বিগত কয়েক বছরে ওয়েব সিরিজ ব্যাপারটি কিন্তু বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে আমাদের মধ্যে। নেটফ্লিক্স, হটস্টার,আমাজন প্রাইম ভিডিও থেকে শুরু করে আমাদের বাংলা হইচই, ওয়েব সিরিজের নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট দেখে কিন্তু আমরা মুগ্ধ।
বিষয়, টেকনিক, অভিনয় সব দিক থেকে অনন্য ওয়েব সিরিজগুলো। আর পরিচালকেরাও এখন ওয়েব সিরিজের দিকেই বেশি ঝুঁকছেন, কারণ নানা রকম শর্ত যেমন কম, তেমনই আছে কাজ করার স্বাধীনতাও। বাজেটের ব্যাপারেও সেরকম একটা ভাবতে হয় না।
আসুন, আজ আপনাদের হইচই এর পাঁচটি ওয়েব সিরিজের কথা বলি যা আপনি এই লকডাউনের মধ্যে না দেখে ফেললে কিন্তু বড়সড় মিস করবেন।
১. ব্যোমকেশ
ব্যোমকেশ হল সেই বই যেটা আমরা প্রথম বোধহয় লুকিয়ে লুকিয়ে পড়তে শিখেছিলাম। বড়রা পড়তেই দিতেন না। তখন ভাবতাম কী এমন আলাদা ব্যোমকেশ ফেলুদার থেকে যে পড়া যাবে না! সেই তো গোয়েন্দা গল্পই। পরে পড়তে পড়তে বোঝা গেল কোথায় আলাদা ব্যোমকেশ। স্ত্রী, নারীসঙ্গ, খুন, গোপন প্রেম সব মিলিয়ে বাংলার ডার্ক কনটেন্ট। সেই গল্প পড়ার অনুভূতি চোখের সামনেএনেছে হইচই। অভিনয়ে ব্যোমকেশের ভুমিকায় আছেন অনির্বাণ ভট্টাচার্য, এটা নতুন প্রাপ্তি, এবং অনবদ্য বটে। পাশাপাশি অজিতের ভূমিকায় সুব্রত দত্ত, সত্যবতীর ভূমিকায় রিদ্ধিমা ঘোষের অভিনয়ও বেশ ভালো। সৌমিক চট্টোপাধ্যায় আর সায়ন্তন ঘোষালের পরিচালনার ব্যোমকেশ কিন্তু এই প্রথম ওয়েব সিরিজে, সুতরাং দেখতেই হবে। এখনও পর্যন্ত চারটি সিজন হয়েছে, দেখে ফেলুন।
২. দ্য স্টোনম্যান মার্ডার্স
সিরিয়াল কিলিং-কে কেন্দ্র করে এই ওয়েব সিরিজ। একজন সিরিয়াল কিলার যিনি পাথর দিয়ে থেতলে মারেন, তাই এই রকম নাম। এই সিরিজ কিন্তু আবার একদম সত্য ঘটনা অবলম্বনে। ১৯৮৫ থেকে ১৯৮৯ পর্যন্ত এরকম একজন অপরাধী ছিলেন যিনি পাথর দিয়ে মারতেন ফুটপাথবাসীদের। কলকাতা ও মুম্বই জুড়ে এমন অনেক ঘটনা ঘটে। এই গল্পে একজন লেখিকা মানে স্নেহা একটি ডায়েরি পাই যা নাকি ওই স্টোনম্যানের। সে ওই ডায়েরি ধরে স্টোনম্যানকে খোঁজা শুরু করে আর তাঁর সঙ্গে আমরাও। স্নেহার চরিত্রে স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়, সুতরাং অভিনয় নিয়ে কিছু বলার নেই। সঙ্গে উপরি পাওনা রজতাভ দত্ত। একটাই সিজন হয়েছে ২০১৯ সালে, দেখে ফেলুন।
৩. কার্টুন
হইচই বলছে এটি একটি সাইকোলজিক্যাল হরর থ্রিলার। এই সিরিজের চরিত্র অরিত্র একজন গ্রাফিক আর্টিস্ট। সে এবং তাঁর গার্লফ্রেন্ড জিনিয়া নতুন একটি ফ্ল্যাটে আসে। সেখানেই কিছুদিন থেকেই তাদের সঙ্গে কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটতে থাকে, যা তাদের জীবনকে ওলটপালট করে দেয়। আর এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে যোগ থাকে অরিত্রের আঁকা একটি কার্টুন চরিত্র। ঘটনাগুলোর উপস্থাপনা খুব ভালো। সাউন্ড এফেক্ট দিয়ে অনেকটাই সফল হওয়া গেছে স্ক্রিনের সামনে দর্শককে বসিয়ে রাখতে। পায়েল সরকার, মৈনাক ব্যানার্জীর অভিনয় খুব ভালো। পরিচালনায় মুন্সিয়ানা দেখিয়েছেন সৌরভ চক্রবর্তী। একটাই সিজন হয়েছে, এপিসোড ৭টা মাত্র। অর্থাৎ খুব বেশি সময় লাগবে না দেখে নিতে।
৪. চরিত্রহীন
হইচইয়ের অন্যতম বিতর্কিত ওয়েব সিরিজ এটি। সিরিজের মুখ্য অবলম্বন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের চরিত্রহীন কাহিনীটি। কিন্তু তাঁর সঙ্গে মেশানো হয়েছে বর্তমান জগতের সমস্যা, জটিলতা, দ্বন্দ্ব। সঙ্গে আছে বেশ কিছু বোল্ড সিন। এই সবই এই সিরিজকে বেশ বিতর্কিত করেছে। পরিচালক দেবালয় ভট্টাচার্য নিপুণতার সঙ্গে তৈরি করেছেন এই সময়োচিত গল্পটি। অন্যতম চরিত্র কিরণময়ীর চরিত্রে আছেন নয়না গাঙ্গুলী। আরেকটি চরিত্র সাবিত্রীর যাতে অনবদ্য অভিনয় করেছেন সায়নী ঘোষ। এছাড়া সৌরভ চক্রবর্তী, মুমতাজ সরকারদের অভিনয়ও অসাধারণ। মোট দু’টি সিজন, তাই দেখে ফেলতে খুব সমস্যা হবে না।
৫. পাপ
নাম শুনেই বুঝতে পারছেন বেশ ভালো একটি সিরিজ কিন্তু এটি, বেশ টানটান উত্তেজনার। একটি বনেদী বাড়ির দুর্গাপুজোয় এক মহিলা আসেন যার জীবন জড়িত সেই বাড়ির সঙ্গে। তিনি সেই বাড়ির কিছু অতীত ইতিহাস সামনে আনতে চান। এর মধ্যে বাড়িতে দু’টি ডেডবডি পাওয়া যায়, আর তাদের কাছে চিরকুট। এর থেকেই ঘটনাটি আরও রোমাঞ্চকর জায়গায় যায়। পূজা ব্যানার্জী এই প্রথম বাংলা ওয়েব সিরিজে ডেবিউ করলেন। পাশাপাশি আছেন সাহেব, রাহুল ব্যানার্জী, সোলাঙ্কি রায়, ভাস্বর চট্টোপাধ্যায়। সকলের অভিনয়ই খুব ভালো। অনুপম হাড়ির পরিচালনাও বেশ ভালো। একটাই সিরিজ হয়েছে, তাই দেখে নিন।
এই লকডাউনের মধ্যে শুধু শুধু বাড়িতে বসে একঘেয়ে না হয়ে এই কয়েকটি সিরিজ দেখে নিন। মন তো ভালো হবেই, পাশাপাশি অনেক কিছু কিন্তু জানতেও পারবেন। তাই মিস করা একদম চলবে না।
মন্তব্য করুন