বাঙালির তো বারো মাসে তেরো পার্বণ লেগেই আছে। সেইরকমই এক বড় পার্বণ হল দোল উৎসব। চারিদিকে কোকিলের মিষ্টি ডাক, সোনালী রোদ, রবীন্দ্রসঙ্গীত ও নানারঙে বসন্ত যেন রঙিন করে দেয় চারিদিক। সেই দোল উৎসব তো চলে এলো বলে। এমন রঙিন উৎসবকে কি উপেক্ষা করা যায়? কিন্তু চুল, স্কিনের কি হবে?
একেই তো চুল পড়ছে, আবার মুখে ব্রন, রাশের মত হাজার সমস্যা লেগেই আছে। এটাই ভাবেছেন তো? এইসব সমস্যার জন্য কি আপনার দোল খেলা মাটি হয়ে যাবে? একদমই না, যদি একটু সাবধানতা মেনে রঙ খেলতে পারেন তাহলেই হল। তাইতো আজ শেয়ার করছি দোলের আগে কীভাবে তৈরি রাখবেন নিজের স্কিন ও চুলকে।
রঙ খেলতে যাবার আগের টিপসঃ
কান বাঁচাতে
কানের ভেতর রঙ চলে গেলে কিন্তু মুশকিল। পরিষ্কার করাও যেমন ঝামেলার তেমনই কানের ভেতরে রঙ চলে গেলে সেটা ক্ষতিকর। তাই অল্প তুলো গুঁজে রঙ খেলতে পারেন। এতে সবদিক রক্ষা পাবে।
চোখ বাঁচাতে
চোখের ভেতর রঙ চলে গেলে তো খুবই সমস্যা। চোখের জন্য ভীষণ ক্ষতিকর। তাই যাবার আগে চোখে দুফোঁটা গোলাপ জল দিয়ে দিতে পারেন। এছাড়া গোলাপজল তুলোয় করে নিয়ে সেটা চোখের ওপর দিয়ে রাখুন মিনিট দশেক। এতে রঙ চোখে চলে গেলেও চোখ জ্বালা করবে না। তবে সবচেয়ে ভালো চশমা পরে রঙ খেলতে যাওয়া। এতে স্টাইলও হল আবার চোখও বাঁচল।
নখ বাঁচাতে
নখে রঙ লাগলে যেন উঠতেই চায় না। তাই কোন ডার্ক শেডের নেলপলিশ মোটা করে পরে নিন। এতে রঙ নখে বসবে না। কিন্তু এতে তো নখের ওপরের দিকটা বাঁচল ভেতরের দিকটা? নখের ভেতরে রঙ লাগলে আরও সমস্যা বিশেষত ডান হাতে। সহজে রঙ উঠতে তো চায়ই না উল্টে খাবার সময়ে খুব সমস্যা হয়। এরজন্য ভ্যাসলিন জেলি নিয়ে নখের ভেতরে ও বাইরে লাগিয়ে খেলতে যান। এবং খেলার পরও ভ্যাসলিন দিয়ে রঙ তুলে নিন।
শরীর যতটা সম্ভব ঢেকে রাখার চেষ্টা করুণ
যতটা সম্ভব ঢাকা পোশাক পরে রঙ খেলতে যাবার চেষ্টা করুণ। ফুল স্লীভ কিছু পরে খেলতে যান। মানে যতটা সম্ভব স্কিনে যাতে রঙটা কম লাগে। সুতির কাপড় পড়াই ভালো নাহলে স্কিনে সমস্যা হতে পারে। কিন্তু পুরো শরীর তো ঢাকা সম্ভব নয় তাহলে? এর উপায় হল তেল। পুরো শরীরে তেল মেখে নিন সেটা যেকোনো তেল নারকেল বা অলিভ। আর যদি মনে হয় কেউ আপনাকে রঙ মাখিয়ে ভূত করতে পারে, তাহলে নারকেল তেলের সাথে ক্যাস্টর ওয়েল মিশিয়ে নিন। ক্যাস্টর ওয়েল পিচ্ছিল হয় তাই রঙ সহজেই উঠে যাবে।
মুখ বাঁচাতে
শরীরে যে তেলটা মাখবেন সেটা অবশ্যই মুখে যাবে না। কারণ মুখ ও শরীরের স্কিন আলাদা। তাই অবশ্যই আলাদা ভাবে যত্ন নিতে হবে। যাবার আগে মুখে একটু টকদই নিয়ে ম্যাসাজ করে নিন। এতে স্কিন ময়েশ্চারাইজড থাকবে এবং রঙও বসবে না। কিংবা মিল্ক ক্রিম নিয়ে তাতে একটু হলুদ মিশিয়েও লাগাতে পারেন।
চুল বাঁচাতে
একেই তো চুল পড়ছে আবার সাথে খুশকি নিত্য দিনের সঙ্গী। এর ওপর কেমিক্যাল যুক্ত রঙ চুলের তো পুরো তেরোটা বাজিয়ে দেবে। তাই চুল বাঁচাতে কি করবেন? আগেরদিন রাতে তেল ম্যাসাজ করে রাখতে পারেন। এতে চুলে রঙ লাগলেও সহজে উঠে যাবে। শ্যাম্পু করে তো একদমই রঙ খেলতে যাবেন না। রঙ স্ক্যাল্পে বসে যাবে। চুলেরও ক্ষতি। এছাড়াও চুল টাইট করে খোঁপা করে নিন। যাতে যতটা সম্ভব চুল বাঁচে।
রঙ খেলার সময়
মুখে রঙ লাগলে বার বার হাত ঘষে ঘষে রঙ তোলার চেষ্টা করার দরকার নেই। এতে রঙ স্কিনের ভেতর আরও বেশী ঢুকে যাবে। স্কিন ড্রাই হয়ে যাবে। একান্তই রঙ তুলতে হলে, টিস্যু পেপার ভিজিয়ে নিয়ে হালকা করে তুলতে পারেন। তবে চাপ দেবেন না।
রঙ খেলার পরের টিপসঃ
কীভাবে করবেন মুখ পরিষ্কার
বাড়ি এসে তাড়াতাড়ি একদম নয়। এসেই চাপ দিয়ে মুখ ঘষবেন না। ফেসওয়াশ দিয়ে হালকা হাতে রঙ তুলুন। মুখে কখনো চাপ দেওয়া ঠিক নয়। আর স্ক্রাব করারও দরকার নেই। অলরেডি স্কিনে অনেক ঘষাঘষি অত্যাচার হয়েছে তাই আবার স্ক্রাবিং স্কিন এই মুহূর্তে নিতে পারবে না। ফেসওয়াশ হলেই চলবে। এক্ষেত্রে চারকোল ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন। চারকোল সমস্ত জমে থাকা ময়লা, তেল টেনে বার করে দেয়। ক্লিনজিং মিল্কও চলতে পারে তারপর রোজের মত টোনিং, ময়েশ্চারাইজিং।
হাত পায়ের দিকেও মন দিন
হাত পা পরিষ্কার করার সময়েও খুব বেশী চাপ দিয়ে না ঘষাই ভালো। ওটা আপনার স্কিন কাপড় নয় যে ঘষে ঘষে দাগ তুলতে হবে। তাই হালকা হাতে করুণ। স্নানের পর কিন্তু ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন।
শ্যাম্পু করা মাস্ট
শ্যাম্পু তো করতেই হবে বাড়ি এসে। চুল কিন্তু খুব রুক্ষ হয়ে যায়। তাই হেয়ার মাস্ক ভীষণ ভালো চুলকে ময়েশ্চার দিতে। কিন্তু বাড়ি ফিরে সময় কই হেয়ার মাস্ক তৈরি করার? কিচ্ছু না, জাস্ট দই নিয়ে চুলের নীচের অংশে লাগিয়ে রাখুন ১০ মিনিট। তারপর জল দিয়ে ধুয়ে নিন। এতে চুল তার হারানো ময়েশ্চার ফিরে পাবে।
আরও কিছু টিপস মাথায় রাখুন
- দোল খেলতে যাবার আগে অবশ্যই সানস্ক্রিন মাখতে হবে। বেরোবার মিনিট ১৫ আগে সানস্ক্রিন মেখে নিন।
- স্কিন খুব ড্রাই হলে সানস্ক্রিন মাখার কিচ্ছুক্ষণ পরে ময়েশ্চারাইজার মেখে নিন। এতে স্কিন আরও শুকিয়ে যাবে না। এটা সবাই করতে পারেন।
- ঠোঁটকে অবহেলা করলে কি চলে? তাই যাবার আগে লিপবাম লাগিয়ে নিন।
- চোখের চারপাশেও তেল বা ময়েশ্চারাইজার দেবেন। যাতে রঙ তোলার সময় খুব বেশী ঘষতে না হয়।
- চোখে রঙ ঢুকে গেলে কোন মতেই চোখ কচলানো যাবে না। ঠাণ্ডা জলে চোখ ধুয়ে নিন।
- রঙ খেলতে যাবার আগে চুলে সিরামও লাগিয়ে যেতে পারেন এতেও চুল কিছুটা রক্ষা পাবে।
মন্তব্য করুন