কারো লম্বা, ঘন কালো চুল দেখলে নিশ্চয়ই আপনি আনমনে হিংসায় ভোগেন আর ভাবেন ‘ইশশ আমার চুল যদি এমন সুন্দর হতো’! কমবেশি প্রায় সবাই চুল পড়ার সমস্যায় ভুগে থাকেন। অনবরত চুল পড়তে থাকলে মাথা প্রায় টাক হয়ে যাবার মতো অবস্থা হয়, যা খুবই বিব্রতকর। পাতলা চুলের গোছায় কোন হেয়ারস্টাইল করলেও বিশ্রী দেখায়।
ভালো মানের শ্যাম্পু আর নিয়মিত তেল মাসাজ করলেও যে চুল তড়তড়িয়ে বেড়ে উঠবে তার কিন্তু কোন গ্যারান্টি নেই। যদি অল্প সময়ে মনের মতো চুলের বৃদ্ধি চান, তাহলে ঘরেই তৈরি করুন এই একটি হার্বাল টোনার এবং কন্ডিশনার।
চুলের বৃদ্ধিতে হার্বাল টোনারঃ
হার্বাল হেয়ার টোনার চুলের স্বাভাবিক রং ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে। পাকা চুলের সমস্যায় কলপ ব্যবহার না করে হেয়ার টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে কালো চুল এতটাই উজ্জ্বল হবে যে সাদা চুলগুলো ঢাকা পড়ে যাবে। এমনকি আপনার কালার করা চুল যদি ফিকে হতে শুরু করে, হেয়ার টোনার ব্যবহার করে সহজেই হেয়ার কালারের উজ্জ্বলতা ফেরাতে পারবেন।
চুলের উজ্জ্বলতা ফেরানোর পাশাপাশি টোনার কিন্তু চুল লম্বাও করতে পারে, সেটা কি জানেন? না জেনে থাকলে জেনে নিন চাল-মেথির হেয়ার টোনার কিভাবে চুলের বৃদ্ধি আশানুরূপ করতে সাহায্য করবে।
চাল-মেথির হেয়ার টোনারঃ
কি কি লাগবেঃ
- ভাতের চাল – ১ মুঠো
- মেথি দানা – ২ চা চামচ
- তুলসীপাতা – ৭-৮ টি
- পানি – ২ কাপ
- গোলাপের পাপড়ি – ১০-১২ টি (চাইলে পাপড়ির বদলে ১ টেবিল চামচ গোলাপের পাউডারও ব্যবহার করতে পারেন)
- কালোকেশী পাতা – ৫-৬ টি
কিভাবে ব্যবহার করবেনঃ
- টোনারটি বানানোর জন্য চাল ধোয়ার প্রয়োজন নেই, একটি পরিষ্কার সুতি কাপড় দিয়ে চালটা মুছে পরিষ্কার করলেই হবে। প্রথমে একটি সসপ্যানে চাল, মেথি দানা, তুলসীপাতা, এবং পানি একসাথে মিশিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। মৃদু আঁচে নাড়তে থাকুন, কয়েকটি বলক আসলে গোলাপের পাপড়ি আর কালোকেশী পাতা দিয়ে দিন।
- মিশ্রণটি এবার মাঝারি আঁচে ১০ মিনিট জ্বাল দিন। চুলা অফ করে টোনারটি ঠান্ডা করুন এবং ছেঁকে নিন। তারপর এটি স্প্রে বোতলে ঢেলে গোসলের ৪০-৪৫ মিনিট আগে শুধু স্ক্যাল্পে ভালো করে স্প্রে করে নিন। তারপর গোসলের সময় শ্যাম্পু করে ফেলবেন।
- সপ্তাহে দুইবার ব্যবহারে চুল পড়া বন্ধ হবে এবং চুল হবে দ্বিগুণ লম্বা। শুষ্ক চুলের অধিকারীরা টোনারটিতে ১ চা চামচ নারিকেল তেল মিশিয়ে ব্যবহার করবেন।
কেন এই হেয়ার টোনারটি ব্যবহার করবেনঃ
- চুলের বৃদ্ধি ও উজ্জ্বলতা নিশ্চিত করতে চাল ধোয়া পানির কোন বিকল্প নেই। চালের পানিতে প্রচুর অ্যামিনো অ্যাসিড থাকে যা চুলের গোড়া শক্ত ও মজবুত করে।
- মেথিতে থাকা আয়রন ও প্রোটিন অকালে চুল পড়া ও চুলের ভেঙে যাওয়া রোধ করে।
- মেথির মতো তুলসীতেও আছে আয়রন, প্রোটিন, এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন যা চুল পড়া রোধ করে।
- গোলাপের আঠালো উপাদান, ফ্ল্যাভোনয়েড, এবং ভিটামিন স্ক্যাল্প পরিষ্কার রাখে, স্ক্যাল্পের পোর স্বাভাবিক রাখে, চুলের আর্দ্রতা ধরে রাখে, চুল ভেঙে যাওয়া কমায়, ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়, নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে, এবং চুল শাইনি করে তোলে।
- চুল লম্বা করার জন্য কালোকেশী পাতা অব্যর্থ একটি উপাদান যা একদমই স্কিপ করতে পারবেন না। এটি ব্যবহারে চুল ভেঙে যাওয়া ও ঝরে পড়া বন্ধ হয়, চুল লম্বা এবং ঘন কালো হয়।
চুলের বৃদ্ধিতে হার্বাল কন্ডিশনারঃ
কন্ডিশনার চুলের হাজারটা সমস্যার চমৎকার সমাধান করে। আর যদি সেটা হয় হার্বাল কন্ডিশনার, তাহলে তো কথাই নেই। শুধু শ্যাম্পু করলেও চুলে জট লেগে ছিঁড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আবার চুলের ডগা ফেটে গেলে চুল দেখাবে নিষ্প্রাণ। হার্বাল কন্ডিশনার আপনার চুলকে মোলায়েম, জটমুক্ত, এবং উজ্জ্বল করে তুলবে। আবার দূষণের কারণে চুলের যেসব ক্ষতি হয়, কন্ডিশনার সেসব ক্ষতি থেকে চুলকে বাঁচিয়ে রাখে।
চাল-মেথির টোনার আপনার চুলকে টোনিংয়ের সাথে সাথে ডিপ কন্ডিশনিংও করবে। তবু যদি টোনার ব্যবহার করতে না চান তাহলে কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন। বিভিন্ন রকমের তেল, মধু, ডিম দিয়ে হারবাল কন্ডিশনার বানাতে পারেন। এখানে ডিম ও ভিনেগারের কন্ডিশনারের রেসিপি ও ব্যবহারবিধি দিলাম।
ডিম-ভিনেগারের কন্ডিশনারঃ
কি কি লাগবেঃ
- ডিমের কুসুম – ২-৩ টি
- হোয়াইট ভিনেগার – ১ টেবিল চামচ
- লেবুর রস – ২ চা চামচ
- অলিভ অয়েল – আধা চা চামচ
- মধু – ১ টেবিল চামচ
কিভাবে ব্যবহার করবেঃ
সব উপকরণ ব্লেন্ডারে ঢেলে ব্লেন্ড করে ঘন থকথকে একটি পেস্ট বানিয়ে নিন। তারপর এই পেস্ট শ্যাম্পু করা চুলের মাঝখান থেকে ডগা পর্যন্ত ১০-১৫ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। তারপর পানিতে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই কন্ডিশনার প্রতিদিন ব্যবহার করতে পারবেন। তবে একটা কথা বলে রাখা ভাল, যেহেতু কন্ডিশনারে ডিম আছে সেহেতু এটা চুলে বাজে গন্ধের সৃষ্টি করতে পারে।
তাই প্রতিদিন ব্যবহারের চাইতে সপ্তাহে দুইবার ব্যবহার করলে ভালো হয়। আর ব্যবহারের পরে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলবেন যাতে ডিমের গন্ধ না থাকে। প্রয়োজনে পুনরায় নরমাল কন্ডিশনার ব্যবহার করতে পারেন গন্ধ কমানোর জন্য।
কেন এই কন্ডিশনারটি ব্যবহার করবেঃ
ডিমের লেসিথিন চুলকে নরম ও উজ্জ্বল করে। অলিভ অয়েল চুলকে স্ট্রং বানায়। মধু চুলকে সবসময় হাইডেট্রেড রাখে। ভিনেগার উকুন, খুশকিসহ স্ক্যাল্পের অন্যান্য সমস্যা কমায়, তাই চুল পড়া কমে। লেবুর পুষ্টি উপাদান চুল ফাটা কমায়।
মন্তব্য করুন