শীত শেষ হয়ে যাচ্ছে বলে লিপ বামের ব্যবহার কমিয়ে দেবেন, তা কিন্তু হবে না। ঋতু পরিবর্তনের সাথে সাথে আবহাওয়ার পরিবর্তন হয়, যা ঠোঁটে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। আবার গরমের সময় সূর্যের তাপে ঠোঁটের ন্যাচারাল ময়েশ্চারাইজার শুকিয়েও ঠোঁট ফেটে যেতে পারে। তাই সবসময় লিপ বাম ব্যবহার করা বাঞ্ছনীয়।
কিন্তু সবসময় লিপ বাম বা চ্যাপস্টিক ব্যবহার করলে ঠোঁট ফাটা রোধ সম্ভব না-ও হতে পারে। তাই শীত শেষে ঠোঁট ফাটা আটকানোর ঘরোয়া উপায় ট্রাই করুন আজই। এতে যেকোন ঋতুতে ঠোঁট থাকবে নরম ও তুলতুলে। তো দেরি না করে চটজলদি পড়ে ফেলুন ঘরোয়া উপায়গুলো।

নারিকেল তেলঃ
নারিকেল তেল ত্বক ও চুলের পাশাপাশি আপনার ঠোঁটকেও রাখবে নরম, কোমল, শীতের দিনে এবং শীত শেষ হয়ে গেলেও। অনেকেই নারিকেল তেল মেখে থাকেন লিপবামের বদলে, আপনিও ট্রাই করে দেখতে পারেন। প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে ১-২ ফোঁটা নারিকেল তেল ঠোঁটে মেখে নিবেন। এর ফ্যাটি অ্যাসিড ঠোঁটের শুষ্কতা দূর করবে।
অলিভ অয়েলঃ
নারিকেল তেলের মতো অলিভ অয়েলও প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে পরিচিত। এর ময়েশ্চারাইজিং প্রোপার্টিজ এবং ফ্যাটি অ্যাসিড ঠোঁট ফাটা ও শুকিয়ে যাওয়া রোধ করবে। দিনে দুইবার ঠোঁটে শুধু অলিভ অয়েল মাখতে পারেন বা এর সাথে চিনি মিশিয়ে লিপ স্ক্রাব বানিয়ে ব্যবহার করতে পারেন।
অ্যালোভেরাঃ
কখনো কি ফাটা ঠোঁটে অ্যালোভেরার রস ব্যবহার করে দেখেছেন? না করে থাকলে আজই ট্রাই করে দেখুন। এই রস ব্যবহারে ঠোঁট সহজে শুকিয়ে যাবেনা। অ্যালোভেরাতে আছে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান যা ফাটা ঠোঁটে সুদিং ইফেক্ট এনে দিবে। তাই কয়েক ফোঁটা খাঁটি অ্যালোভেরার রস প্রতিদিন ঠোঁটে ব্যবহার করবেন। তবে সাবধান, পেটে যেন না যায়।
ঘিঃ
ঘি-তে আছে প্রচুর পরিমাণে ফসফোলিপিড, যা শুষ্ক ঠোঁটকে ময়েশ্চারাইজ করে নরম ও গোলাপি রাখবে। এক ফোঁটা ঘি আঙুলে নিয়ে ঠোঁটে দুই মিনিট মাসাজ করে লাগিয়ে রাখুন, কাজ হয়ে যাবে। সারারাত ঠোঁটে ঘি মেখে রাখলে আরো ভালো ফল পাবেন।
গোলাপের পাপড়িঃ
গোলাপের পাপড়ি ব্যবহারে শুধু ঠোঁট ফাটা কমবে না, ঠোঁটের কালো দাগ দূর হয়ে ঠোঁট দেখাবে ন্যাচারালি গোলাপি। ন্যাচারাল অয়েলে ভরপুর গোলাপ দিয়ে মাস্ক বানিয়ে ঠোঁটে মাখলে ঠোঁট নরম, তুলতুলে, ও মসৃণ হবে। পাপড়ি বেটে পরিমাণমতো কাঁচা দুধে বা দুধের সরে ডুবিয়ে রাখুন কিছুক্ষণ, তারপর এই পেস্ট ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন ১০-১৫ মিনিট। প্রতিদিন অন্তত দুইবার এই পেস্ট ব্যবহার করতে হবে।
লিপ স্ক্রাবঃ
মাঝেমধ্যে লিপ স্ক্রাবিং করলে ঠোঁটের মরা কোষ দূর হয়, ফলে ঠোঁট নিষ্প্রাণ দেখায় না। ফাটা ঠোঁটে লিপ স্ক্রাব ব্যবহার করলে ঠোঁট ময়েশ্চারাইজড থাকবে সবসময়। ২ চা চামচ কোকো পাউডার, ৩ চা চামচ চিনি, আধা চা চামচ মধু, এবং আধা চা চামচ অলিভ অয়েল একসাথে মিশিয়ে হালকা হাতে ঠোঁটকে এক্সফোলিয়েট করুন। চিনি প্রাকৃতিক এক্সফোলিয়েটর হিসেবে দারুণ কাজ করে। নিয়মিত এক্সফোলিয়েট করলে ঠোঁটে মৃত কোষ জমে থাকতে পারে না, ফলে লিপ বাম বা মাস্ক সহজে প্রবেশ করতে পারে।
জলঃ
পর্যাপ্ত পানি পানে রক্ত পরিষ্কার হয় এবং শরীর হাইড্রেটেড থাকে, কিন্তু এতে যে ঠোঁটেরও উপকার হয় সেটা জানেন কি? দৈনিক ৮-১০ গ্লাস পানি খেলে ঠোঁট নরম এবং আর্দ্র থাকবে। ডিহাইড্রেশনের ফলে ঠোঁটে কালচে দাগ পড়ে যা একমাত্র পানি দ্বারাই সহজে দূর করা সম্ভব।
পুষ্টিকর খাদ্যঃ
প্রতিদিনের ডায়েটে পুষ্টিকর খাদ্য রাখবেন, তাতে শরীরের সাথে সাথে ঠোঁটও সুস্থ থাকবে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, সবুজ রঙের শাকসবজি, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণে ঠোঁট নরম থাকবে সারাবছর।
বদঅভ্যাস পরিত্যাগঃ
অনেক সময় বদঅভ্যাসের কারণে সুস্থ ঠোঁট ফেটে চৌচির হয়ে যেতে পারে। আমরা প্রায়সময়ই আমাদের রুক্ষ, শুষ্ক ঠোঁটকে জিভ দিয়ে ভিজিয়ে থাকি তাৎক্ষণিকভাবে নরম রাখার জন্য। ঘন ঘন জিভ দিয়ে ঠোঁট ভেজালে রুক্ষ ঠোঁট আরও রুক্ষ হয়ে ফেটে যায়। এমনকি চামড়া উঠে রক্তপাত পর্যন্ত হতে পারে। আবার অনেকে ঠোঁটের মরা চামড়া টেনে তুলে ফেলে, যা ঠোঁটের ক্ষতি করতে পারে। তাই এসব বদঅভ্যাস পরিত্যাগ করা উচিত যত দ্রুত সম্ভব। তাতে সারাবছর জুড়ে ঠোঁট স্বাভাবিক থাকবে।
মন্তব্য করুন