দুর্গাপুজো, লক্ষ্মীপুজো, কালীপুজো, ভাইফোঁটা, পরপর এতো সব অনুষ্ঠান হয়ে গেল। আর এই সব অনুষ্ঠানেই একটা জিনিস খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ, সেটা হল খাওয়াদাওয়া। বাইরে এবার কম খাওয়া হলেও ঘরের নাড়ু, মোয়া থেকে শুরু করে মাটন, সব খাওয়ার পর আয়নার সামনে দাঁড়ালেই পেটের দিকে নজর যেতে বাধ্য। এই অতিরিক্ত চর্বি এখন কমাবেন কী করে! উপায় কিন্তু খুব সহজ, তাও মাত্র এক সপ্তাহে।
১. শাকসবজিই প্রধান ভরসা
অনেক ভালমন্দ খাওয়া হল। এবার একটু শাকসবজির দিকে মন দিতে হবে। এখন আবার শীত, সবজি পাওয়ার সবচেয়ে সেরা সময়। তাই যত পারবেন সবুজ সবজি খান। নানারকম ফ্রেস শাক, মুলো, গাজর, বিট, বিনস, সিম এইসব আপনার থালায় থাকলে ভাত বা রুটি কম খেতে হয়। আর রাতে পারলে সবজি দিয়ে স্যুপ করে খেতে পারেন। এতেও কার্বোহাইড্রেট খাওয়াটা বন্ধ হবে। আর ল্যাটুস, গাজর, শশা, টম্যাটো দিয়ে স্যালাড করে খান। মানে খাবারের থালায় এভাবে নানা রকম ভাবে সবজি দিয়ে ভরিয়ে দিন।
২. শশা কিন্তু উপকারে আসবে
সবজির মধ্যে শশা নিয়ে আলোচনা করতে হবে একটু আলাদা করে। রোগা হতে গেলে শশা একমাত্র আপনাকে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করবে। শশার প্রায় ৯৫ শতাংশই জল। এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ফলিক অ্যাসিড, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম তো আছেই। শশার মধ্যে যেহেতু জলের ভাগ বেশি, তাই শশা খেলে খিদে অনেকটা কমে যায়। এইজন্য দুপুরে খাবারের পর শশা খেতে পারেন। সন্ধেবেলা খিদে পেলে শশা খেতে পারেন। যখনই বাড়তি খিদে পাবে শশা খেয়ে নিন। এতে খিদেও মিটবে আর ওজন ঠিক থাকবে।
৩. না খেয়ে তো নয়ই
ভাবছেন অনেক তো খেলাম, এবার একদম কম খাব। আর এতেই রোগা হয়ে যাব। এটা সাধারণ প্রবণতা হলেও একটা ভুল সিদ্ধান্ত। কম খেলে বা না খেলে ওজন কমে না। উলটে গ্যাস হতে পারে, অম্বল হতে পারে। আর খাবার স্কিপ করে গেলে পড়ে অতিরিক্ত খেয়ে নেওয়ার প্রবণতা তৈরি হয়, যা অনায়াসে ওজন বাড়াতে পারে। তাই খাওয়া হবে মাঝে মাঝে। তিন ঘণ্টা অন্তর অন্তর খাওয়া দরকার। আর এই সময়ে থালা ছেড়ে প্ল্যাটে আসুন, মানে প্ল্যাটে ধরার মতোই কম পরিমাণে খান কিন্তু বারেবারে খান। আমাদের সবচেয়ে বেশি চিন্তা থাকে বিকেলের খাবার নিয়ে। সেখানে আপনি ছোলা, গোটা মুগ, লঙ্কা, পেঁয়াজ, টম্যাটো দিয়ে একটা চটপটা স্যালাড করে অবশ্যই খেতে পারেন।
৪. জল খাওয়া দরকার
জল শরীরকে হাইডেট্রেড রাখে। শীতের সময়ে আমাদের এমনিতেই জল খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়। কিন্তু জল রোগা হওয়ার সময়ে খুব দরকার, জল খেলে যেমন টক্সিন দূর হয়, তেমনই খিদের ভাবও কমায় এই জল। শুধু জল কেন, জলীয় যে কোনও কিছুই এই রোগা হওয়ার জন্য খুব দরকার। ফলের রস হোক কি ডাবের জল, ডায়েট করার সময়ে অবশ্যই খেতে থাকুন।
৫. রোগা হওয়ার রামবাণ
এটা সম্বন্ধে আমরা জানি, কিন্তু সিরিয়াসলি নিই না বিষয়টা। সকালে উঠে লেবু-মধুর জল- রোগা হতে আপনি বাধ্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে আগে অল্প গরম জলে লেবুর রস আর মধু দিয়ে খান। এটা নিয়ম করে খেতে থাকুন। আর এক দিন অন্তর অন্তর খান অ্যাপেল সিডার ভিনিগার। এটিও গরম জলে মিশিয়ে খেয়ে নিন। একদিন লেবু-মধুর জল, একদিন অ্যাপেল সিডার ভিনিগার, এভাবে খেতে থাকলে অতিরিক্ত চর্বি সহজেই ঝরে যাবে।
৬. এক্সারসাইজ
ওপরে যা যা বললাম সেগুলি হল রোগা হওয়ার একটা দিক, আরেকটা দিক হল এক্সারসাইজ করা। এক সপ্তাহে রোগা হওয়ার জন্য দিনে দু’বার এক্সারসাইজ মাস্ট। আর সেটাও বেশ ভাল পরিমাণে ব্যায়াম, শুধু প্রাণায়াম বা যোগাভ্যাস নয়। খুব ভাল হয় যদি জিমে যেতে পারেন। সকালে জিমে গিয়ে মেশিনে ব্যায়াম করলেন, আর বিকেলে ঘরে ঘাম ঝরালেন। এইরকম করে করলে এক সপ্তাহে ওজন কমে ঠিক চেহারা হবেই। পুশ আপ, ক্রাঞ্চ, সিট আপ রোজ রাখতেই হবে।
৭. পর্যাপ্ত ঘুম
আমরা যারা ঠিক করে খেয়েও মোটা হয়ে যাই, তাঁদের এই মোটা হওয়ার পিছনে থাকে ঘুম না হওয়া। ঘুম ঠিক করে না হলে বা কম হলে খাবার ভাল করে হজম হয় না। এতে পরিপাক না হওয়া খাবার শরীরে ফ্যাট আকারে জমা হয়। তাই ঘুম পর্যাপ্ত হলেই ওজন কমে আসবে। পর্যাপ্ত ঘুম মানে সাত থেকে আট ঘণ্টা। এই উৎসবের সময়ে আমাদের খাবার বেশি খাওয়ার পাশে ঘুমটাও কিন্তু কম হয়। বাইরে বেরোনো, সকালে বাইরে যাওয়া, লোকজন আসাযাওয়া, সব মিলে ঘুম বা বিশ্রাম ঠিক করে হয় না। এবার বিশ্রামের দিকে নজর দিন।
এই সাতটি দিক কাল থেকেই নজরে রাখুন। এক সপ্তাহে অন্তত তিন কেজি কম হবেই। আরও কমে আসবে আস্তে আস্তে। কিন্তু রোজ নিয়ম করে করতে হবেই।
মন্তব্য করুন