বিকেল ৫ থেকে রাত ১০ টা প্রায় প্রত্যেক টি ঘরেই এই সময় টিভি বাংলা সিরিয়ালের দখলেই থাকে। আমাদের প্রত্যেকেরই বাড়িতে মা দিদিমা বৌদি কাকিমা জেঠিমা নিজেদের পছন্দ মত চ্যানেলে নিজের পছন্দ মত সিরিয়ালটি দেখার জন্য সকাল থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে বসে থাকেন । প্রেম, ব্ন্ধুত্ব, সামাজিক সমস্যা, হিংসা, রাজনীতি, কূটনীতি সব মিলিয়ে জমজমাট আধাঘন্টা। তাই হাজার কাজ বা সমস্যা থাকলেও পছন্দের সিরিয়ালগুলি কিন্তু কেউ মিস করেন না। এরকমই জনপ্রিয় ৫ টি সিরিয়াল সম্পর্কে আসুন কিছু জেনেনি।
কুসুম দোলা
কুসুম দোলা ষ্টার প্লাস চ্যানেলের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সিরিয়াল। গল্পের প্রধান চরিত্র রণজয়, ইমন ও রূপকথা। এই চরিত্র গুলিতে অভিনয় করেছেন ঋষি কৌশিক, অপরাজিতা ঘোষ দাস ও মধুমিতা সরকার। এছাড়া অন্যান্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন সাবিত্রী চাটার্জী, মাধবী মুখার্জী, অনুসূয়া মজুমদার প্রমুখ জনপ্রিয় অভিনেত্রীরা। এছাড়া আরো অনেক জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা এতে অভিনয় করেছেন। এই সিরিয়ালের গল্প ঘনিয়ে উঠছে ইমন, রণজয় ও রূপকথা এই তিনজনকে নিয়ে। রণজয় একজন IPS অফিসার বাড়ি কলকাতায়। জয়সালমীর ঘুরতে গিয়ে রূপকথা ও রণজয় পরস্পর মিলিত হন দুজনের দুজনকে পছন্দ হয় কিন্তু মনের কথাটি বলা হয়না। রণজয় রূপকথাকে যোগাযোগ করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
কিন্তু ঘটনা চক্রে রণজয় রূপকথার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়না। এদিকে রণজয়কে চাকরীসুত্রে সুন্দরপুর চলে যেতে হয় যেখানে রণজয় ও ইমন মুখোমুখি হয় এবং দুজনেই পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। এদিকে রূপকথাও ভুল বোঝার ফলে রণজয়ের দাদা বাদশা মৈত্রকে বিবাহ করে। এই তিনজনের পারস্পরিক সমস্যা, ভুল বোঝাবুঝি, প্রেম ইত্যদি এই সিরিয়ালটিকে এগিয়ে নিয়ে চলছে। অভিনেতাদের জনপ্রিয়তা, চরিত্র গুলির ভালো অভিনয় এবং সর্বোপরি গল্পের নতুন নতুন চমক প্রতিদিন আমাদের অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে বাধ্য় করে পরবর্তী এপিসোডটি দেখার জন্য।
পটল কুমার গানওলা
এই সিরিয়াল প্রায় দেড়বছর নিজের জনপ্রিয়তাকে সমান ভাবে ধরে রেখেছে। এই সিরিয়ালটিও স্টার জলসার একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় সিরিয়াল। এই সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছে হিয়া দে। যে আমাদের কাছে পটল নামেই বেশি প্রচলিত। পটল একজন সনামধন্য গায়ক সুজন কুমারের সন্তান। কিন্তু পরিস্থিতির চাপে সে নিজের এই পরিচয় জানতে পারেনা। কিন্তু পটল ও তার পিতার মত ভালো গান গাইতে পারে। অনেক সংঘর্ষের পর সে তার আসল পিতার পরিচয় পায়।
এদিকে সুজন কুমারের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী ও সন্তান তুলি দ্বারা পটলের নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। গল্প এখন ১২ বছর এগিয়ে গিয়েছে এবং পটলের জীবনে এখনো তুলি প্রধান সমস্যা। এই সিরিয়ালে সকলের অভিনয় ভালো বিশেষ করে পটলের ভূমিকায় হিয়া দে তার অভিনয়ের মাধ্যমে সকলের আদরের ও অতন্ত আপন হয়ে উঠেছে। এছাড়া এই সিরিয়ালে গান গুলি এর জনপ্রিয়তার আরেকটি মুখ্য কারণ। তুলি অর্থাৎ সিঞ্চনা বেশ ভালো। গল্পের নতুন নতুন চমক। সকলের অভিনয়, প্রতিদিন আমাদের ঠিক সময় মত টিভির সামনে নিয়ে আসে। বর্তমানে পটলের জীবনে কি প্রেমের পদক্ষেপ পড়তে চলেছে—এটিই দর্শকের মূল আগ্রহের কারণ।
অন্দরমহল
জি বাংলার এই সিরিয়ালটি কয়েক দিনের মধ্যেই জনপ্রিয়তার শীর্ষে পৌছে গিয়েছে। গল্পটি একজন সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি মেয়ের যার বিয়ে হয় এক সম্পন্ন উচ্চবিত্ত সম্পন্ন পরিবারে। যার স্বামী ডিভোর্সি ও এক সন্তানের পিতা। এমন একজন নারী যার পুরো জগতটাই বাড়ির অন্দরমহলের গন্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে, তার নিজেকে খুঁজে পাওয়ার গল্প এই অন্দরমহল। এর মুখ্য চরিত্র পরমেশ্বরীর চরিত্রে অভিনয় করছেন কনীনিকা ব্যানার্জী, এছাড়া আছেন দেবলীনা দত্ত, কৌশিক চক্রবর্তী, সন্তু মুখার্জী প্রমুখ জনপ্রিয় অভিনেতা অভিনেত্রীরা। নিজের সত্তাকে খুঁজে পাওয়ার প্রতিনিয়ত চেষ্টা, পরমেশ্বারীকে আমাদের খুব কাছের করে তুলেছে। তার জীবনের ঘাত প্রতিঘাত গুলি আমরাও যেন অনুভব করতে পারি। এখানেই এই সিরিয়ালটির জনপ্রিয়তার মূল কারণ।
আমার দূর্গা
আমার দূর্গা সমসাময়িক রাজনীতি ও কূটনীতির সরূপটি আমাদের কাছে তুলে ধরেছে। একটি সাধারণ মেয়ে দূর্গা এবং তার সাহসিকতা ও চরিত্রের দৃঢ়তা, অন্যায়ের সাথে আপোষ না করে বর্তমান সমাজে হওয়া নোংরা রাজনীতির বিরুদ্ধে লড়ে যাওয়া আমাদের সকলকেই এই মেয়েটিকে ভালোবাসতে বাধ্য করে। দুর্গার চরিত্রে সংঘমিত্রা তালুকদার অত্যন্ত ভালো, এছাড়া সুমন্ত মুখোপাধ্যায় এর অভিনয় ও তুলনাহীন। এছাড়া সঞ্চারী দাস, নন্দিনী চ্যাটার্জী ইত্যাদি প্রত্যেকেই নিজেদের চরিত্রে সমান ভাবে দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।
কে আপন কে পর
কে আপন কে পর এ মুখ্য চরিত্রে আছে জবা যে কিনা সেনগুপ্ত পরিবারের প্রধান কর্তা ও কর্ত্রীর আশ্রিতা এবং অত্যন্ত প্রিয় প্রায় নিজের মেয়ের মতন। তবে অন্যান্য সদস্যদের নানা চক্রান্তের স্বীকার তাকে ঘাত প্রতিঘাতের মুখোমুখি ফেলে। এমত অবস্থায় পরমব্রত অর্থাৎ পরিবারের ছোটো ছেলে সিঙ্গাপুর থেকে ফিরে আসে পারিপার্শিক পরিস্থিতি জবা ও পরমব্রতকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করে। কিন্তু পারিবারিক নানা চক্রান্ত কোনো ভাবেই এই দুজনের সম্পর্ককে স্বাভাবিক হতে দেয় না। এদের দুজনের সম্পর্ক কি কখনো সুন্দর স্বাভাবিক হয়ে উঠবে? জবার সমস্যা, তার লড়াই আমাদের মুগ্ধ করে। এছাড়া গল্পটি যে প্রতিদিন নতুন নতুন চমক আমাদের কাছে নিয়ে আসে তার ফলে প্রতিদিন ই এই সিরিয়ালের আকর্ষণ আমাদের কাছে বেড়ে ওঠে।
এই সমস্ত বাংলা সিরিয়াল গুলি নারী কেন্দ্রিক। তাদের সামাজিক অবস্থা, প্রতিকুলতা, নিজেকে খুঁজে পাওয়ার প্রচেষ্টা, লড়াই, সুখ দুঃখ এই সমস্ত কিছু আমাদেরকে প্রত্যেকটি চরিত্রের সাথে একাত্ম করে তোলে। কোথায় যেন এর মধ্যে নিজেদের খুঁজে পাওয়া যায়। তাই এদের আনন্দ আমাদের আনন্দ দান করে। এদের দুঃখ আমাদের কাঁদায়। আর এই কারণেই আমরা প্রতিদিন অধির আগ্রহে অপেক্ষা করি আমাদের পছন্দের সিরিয়ালটির জন্য।
নীল তিমি (Blue Whale) খেলার শিকার নয় তো আপনার বাচ্চা? তাহলে সাবধান!
মন্তব্য করুন