আপনি আপনার ছোট্ট সোনাকে স্নান করাতে নিয়ে যাচ্ছেন, আর তখনই দেখলেন ওর সারা গা লাল লাল র্যাশ ভরে গেছে। গরমের থেকেই তো হয়েছে এই র্যাশ। আপনি কী চিন্তায় পড়ে গেলেন বলুন তো! যদিও গরমের জন্য হওয়া এই র্যাশ খুব তাড়াতাড়ি চলে যায়, তাও যে ক’দিন থাকে সেই ক’দিন তো আপনার শিশুর খুবই কষ্ট হয়। কিন্তু এর জন্য ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার হয় না। আপনি ঘরে বসেই কিছু জিনিস ব্যবহার করে এই র্যাশের প্রভাব থেকে আপনার বাচ্চাকে বাঁচাতে পারবেন। তার জন্য শুধু আজকের আর্টিকেল পড়তে হবে।
হিট র্যাশ কী
হিট র্যাশ হল এক ধরণের র্যাশ। একে অনেক সময়ে মিলিরিয়াও বলা হয়। গরমকালে বা আবহাওয়া খুব আর্দ্র থাকলে শুধু বাচ্চাদের কেন, বড়দের মধ্যেও এই সমস্যা হয়। ত্বকের পোর্সের মুখ বন্ধ হয়ে যাওয়া এই র্যাশের প্রধান কারণ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মূলত ঘাড়ের কাছে এই র্যাশ হয়। তাছাড়া শরীরের সন্ধিস্থলে যেমন থাই, কুঁচকি, বগলেও হয় এই র্যাশ।
কত ধরণের হয় হিট র্যাশ
এই হিট র্যাশ নানা ধরণের হতে পারে। এতে র্যাশ দেখতে অন্য রকম হয় না। কিন্তু ফলাফল নানা রকম হতে পারে।
ক. মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনাঃ এটি খুবই কমন আর মাইল্ড ধরণের র্যাশ। এক্ষেত্রে মূলত সাদা সাদা ফোঁড়ার মতো হয় যার মধ্যে তরল পদার্থ থাকে। এই ফোঁড়া যখন ফেটে যায় তখন ব্যথা হয় না বা চুলকায়ও না। বড়দের থেকে শিশুদের মধ্যে এই র্যাশ বেশি হয়।
খ. মিলিয়ারিয়া রুব্রাঃ একে অনেক সময়ে ঘামাচির সঙ্গেও তুলনা করা হয়। এটি বড়দের বেশি হয়, যদিও ছোটদেরও হতে পারে। মিলিয়ারিয়া রুব্রা যেহেতু ত্বকের অনেক ভিতর থেকে হয়, তাই এটি মিলিয়ারিয়া ক্রিস্টালিনার থেকে বেশি কষ্ট দেয়। মিলিয়ারিয়া রুব্রা হলে লাল লাল ফোঁড়ার মতো হয়। খুব জ্বালা করে আর চুলকায়। আর এই র্যাশ হওয়া জায়গায় ঘাম কম হয়।
গ. মিলিয়ারিয়া প্রোফান্ডাঃ এটিও খুব কমন র্যাশের ধরণ। তবে তফাৎ হল, এটি হলে সারতে অনেক সময় লাগে আর বারে বারে ফিরে আসে। এটি স্কিনের ডার্মিস স্তরে অর্থাৎ বেশ গভীরে হয়। এগুলো মূলত বড়দেরই বেশি হয়। আকারে এই র্যাশ বেশ বড় হয় আর এটি খুব একটা বেশি ঘাম হতে দেয় না। ফলে ত্বকের বর্জ্য বেরোতে পারে না।
কেন হয় এই হিট র্যাশ শিশুদের
এই র্যাশ হওয়ার বড় কারণ হল বন্ধ হয়ে যাওয়া স্কিন পোর্স যার থেকে ঘাম বেরোতে পারে না। অনেকগুলি কারণে এটি হয়,
ক. খুব বেশি গরম হলে বা আর্দ্রতা থাকলে।
খ. হাল্কা কাপড় না পরা যার মধ্যে দিয়ে তাপ বেরোতে পারে।
গ. ভারী ক্রিমের ব্যবহার যা সহজে স্কিনে মেশে না।
ঘ. বাচ্চাদের অনেক কাপড় পরিয়ে রাখা যার মধ্যে দিয়ে তাপ বেরোতে পারে না।
কীভাবে সারাবেন
এবার আসুন জানা যাক কী কী প্রাকৃতিক উপায়ে আপনি ঘরে বসেই এই র্যাশ থেকে মুক্তি পেতে পারেন।
১. কোল্ড কমপ্রেস
কোল্ড কমপ্রেস সাধারণত যে জায়গায় র্যাশ হয়েছে সেই জায়গা ঠাণ্ডা করে। এর ফলে জ্বালা কম হয় আর তা বাড়তেও পারে না।
উপকরণঃ ১টি আইস প্যাক
পদ্ধতিঃ
ক. একটি কোল্ড কমপ্রেস বা একটি কাপড় ঠাণ্ডা জলে ডুবিয়ে রেখে দিন ওই র্যাশ হওয়া জায়গায়।
খ. কিছুক্ষণ রেখে তারপর তুলে নিন।
গ. এটি বেশ কয়েকবার করে যান দিনে।
কতবার করা উচিৎ
এটি দিনে ২ থেকে ৩ বার করা উচিৎ।
২. এসেনশিয়াল অয়েল
ক. টি ট্রি অয়েল
টি ট্রি অয়েলে আছে অ্যান্টি সেপটিক আর অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। এটি র্যাশ থেকে হওয়া লাল ভাব কমায়, সঙ্গে জ্বালাও কমায়।
উপকরণঃ ২ ফোঁটা টি ট্রি অয়েল, ২ চা চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
ক. টি ট্রি অয়েল আর নারকেল তেল একসঙ্গে মিশিয়ে নিন।
খ. এই মিশ্রণ ওই র্যাশ হওয়া জায়গায় ব্যবহার করুন।
গ. ৩০ মিনিট মতো রেখে দিন।
ঘ. এরপর ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
কতবার করা উচিৎ
এটি দিনে একবার করলেই উপকার পাওয়া যায়। তবে মনে রাখবেন ৬ মাসের কম বয়সী শিশুদের গায়ে এটি ব্যবহার করবেন না। আর সরাসরি এটি ব্যবহার করবেন না।
খ. ক্যামোমাইল অয়েল
এই তেলেও আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। তাই র্যাশ হলে এটিও সেই জায়গা ঠাণ্ডা করে আরাম দেয়।
উপকরণঃ ২ ফোঁটা ক্যামোমাইল অয়েল, ৩ চা চামচ নারকেল তেল।
পদ্ধতিঃ
ক. ক্যামোমাইল অয়েল আর নারকেল তেল নিয়ে ভালো করে মিশিয়ে নিন।
খ. এই মিশ্রণ ওই র্যাশ হওয়া জায়গায় ব্যবহার করুন।
গ. ২০ মিনিট রেখে ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
কতবার করা উচিৎ
উপকার পেতে আপনি এটি দিনে একবার করে করতে পারেন।
৩. শশা
শশার মধ্যে আছে ফ্লেভোনয়েড আর ট্যানিন, যা আসলে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটি শিশুদের ক্ষেত্রে র্যাশ থেকে হওয়া জ্বালা অনেকটা কমায়।
উপকরণঃ স্লাইস করা শশা
পদ্ধতিঃ
ক. শশা টুকরো টুকরো করে কেটে নিন।
খ. এই টুকরো এবার মিক্সিতে ভালো করে ব্লেন্ড করে নিন যাতে একটা ঘন পেস্ট হয়।
গ. এই পেস্ট এবার র্যাশ হওয়া জায়গায় লাগান।
ঘ. ১০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন।
কতবার করা উচিৎ
দিনে ৩ বার এটি আপনি করতেই পারেন।
৪. ওটমিল
ওটমিলের মধ্যেও আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা র্যাশ যেমন বেশি হতে দেয় না, তেমনই র্যাশের থেকে হওয়া চুলকানি কমায়।
উপকরণঃ ১ কাপ গুঁড়ো করা ওটমিল, জল।
পদ্ধতিঃ
ক. আপনার শিশুর বাথটব জল দিয়ে ভর্তি করুন।
খ. এর মধ্যে এবার ওটমিল গুঁড়ো দিয়ে দিন আর ভালো করে মেশান।
গ. এই জলে আপনার শিশুকে রেখে দিন ১৫ মিনিট।
ঘ. তারপর পরিষ্কার জল দিয়ে শরীর ধুয়ে শুকনো কাপড় দিয়ে গা মুছে নিন।
কতবার করা উচিৎ
ভালো ফল পাওয়ার জন্য এটি দিনে একবার করলেই হবে।
৫. মুলতানি মাটি
মুলতানি মাটি খুব ঠাণ্ডা হয় আর শরীর ঠাণ্ডা রাখতে সাহায্য করে। তাই এটি ব্যবহার করলে র্যাশের প্রদাহ কমে।
উপকরণঃ ১/২ টেবিল চামচ মুলতানি মাটি, জল
পদ্ধতিঃ
ক. জলে মুলতানি মাটি মিশিয়ে নিন ভালো করে।
খ. এই মিশ্রণ এবার র্যাশের উপর লাগান।
গ. ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
ঘ. ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
কতবার করা উচিৎ
২ থেকে ৩ দিন পর পর এটি করতে পারেন।
৬. অ্যালোভেরা
অ্যালোভেরা ত্বকের জন্য যে কত ভালো সেটা তো নতুন করে বলার নয়। এটিও কিন্তু একটি অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান। তাই র্যাশ হলে এটি ব্যবহার করুন।
উপকরণঃ অ্যালোভেরা জেল
পদ্ধতিঃ
ক. বাড়িতে গাছ থাকলে সেখান থেকে জেল নিয়ে নিন বা দোকান থেকে ভালো ব্র্যান্ডের কিনে নিন।
খ. ১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন।
গ. ঠাণ্ডা জল দিয়ে ধুয়ে নিন।
কতবার করা উচিৎ
ভালো উপকার পাওয়ার জন্য এটি দিনে একবার করুন।
অতিরিক্ত কিছু সতর্কীকরণ
কিছু বিষয় আপনাকে মাথায় রাখতে হবে র্যাশ থেকে আপনার সন্তানকে দূরে রাখতে হলে।
ক. আপনার শিশুকে প্রখর সূর্যের রোদ থেকে দূরে রাখুন।
খ. গরমের সময়ে আপনার বাচ্চাকে পারলে এয়ার কন্ডিশন ঘরে রাখুন।
গ. গরমে সব সময়ে হাল্কা কাপড় পরান।
ঘ. বাচ্চার ঘাড়, গলা, বগল ঠাণ্ডা জল দিয়ে মুছিয়ে দেবেন।
ঙ. আপনার বাচ্চার গায়ে কোনও ভারী ক্রিম ব্যবহার করবেন না।
সানস্ক্রিন যারা ব্যবহার করেন তারা সানস্ক্রিনের সাইড এফেক্ট সম্বন্ধে জানুন
মন্তব্য করুন