সারাদিন বাড়িতে বসেই কাজ ওয়ার্ক ফ্রম হোম। ত্বকে সেভাবে লাগছে না বাইরের ক্ষতিকর রোদ, দূষণ তবুও ত্বক নির্জীব লাগছে? উজ্জ্বলতা প্রায় নেই বললেই চলে। নিজের ত্বকের দিকে লক্ষ্য করে দেখুন তো এই সমস্যায় কি আপনিও? কিন্তু রোদ লাগছে না একটুও তাও কেন এই সমস্যা?
লকডাউনে বাড়ি বসে সারাদিন ফোনে গেমস, সোশ্যাল মিডিয়ায় সময় কাটছে? ফোনে বা ল্যাপটপের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটাচ্ছেন? তাহলে বলা ভালো এতে শুধু আপনার চোখ নয় ত্বকের ও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে। সেইজন্যই বাইরের রোদ বা দূষণের সংস্পর্শে না এলেও ত্বক নির্জীব লাগছে।
কিন্তু ওয়ার্ক ফ্রম হোম হোক কিংবা অফিসে ল্যাপটপ মোবাইল ছাড়া চলবে কিকরে? তাওলে উপায় কি? উপায় আছে। সেই উপায়ই জানাবো আজ, সঙ্গে এই ক্ষতিকর রশ্মি ঠিক কতটা ক্ষতিকর আপনার ত্বকের জন্য দেখুন।
কতটা ক্ষতিকর মোবাইল এর ব্লু রশ্মি?
ব্লু লাইট হল মোবাইল, ল্যাপটপ বা যেকোনো ডিজিটাল ডিভাইস থেকে বেরনো আলো। যা উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন মানে এটি ত্বকের গভীরে প্রবেশ করে ত্বকের ক্ষতি করে। অবশ্য শুধু ডিজিটাল ডিভাইস নয়, বাইরে সূর্যরশ্মিতে ঘরের এলইডি লাইটেও এই আলো রয়েছে। কীভাবে ক্ষতি হতে পারে?
এই আলোতে আমাদের শরীরের স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেল নষ্ট হয় এ কারণেই ঘুমের সমস্যা হয়। বেশি রাত অবধি মোবাইল ল্যাপটপে কাজ করলে এই আলো ব্রেনকে সজাগ রাখে ফলে ঘুম আসেনা। ঘুম না হবার ফলে স্কিনের নিজস্ব যে রিপেয়ারিং সিস্টেম ব্যাহত হয়। ফলে ত্বকের ক্লান্তি বাড়ে। স্কিন উজ্জ্বল তো থাকেই না বরং স্কিন বুড়িয়ে যায় তাড়াতাড়ি। এছাড়াও ব্রন, চোখের তলায় কালি, নির্জীব ত্বক সহ আরও অনেক সমস্যা দেখা দেয়। কিন্তু এইসব ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করেও তো জীবন চলবে না। তাহলে উপায় কি?
উপায় আছে
সঠিক সানস্ক্রীন
আমরা ক্ষতিকর সূর্যরশ্মির হাত থেকে বাঁচতে যেমন রোদে বেরনোর আগে সানস্ক্রীন ব্যবহার করি, তেমনই এই সমস্যার ক্ষেত্রেও সানস্ক্রীন আমাদের কিছুটা সাহায্য করতে পারে।
তবে এক্ষেত্রে এমন সানস্ক্রীন বাছুন যা রোদের ইউভি রে ও ব্লু লাইট দুই থেকেই আপনার ত্বককে রক্ষা করতে পারে। এমন সানস্ক্রীন ব্যবহার করুণ যাতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, টাইটানিয়াম ডাই অক্সাইড, জিঙ্ক অক্সাইডের মত উপাদান রয়েছে। সানস্ক্রীন মাখার পর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিশিষ্ট ক্রিম মেখে নিতে পারেন। ল্যাপটপ বা কম্পিউটারে কাজ করতে বসার আগে মেখে নিন। তিন চার ঘণ্টা পর আবার মাখুন।
রাতে অবশ্যই স্কিন সিরাম
রাতে নাইট ক্রিম বা সিরাম কিন্তু ভুললে চলবে না। অনেকেই ফেস সিরাম ব্যবহার করেন। সেটা রাতে ঘুমোতে যাবার আগে অবশ্যই লাগিয়ে শোবেন। আমরা জানি নাইট ক্রিম বা সিরাম ত্বককে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এগুলো ব্লু লাইটের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে স্কিনকে অনেকটাই রক্ষা করবে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ নাইট ক্রিম ব্যবহার করার চেষ্টা করুণ।
আন্ডার অ্যাই জেল
আমাদের চোখের চারপাশের স্কিন খুব বেশি সেনসিটিভ বা নরম হয়। আমরা অনেক সময়ই স্ক্রীনের দিকে চোখ কুঁচকে তাকাই এতে চোখের চারপাশের স্কিনে চাপ পড়ে ফলে খুব তাড়াতাড়ি চোখের চারপাশের ত্বক কুঁচকে যেতে পারে। তাই রাতে আন্ডার অ্যাই জেল ব্যবহার করতে পারেন। এতে চোখের চারপাশের ত্বক ভালো থাকবে।
অ্যান্টি অক্সিডেন্টের ব্যবহার
ত্বককে ব্লু লাইটের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে ত্বককে বেশি করে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট দিতে হবে। এরজন্য বেশি করে সবুজ শাকসবজী, ফল খেতে হবে। ভিটামিন ই, সি সমৃদ্ধ খাবার গ্রীন টি এক্ষেত্রে বেশ ভালো। আমরা জানি গ্রীন টিতে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের ক্ষতি সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে ক্ষতির থেকেও বহুদূরে রাখে। ত্বকের বুড়িয়ে যাওয়া রোধ করে। এছাড়াও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট জন্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ ক্রিমও ব্যবহার করতে পারেন।
ফোনে নাইট মোড
ফোনে নাইট মোড করে রাখুন। এছাড়াও স্পেশাল অ্যাপস অনেক আছে সেগুলো ডাউনলোড করে রাখুন। সেই মোডে রাখুন ফোন। এতে ব্লু লাইটের বিচ্ছুরণ কিছুটা কম হয়। ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের জন্য স্পেশাল ব্লু লাইট ফিল্টার পাওয়া যায়। সেটা লাগিয়ে রাখতে পারেন স্ক্রীনে। যেটা অনেকটাই ব্লু লাইটের ক্ষতির হাত থেকে স্কিন ও চোখকে বাঁচাবে।
বেশি করে জল খান
এইসব ডিজিটাল ডিভাইসের আলো থেকে স্কিনে ড্রাই হয়ে যাবার একটা প্রবনতা থাকে। ফলে ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে জল খাওয়া জরুরী। তাই বেশি করে জল খান। এছাড়াও মুখ পরিষ্কার রাখাও জরুরী। ত্বক ভালো রাখতে ত্বককে পরিষ্কার রাখাও খুব দরকার। এছাড়াও ব্যবহার করতে হবে ময়েশ্চারাইজার। গরমকালে ওয়াটার বেস ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে পারেন ত্বককে হাইড্রেটেড রাখতে।
ত্বককে ভালো রাখতে যাই প্রোডাক্টই ব্যবহার করুণ না কেন, যেমন ফেসওয়াশ থেকে ময়েশ্চারাইজার সেটা গ্রীন টি বেস ব্যবহার করতে পারেন। কারণ আগেই বললাম গ্রীন টিতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে প্রচুর।
এইসব ডিজিটাল ডিভাইস আমাদের নিত্য জীবনের অঙ্গ। এগুলো বাদ দেওয়া মুশকিল, তবে একটু সতর্ক হয়ে ব্যবহার করলে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচা যায়। যেমন একটানা বেশীক্ষণ ফোন, ল্যাপটপ ব্যবহার না করা। একান্তই কাজ থাকলে এক ঘণ্টা পর পর ব্রেক দিন। মিনিট পাঁচেক একটু বাইরে থেকে পায়চারী বা চোখে মুখে একটু ঠাণ্ডা জলের ঝাপটা দিন।
মন্তব্য করুন