ধরুন বেশ সুন্দর ইন্টারভিউ দিচ্ছেন।হঠাৎ হেঁচকি উঠতে শুরু করল।বা প্রিয়জনের সাথে যেই একটু অন্তরঙ্গ মুহূর্ত কাটাচ্ছেন,ব্যাস!ওমনি হেঁচকি শুরু।ইস!কি বাজে ব্যাপার হবে বলুন তো!ইন্টারভিউ বা অন্তরঙ্গ মুহূর্ত দুটোই মাটি।এটা মাঝে মাঝেই আমাদের সকলের সাথেই হয়ে থাকে।ইস! কি বিরক্ত লাগে।হলে আর থামতেই চায় না।জানি জানি খুবই বিরক্তিকর লাগে।তবে এই বিরক্তিকর সমস্যারও সহজ সমাধান আছে আমাদের কাছে,যাতে চট করে কমে যাবে হেঁচকি।দেখুন।
হেঁচকি কেন
হেঁচকি তো মাঝে মাঝেই ওঠে।কিন্তু কেন হয় এটা কি জানেন?না তো?তাহলে জেনে নিন।আমাদের শরীরে ডায়াফ্রাগ্ম নামক এক পেশি আছে,যার দ্বারা বুক ও পেট আলাদা।মাঝে মাঝে এই পেশীর অনৈচ্ছিক সংকোচন হয়।আর এই সংকোচন দ্রুত মিনিটে বেশ কয়েকবার হতে থাকে। ফলে সেই সময় আমরা দ্রুত শ্বাস নিতে থাকি।আর সেই সময় আমাদের শরীরের ভোকাল কড বা যেটাকে বলে স্বরতন্ত্রী সেটি জাস্ট কিচ্ছুক্ষণের জন্য বন্ধ হয়ে যায়।আর তখনই হেঁচকি ওঠে।হঠাৎ বেশি ঠাণ্ডা পানীয়,বা খুব মশলাদার খাবার বা খুব তাড়াতাড়ি খাওয়া এসবের ফলে হেঁচকি হয়।
কি করবেন হেঁচকি হলে
দম আটকে রাখা
হেঁচকি ওঠা শুরু করলে,একটা বড় শ্বাস নিন।তারপর নাক মুখ বন্ধ করে রাখুন কয়েক সেকেন্ড।মানে আপনি যতক্ষণ পারেন।তখন নাক দিয়ে শ্বাস নেওয়া চলবে না।মুখও বন্ধ রাখুন।আর সম্ভব হলে,কানও হাত দিয়ে চেপে রাখুন।ওই কয়েক সেকেন্ড।এতে শরীরে অস্বস্তি হয়,মন উত্তেজিত হয়ে পড়ে।আর শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ শরীরে বেড়ে যায়।ফলে হেঁচকি কমে যায়।
পলিথিনের ব্যাগ
হাতের কাছে পলিথিন বা কাগজের ব্যাগ থাকলে,সেটার মধ্যে শ্বাস নিন। মানে ব্যাগটা মুখের কাছে ধরুন।এমন ভাবে ধরবেন যেন একটুও খোলা না থাকে।মানে বাইরে থেকে বাতাস ঢুকলে চলবে না।এবার ওই ব্যাগের মধ্যেই শ্বাস নিন আর শ্বাস ছাড়ুন।এভাবে কিছুক্ষণ করুন যতক্ষণ আপনি পারবেন।এতেও শরীরে কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়।শরীর তখন অতিরিক্ত কার্বন ডাই অক্সাইডকে বার করার জন্য প্রক্রিয়া করতে থাকে।তখন ব্রেনও শরীর থেকে কার্বন ডাই অক্সাইডকে বার করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।তার ফলে হেঁচকি কমে যায়।
মিষ্টি
হেঁচকি উঠলে একটু চিনি বা মিছরি চিবোতে থাকুন।চিনি বা মিছরি খেলে শরীরের একপ্রকার স্নায়ু উত্তেজিত হয়ে যায়।তখন ব্রেন শরীরের সেই অংশকে ঠিক করার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ে।ফলে সেই সময় ব্রেন হেঁচকির কথা ভুলে যায়।তাই হেঁচকি কমে যায়।
ঠাণ্ডা জল
ঠাণ্ডা জল তো থাকেই হাতের কাছে।সেটা সম্ভব হলে স্ট্র দিয়ে খান এবং খাবার সময় কান দুটো বন্ধ রাখবেন।তাহলে কমে যাবে বা বরফের টুকরোও চুষে চুষে খেতে পারেন।না হলে ঠাণ্ডা জল অল্প অল্প করে বার বার চুমুক দিয়ে খান।বার বার এই ঢোক গিলে এই ঠাণ্ডা জল খেলে,হেঁচকি কমে যাবে।
চমকে দেওয়া
এটা আমরা অনেক সময় করেও থাকি।হেঁচকি তোলার সময় কেউ আপনাকে হঠাৎ করে ভয় পাইয়ে দিলে,হেঁচকি কমে যাবে।হঠাৎ করে প্রচণ্ড চমকে গেলে কমে যায়।তবে হ্যাঁ,হঠাৎ করে করতে হবে এটা।হঠাৎ খুব ভয় পেয়ে চমকে গেলে,শরীররে নার্ভগুলো চমকে যায়।তার ফলে হেঁচকি ওঠাও কমে যায়।
এক প্রকার ব্যায়াম
যদি বাড়িতেই থাকেন তাহলে একপ্রকার ব্যায়াম করে নিতে পারেন।এই ব্যায়াম হেঁচকি কমাতে বেশ কাজ দেয়।এরজন্য প্রথমে মাটিতে সোজা হয়ে শুয়ে নিন।তারপর হাঁটুকে পেটের কাছে আনুন।এবার হাঁটুকে পেটের কাছে কিছুক্ষণ চেপে ধরে রাখুন।আবার পা সোজা করে আবার হাঁটু পেটের কাছে আনুন।এভাবে কয়েকবার করুন।দেখবেন হেঁচকি কমে গেছে।
পাতিলেবু
মিষ্টির মত পাতিলেবুও কিন্তু হেঁচকি কমাতে সাহায্য করে।সেই সময় পাতি লেবু খান।কিছুক্ষণ খান।দেখবেন আস্তে আস্তে হেঁচকি কমে যাবে।টকের জন্য হেঁচকি কমে যাবে।
অন্য দিকে মন দিন
যখন হেঁচকি হয় আমরা ওই দিকেই খুব বেশি মন দিয়ে থাকি।তাই কমে না সহজে।এই সময় অন্য দিকে মন দিন।অন্য কাজ করুন।অন্য কাজে মনোনিবেশ করলে,হেঁচকি কমে যাবে।
আস্তে আস্তে খান
খুব তাড়াতাড়ি খেলে হেঁচকি ওঠে।তাই খাবার আস্তে আস্তে ভালো করে চিবিয়ে খান।এতে হেঁচকি উঠবে না।
জিভ বার করে রাখুন
কি শুনতে খুব হাসি লাগছে নিশ্চয়ই?হাসি লাগলেও কাজ কিন্তু হবে ভালো।হেঁচকির সময়,জিভ বাইরের দিকে যতক্ষণ পারেন বার করে রাখুন।কয়েক সেকেন্ড থেকে ১মিনিট পর্যন্ত রাখুন।ধীরে ধীরে কমে যাবে।
তাহলে হেঁচকির মত বিরক্তিকর সমস্যার আজ কিন্তু অনেক সমাধান দিয়ে দিলাম।আপনার সুবিধা মত একে কমানোর চেষ্টা করুন।অফিসে বাকি গুলো ট্রাই করা সম্ভব না হলেও।দম বন্ধ রাখুন তাতেও কাজ হবে।আর যতটা সম্ভব ঝাল,মদ্যপান কম করুন।কারণ গবেষণায় দেখা গেছে এসব থেকেও খুব হেঁচকি হয়।
স্বাস্থ্য টিপস—বাতের ব্যথা থেকে আরাম পেতে ৩টি ঘরোয়া তেল মালিশ
মন্তব্য করুন