মধু এমন এক ভেষজগুণ সম্পন্ন ঔষধি যার উপকারিতার শেষ নেই। প্রতিদিনের জীবনে হেঁসেল থেকে বিউটিচর্চায় সবেতেই লাগে এই দরকারি জিনিসটি। আগে তো কাটা ছেঁড়ায় মধু লাগানোর রীতিই ছিল।
পিরামিডে মমি সংরক্ষণ এর কাজেও লাগানো হতো মধু কারণ এটি সহজে নষ্ট হয়না বলে। ভেজাল জিনিসের ছড়াছড়ি বাজার ময়। ভেজাল জিনিস সহজে বোঝার উপায় কম! বর্তমানে বাজারজাত ও প্রক্রিয়াজাত জিনিস এর রমরমা বাড়ায় এই মধু আসল না নকল সেটা চিনতেও পড়তে হয় বিপাকে। তাই আপনাদের কাছে রইলো সহজ কয়েকটি খাঁটি মধু সনাক্ত করার উপায়।
১. জলের পরীক্ষা:
- প্রকৃতপক্ষে সঠিক মধু চিনতে হলে মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহের সময় উপস্থিত থাকতে হয়। কিন্তু সেটা তো সবার পক্ষে সম্ভব হয়না।
- প্রথমে এক গ্লাস সামান্য উষ্ণ জল নিন এবং তাতে এক চামচ মধু মিশিয়ে নাড়াতে থাকুন।
- যদি মধু খাঁটি হয় তবে তা ছোট ছোট মণ্ড বা দানার আকারে গ্লাসের নীচে জমা হয়ে অধঃক্ষেপ ফেলবে।
- যদি মধু নকল হয় তবে তা সহজেই জলে মিশে যাবে।
২. থাম্ব টেস্ট:
- কথায় বলে লবডঙ্কা কিন্তু আপনার বুড়ো আঙুল মধু চেনায় বিশাল ভাবে সাহায্যের হাতিয়ার হতে পারে।
- কিছুটা মধু নিয়ে হাতের বুড়ো আঙুলে রাখুন এবং লক্ষ করুন।
- যদি ভেজাল হয় মধু তবে তা আঙ্গুল বেয়ে নীচে নেমে চারিদিকে ছড়িয়ে যাবে।
- অপরপক্ষে আসল মধু ঘন ও শক্তভাবে আপনার আঙ্গুল আঁকড়ে জমাট বেঁধে বসে থাকবে।
- যদি উল্টোদিক থেকে আঙ্গুল কাত করেন দেখবেন আসল মধু ফোঁটার আকারে ওতো সহজে ঝরে পড়বেনা।
৩. ফায়ার টেস্ট:
- আগুন নিয়ে খেলা! সত্যি ঘাবড়ে যাবার মতো কথা।কিন্তু চিন্তা করবেন না এটা আহামরি কিছুই নয় আপনিও বাড়িতে সহজেই করতে পারবেন।
- মনে রাখবেন আসল মধু কিন্তু উত্তম দহন সাপেক্ষ। তাই আসল মধুতে আগুন ধরালে তা জ্বলতে বাধ্য।
- একটি দেশলাই কাঠি নিন এবং তার আগাটা মধু তে চুবিয়ে নিয়ে ম্যাচবক্সে আঘাত করুন। দেখবেন দাউদাউ করে শিখা জ্বলে উঠবে।
- নকল মধুর ক্ষেত্রে এমনটা ঘটবেনা।
৪.ক্লোথ টেস্ট:
- অনেকেরই নিশ্চই সাদা জামাকাপড় পরতে বেশ ভালো লাগে। এবার সেটাই আপনার মধু চেনার কাজেও লাগবে।
- একটা সাদা কাপড় নিয়ে তাতে একফোঁটা মধু ফেলুন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করুন।
- মধু নির্ভেজাল হলে কাপড় সেটা চট করে শোষণ করবেনা, বিপরীতক্রমে ভেজাল মধু সহজেই কাপড়ে মিশে যাবে।
- এবার কাপড়টি ধুয়ে ফেলুন। দেখবেন আসল মধু হলে কাপড়ে একফোঁটা কোনো স্টেন বা দাগ থাকবেনা কিন্তু নকল হলে তাতে দাগ লেগে থাকবে।
৫. জমাট বাঁধার পরীক্ষা:
- কথিত আছে আসল মধু কোন অবস্থাতেই নাকি জমাট বাঁধেনা। এটাও ট্রাই করে তাই দেখতেই পারেন।
- মধু নিয়ে ফ্রিজে কিছুক্ষণ রেখে দিন।
- তারপর সেটা বের করে নিয়ে এসে দেখুন।
- আসল মধু কিছুতেই জমাট বাঁধবেনা কিন্তু কৃত্রিমভাবে ভাবে তৈরি মধু হয় জমাট বাঁধবে নয়তো তার তলায় দানা পাকিয়ে যাবে।
৬. পিঁপড়ে যখন নির্ধারক:
- এই পয়েন্টটা শুনে অনেকেই ভাবছেন যে মস্করা করছি।কিন্তু একদম তা নয়।আসল মধু পিঁপড়েরা ছোঁয় না কারণ এতে ২০% এর কম ময়েশ্চার থাকে।
- শিশি থেকে কিছুটা মধু নিয়ে সেটা কাগজ বা যেকোনো পাত্রে লাগিয়ে নিন।
- এবার যেখানে পিঁপড়ে থাকে সেই জায়গায় ওটা ছেড়ে আসুন।
- যদি মধু আসল হয় তবে সেই মধু পিঁপড়েরা মাড়াবেনা।
৭. টেম্পারেচার টেস্ট:
- কিছুটা মধু পাত্রে নিয়ে তা মডারেট তাপমাত্রায় গরম করুন।
- উত্তাপ দিলে আসল মধু কনডেন্সড ক্যারামেল এর মত চটচটে হয়ে যাবে ও ফাটতে দেখা দেবে।
- অপরদিকে মধু নকল হলে তার মধ্যে বাষ্প ঢুকে তা থেকে বুদবুদ গাঁজিয়ে উঠবে।
৮. ভিনিগার টেস্ট:
- এটি অনেকটা রাসায়নিক পরীক্ষার মতোই কিন্তু খুবই কার্যকরী।
- প্রথমে কিছুটা মধু সাধারণ জলে ভালো করে গুলে নিন।
- এবার সেই মিশ্রনে এক চামচ মতো ভিনিগার এড করে দিন।
- আসল মধু হলে এর কোনো প্রভাব দেখতে পাবেন না কিন্তু নকল হলে দেখবেন সেই দ্রবণ থেকে ফেনা বেরিয়ে তার রং ঘোলাটে হয়ে আসবে।
৯. মাছির পরীক্ষা:
- এটা বহুকালের আদি ও অকৃত্রিম পদ্ধতি।
- কিছুটা মধু নিয়ে তা যেকোনো পাত্রে রেখে দিন। যদি মধু খাঁটি হয় তবে তাতে মাছি কিছুতেই আটকাবে না কারণ এটার উপাদান এতটাই স্বচ্ছ থাকে বলে।
- নকল মধুতে মাছির পা বা ডানা আটকে যাবে।
১০. স্বাদ ও গন্ধ:
- আসল মধু স্বাদে ও গন্ধে অতুলনীয়।এটির ঘনত্ব ও অনেক বেশি হয়।এবং দেখতে ঈষৎ হলদেটে বর্ণের হয়ে থাকে।
- আসল মধুতে কোনো উগ্র ঝাঁঝালো গন্ধ থাকেনা এবং স্বাদে হয় কোমল মিষ্টি।
- নকল মধুতে একটা কটু গন্ধের আভাস পাবেন ও তার মধ্যে গা গোলানো মিষ্টি স্বাদ থাকে।
মন্তব্য করুন