ঠোঁটের উপরে লোম? মেকআপ বসছে না ঠিকমত? দেখতেও ভালো লাগছে না?
চিন্তা নেই। সহজেই দূর করতে পারবেন এই লোমগুলো। কি করে? দাঁড়ান বলছি।
ঠোঁটের উপরের এই লোমগুলো সাধারণত মেয়েদের হরমোন সংক্রান্ত বিভিন্ন সমস্যার কারনে হয়ে থাকে। ছেলেদের দাঁড়ি-গোফ মানা যায়। কিন্তু মেয়েদের বেলায় তা খুবই বিশ্রী দেখায়। শুধু ঠোঁটই নয়, দেখা যায় গালে ও চিবুকেও এধরনের লোম উঠে থাকে। এই লোমগুলো মেয়েদের স্বাভাবিক সৌন্দর্য নষ্ট করে দেয়। এগুলো দূর করতে অনেকেই পার্লারে যেয়ে প্রায়ই ফেসিয়াল বা বিউটি ট্রিটমেন্ট করান বা অনেকে হেয়ার রিমুভাল ক্রিমও ব্যবহার করেন। এগুলো সবই খরচসাপেক্ষ। অনেকের ক্ষেত্রে দেখা দেয় পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও। তাহলে উপায়?
উপায় হচ্ছে ঘরোয়া টেকনিক। ঠিকই পড়েছেন। ঘরোয়া কিছু টেকনিকে প্রাকৃতিক উপাদানের সাহায্যে ব্যথাহীন উপায়ে ঠোঁটের উপরের লোম তুলতে পারবেন খুব সহজেই। আজকে আপনাদের জন্য তাই রয়েছে ঘরে বসেই ব্যথাহীন উপায়ে ঠোঁটের উপরের লোম তুলে ফেলার কিছু টেকনিক।
চলুন জেনে নেই দশটি টেকনিকঃ
টেকনিক – ০১
একটি প্যানে কিছু পরিমাণ চিনি এক মিনিটের মত জ্বাল দিন। এরসাথে অল্প পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে ঘন করে নিন। ঠান্ডা হয়ে গেলে ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে নিন। এবার একটি কাপড় দিয়ে চক্রাকারে ঘষুন এবং লোমের বিপরীতে টান দিন। লোম উঠে যাবে। ঘরোয়া ওয়াক্সিং করার অন্যতম উপাদান হলো চিনি। চিনি অবাঞ্ছিত লোম দূর করে এবং নতুন লোম জন্মাতে বাঁধা দিয়ে থাকে।
টেকনিক – ০২
একটি ডিমের সাদা অংশ ভালো করে ফেটিয়ে নিন। এর সাথে কর্নফ্লাওয়ার এবং চিনি মিশিয়ে নিন। এবার পেস্টটি ঠোঁটের উপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে তুলে ফেলুন। সপ্তাহে তিনদিন করে একমাস নিয়মিত ব্যবহার করুন। ফলাফল নিজেই দেখবেন। ঠোঁটের উপরের অংশের লোম দূর করতে ডিমের সাদা অংশ বেশ কার্যকর। এটি গাল ও চিবুকের লোম দূর করতেও সাহায্য করে।
টেকনিক – ০৩
এক ভাগ দুধ এবং তিন ভাগ হলুদের গুঁড়ো বা হলুদ বাটা একসাথে মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে নিন। এটি ঠোঁটের উপর লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। আলতোভাবে মালিশ করে লোম তুলে ফেলুন। তারপর ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। এটি সপ্তাহে কয়েকবার ব্যবহার করুন।
টেকনিক – ০৪
দই ও বেসন ভালোভাবে মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এবার এর সঙ্গে এক চিমটি হলুদ ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি ত্বকে মেখে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর লোম আছে এমন অংশে হালকাভাবে ঘষে লোম তুলে নিন। এবারে ঠান্ডা পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন।
টেকনিক – ০৫
মধু ও লেবুর রস ভালোভাবে মিশিয়ে ঘন মিশ্রণ তৈরি করুন। পনের থেকে বিশ মিনিট লোমযুক্ত অংশে লাগিয়ে রাখুন। এবার একটি পরিষ্কার কাপড় হালকা গরম পানিতে ভিজিয়ে নিয়ে তা দিয়ে মিশ্রণটি পরিষ্কার করে ফেলুন এবং পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। যতক্ষণ পর্যন্ত পুরোপুরিভাবে লোম না যাচ্ছে এটি ব্যবহার করুণ।
টেকনিক – ০৬
মসুর ডাল সারারাত ভিজিয়ে রাখুন। সকালে আলু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পিষে নিন অথবা ব্লেন্ডারে ব্লেন্ড করে নিন। এতে কিছু পরিমানে মধু যোগ করে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মিশ্রণটি লোমযুক্ত স্থানে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। আলু এবং লেবুতে ব্লিচিংয়ের গুণ রয়েছে যা লোম দূরীকরণে খুবই কার্যকর।
টেকনিক – ০৭
কলা ভালো করে চটকে নিয়ে তাতে ওটমিল মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। এটি ঠোঁটের উপরের লোমে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে হালকা গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ওটমিলে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণ রয়েছে, যা ত্বকের জন্য উপকারী। শুধু তাই নয়, এটি ত্বককে এক্সফোলিয়েটও করে। এছাড়া এটি কেবল ত্বককে পরিষ্কার করে না, ত্বকে থাকা অবাঞ্ছিত লোমও দূর করতে পারে।
টেকনিক – ০৮
কাঁচা হলুদ বেটে নিন অথবা হলুদ গুড়ার সাথে পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। শুকিয়ে গেলে আলতো করে ঘষে ঘষে তুলে ফেলুন। লোম উঠে আসবে। এবার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। হলুদের রয়েছে অ্যান্টি-সেপটিক গুণ। এটি সহজেই ত্বকের অনাকাঙ্খিত লোম দূর করতে পারে।
টেকনিক – ০৯
আটা, দুধ ও হলুদ মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ঠোঁটের উপরে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে দিন। শুকিয়ে গেলে শুকনো কাপড় দিয়ে মুছে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। ভালো ফল পেতে চারদিন পরপর ব্যবহার করতে পারেন। ঠোঁটের উপরের লোম তুলতে এটি অন্যতম সেরা উপায়। এটি লোমের গোড়া আলগা করে দেয় এবং মাস্কটি তোলার সঙ্গে সঙ্গে লোমগুলোও উঠে আসে। এতে উপস্থিত ভিটামিন ত্বককে সুস্বাস্থ্যকর এবং উজ্জ্বল করতে সাহায্য করে।
টেকনিক – ১০
খোসাসহ কাঁচা পেপের সাথে আলু, হলুদ, মধু ও পানি মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে নিন। ঠোঁটের উপরের অংশের লোমে লাগিয়ে শুকিয়ে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করুন। শুকিয়ে গেলে আলতো হাতে স্ক্রাব করে নিন। এতে লোম উঠে আসবে। এরপর পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। পেঁপে পিম্পলসের সমস্যা কমায় এবং এর মধ্যে ব্লিচিং গুণও রয়েছে, যা ত্বকের উপর অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে সাহায্য করে। এছাড়াও এটি ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে।
ঠোঁটের উপরের লোম দূর করতে কখনো শেভ করবেন না। শেভ করলে লোমগুলি গোড়া থেকে নয়, ত্বকের উপর থেকে সরানো যায়। পরে এরা আরো মোটা এবং পুরু হয়ে বের হয়, যা মুখের সৌন্দর্য নষ্ট করে। তাই সৌন্দর্য ঠিক রাখতে নিশ্চিন্তে ব্যবহার করুন এই টেকনিকগুলো আর পান লোমহীন সুন্দর ত্বক।
মন্তব্য করুন