখের সময়ের কথা ভেবে পরবর্তী ভালোর জন্য প্রস্তুত থাকুন।
তুলনা নয়:
- আমরা ছোটবেলা থেকেই প্রতিযোগিতাপূর্ণ পরিবেশে বেড়ে উঠি। পান থেকে চুন খসলে সেই জন্য আমাদের মধ্যে অপর বাড়ির তমুকের সাথে তুলনা টানার একটা প্রবণতা থেকেই যায়। এটা থেকে সত্বর বিরত থাকুন।
- সাথীর ব্যবহার,চরিত্র,আচরণ,অভ্যাস ইত্যাদি নানা বিষয় নিয়ে তুলনা করে আমরা খোঁটা দিয়ে থাকি। বস্তুত, অন্যের জীবন নিয়ন্ত্রণ করা ও কিছুক্ষেত্রে নিজেদের ইগো বুস্ট করার জন্য এই অতিরিক্ত অধিকারবোধের প্রয়োগ করে থাকি আমরা।
- এই জটিলতা থেকেই ধৈর্যের বিচ্যুতি ঘটে। তাই চেষ্টা করুন তুলনা না করতে ও কমপ্লিমেন্ট দেবার অভ্যেস গড়ে তুলতে। তাহলে অস্থিরতা ও মেজাজ হারানোর অবস্থা বা ছোট কথায় রিয়াক্ট করার মতো সম্ভাবনা কমবে।
মন্তব্য করুন