লম্বা, ঘন, ঝলমলে, স্বাস্থ্যোজ্জ্বল চুল সকলেরই পছন্দ। কিন্তু সমস্যা হলো চুল একটু বড় হতে না হতেই চুলের আগা ফেটে লাল আর পাতলা হয়ে যায়। তখন চুল বড় হলেও দেখতে ভালো লাগে না। আর আগা ফেটে যাওয়া চুলের বৃদ্ধিও কমে যায়। তাই না চাইলেও কদিন পরপরই ছেটে ছোট করে ফেলতে হয় চুল।
চুলের এই সমস্যা আসলে এক/দুই দিনে সৃষ্টি হয় না। দীর্ঘ দিনের অনিয়ম, অবহেলার ফলেই উৎপত্তি ঘটে এই সমস্যার। তাই নিয়মিত যদি যত্ন নেয়া যায় চুলের তাহলে আগা ফেটে যাবার এই সমস্যাকে বাই বাই বলা কোনো ব্যাপারই নয়। আজ আসুন জেনে নেই চুলের এই আগা ফেটে যাওয়া সমস্যার সমাধান কিভাবে করবেন।
১. মধুঃ
নানান গুণে গুণান্বিত মধু চুলের যত্নেও নাম্বার ওয়ান। মধুতে থাকা অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও অন্যান্য প্রাকৃতিক উপাদান ত্বকের পাশাপাশি চুলের জন্যেও দারুণ উপকারী। চুলের আগা ফেটে যাওয়া রোধ করতে মধুর বিকল্প নেই।
প্রতিদিন রাতে ঘুমাতে যাবার আগে আঙ্গুলে সামান্য মধু নিয়ে চুলের আগায় ম্যাসাজ করুন। এরপর চুলের আগায় নরম কাপড় পেচিয়ে শুয়ে পড়ুন। পরদিন ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত এক মাস এভাবে মধু ব্যবহার করলে আগা ফাটা দূর হবে।
রাতে মধু লাগিয়ে রাখতে না চাইলে গোসলের আগে মধু ও টক দইয়ের প্যাক বানিয়ে লাগাতে পারেন। মধু ও টক দইয়ের মিশ্রণ চুলের আগায় লাগিয়ে শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। আধ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন।
২. কলাঃ
কলায় রয়েছে প্রচুর পরিমানে আয়রন। কলা খেলে তো উপকার পাওয়া যায়ই, সেই সাথে চুলে মাখলেও উপকার পাওয়া যায়। শুষ্কতা বা রুক্ষতার কারনে অনেকের চুল পরে যায়। চুলের শুষ্ক ও রুক্ষ ভাব দূর করে চুলকে কন্ডিশনিং করে কলা।
একটি পাকা কলা চটকে নিন। এর সাথে সামান্য বাদাম তেল ও একটি ডিমের সাদা অংশ ভালোভাবে মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করুন। চুলের আগা থেকে ঘাড় পর্যন্ত লম্বা অংশটুকুতে প্রলেপ দেয়ার মত ভারী করে লাগিয়ে নিন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন।
পাকা কলা চটকে নিন। এর সাথে টক দই ও একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল মিশিয়ে পেস্ট করে নিন। এই পেস্ট চুলের গোড়াসহ লাগাতে পারবেন। চল্লিশ মিনিট থেকে এক ঘন্টা পর্যন্ত রেখে ধুয়ে ফেলুন।
৩. মরোক্কান অয়েলঃ
ভিটামিন ই, ওমেগা 3 ও ওমেগা 6 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ এই তেল চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে বেশ উপকারী। এটি চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জুগিয়ে চুলকে মজবুত ও নরম করে তোলে ফলে চুলের আগা ফাটে কম।
চুল শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে কন্ডিশনিং করে নিন। এবার ভিজে চুল তোয়ালে দিয়ে আলতো করে চিপে অতিরিক্ত পানি মুছে নিন। এবার চুল ভেজা থাকতে থাকতেই মরোক্কান অয়েল চুলের মাঝামাঝি অংশ থেকে আগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করুন। নিয়মিত ব্যবহারে আগা ফাটা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে।
৪. নারকেলের দুধঃ
চুলের জন্য নারকেল তেলের উপকারিতার কথা আমরা সবাই জানি। নারকেলের দুধও কিন্তু চুলের জন্য উপকারী। এটি চুলকে মজবুত করে। আগা ফাটার পাশাপাশি চুলের ভেঙ্গে যাবার প্রবণতা কমায়।
প্রথমেই নারকেল থেকে দুধ আলাদা করে নিন। এবার চুলের গোড়া থেকে আগা পর্যন্ত ম্যাসাজ করে করে এই টাটকা নারকেলের দুধটা লাগিয়ে ফেলুন। শাওয়ার ক্যাপ পরে নিন। এক থেকে দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করে ধুয়ে ফেলুন।
৫. অর্গান অয়েলঃ
চুলে তেলের ব্যবহার অপরিহার্য। অর্গান অয়েলও চুলের জন্য দরকারি তেলগুলোর একটি। ভিটামিন ই, ফ্যাটি অ্যাসিড, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ এই তেল চুলের আগা ফাটা রোধ করে। ভেজা চুলে লাগালে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
চুল প্রথমেই শ্যাম্পু দিয়ে ধুয়ে ফেলুন এবং কন্ডিশনিং করে নিন। চুলের পানি ঝরে গেলে ভেজা অবস্থায়ই চুলের আগায় অর্গান অয়েল ম্যাসাজ করুন।
আরো কিছু টিপসঃ
- চুলে হিটিং টুলস যত পারা যায় কম ব্যবহার করবেন। একান্তই যদি করতে হয় অর্গান অয়েল কিংবা অ্যালোভেরা জেল লাগিয়ে নেবেন। তাতে চুলের ক্ষতি কম হয়।
- গোসলের পর চুল গামছা বা তোয়ালে দিয়ে চিপবেন না বা ভেজা চুল ঝাড়বেন না। এতে চুলের আগা ফেটে যায়।
- চুলে জট বেশি লেগে গেলে তেল লাগিয়ে তারপর জট ছাড়াবেন।
মন্তব্য করুন