নিজেকে একটু সুন্দর করে, একটু নিখুঁতভাবে সবার সামনে উপস্থাপন করতে কে না চায়! আর সেই সুন্দর করে তোলার জন্যই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি প্রয়োজন হয়ে থাকে নানা ধরণের প্রসাধনী যেগুলো সাধারণত মেকআপ নাকে পরিচিত। তবে বাজারে প্রাপ্ত হাজার রকমের মেকআপ আইটেম তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে নানা রকমের কেমিক্যাল বা রাসায়নিক পদার্থ, এলকোহল, পশুর চর্বি ইত্যাদি উপকরণ। তাই মুসলিম সম্প্রদায়ে এতদিন শুধু খাবার-দাবারে হালাল-হারাম বিচার করা হলেও মেকআপের ব্যবহার যত বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে, ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষজনের জন্য মেকআপ ব্যবহারেও তত বেশি সতর্ক হওয়া অর্থাৎ হালাল-হারাম বিবেচনা করা যেন আবশ্যক হয়ে উঠছে।
ইসলাম ধর্মের নিয়মানুযায়ী হালাল বলতে বুঝায় সেসব জিনিসকে যা ইসলামে অনুমোদনযোগ্য অর্থাৎ সেগুলো ব্যবহার করা যাবে। অন্যদিকে হারাম বলতে বুঝায় অননুমোদন বিভিন্ন জিনিস, যেগুলো ব্যবহার করা ইসলামে নিষিদ্ধ। এলকোহল, রক্ত এবং শুকর বা এই জাতীয় পশু ইসলাম ধর্মে ব্যবহার করা হারাম অর্থাৎ একান্তই নিষিদ্ধ। কাজেই এসব জিনিসের কোনো অংশ যদি মেকআপ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে তাহলে সেই মেকআপ ব্যবহার করাও মুসলমানদের জন্য হারাম। তাই এই হারাম-হালালের বিতর্কে হালাল মেকআপের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে মুসলিম জনগোষ্ঠীর মধ্যে, বিশেষ করে মুসলিম নারীদের মধ্যে।
বর্তমানে অনেক সতর্ক ইসলামী ধর্মাবলম্বী ইসলামে নিষিদ্ধ পশুর চর্বি ব্যবহার করে তৈরি লিপস্টিক এবং এলকোহল দিয়ে বানানো পারফিউম কঠোরভাবে এড়িয়ে চলছেন। মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহে হালাল মেকআপ ব্যবহারের ক্ষেত্রে বিশেষ সচেতনতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
সম্প্রতি দেখা গেছে, প্রাণীর চর্বি ছাড়া তৈরি প্রসাধন সামগ্রীর আকাশচুম্বী চাহিদার কারণে তাদের নতুন অনেক প্রতিষ্ঠানই মেকআপ সামগ্রীতে পশু উপকরণ ব্যবহার করছে না। ইতোমধ্যে অনেক দেশই কসমেটিক্স পণ্যে হালাল সার্টিফিকেট দেয়া কোম্পানির জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছে। ফলে কোম্পানিগুলোও সেসব নিয়ম মানতে বাধ্য হচ্ছে। বিখ্যাত প্রসাধন ব্র্যান্ড ল’রিয়েল তাদের একশ’র ও বেশি পণ্যে হালাল সার্টিফিকেট ব্যবহার করেছে। তাই বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়ার মানুষজনও লুফে নিয়েছে এই সুযোগ। সেদেশে কোম্পানিটি ভালো ব্যবসা করছে বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত ইলিনয়ভিত্তিক কোম্পানি মায়া কসমেটিকস এক ধরনের নেইল পলিশ বিক্রি করে, যার ভেতর দিয়ে তরল পদার্থ প্রবাহিত হতে পারে। নেইল পলিশের ভেতরে পানি প্রবাহিত করতে পারা মুসলিম নারীদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কেননা ওযুর সময় হাত-পায়ে পানিপ্রবাহ প্রতিরোধী কোনো আবরণ রাখা নিষিদ্ধ।
শুধু পশ্চিমা বিশ্বে নয়, বরং ভারতীয় উপমহাদেশেও মুসলিমদের কাছে হালাল মেকআপের বিষয়টি হয়ে উঠেছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীদের মেকআপ সামগ্রীতেই এলকোহল ও হারাম ঘোষিত বিভিন্ন প্রাণীর চর্বি ও দেহের অংশ ব্যবহার করা হয়। এসব কারণে মুসলিম নারীরা, বিশেষ করে যারা ইসলামী রীতি-নীতি অনুসরণ করে চলেন তাদের জন্য মেকআপ নেয়াটা প্রশ্নবিদ্ধ ছিল এতদিন। তাই হালাল মেকআপ বাজারজাত করার পর থেকে সেগুলোর চাহিদা হয়ে পড়েছে আকাশচুম্বী। কাজেই বলা যায়, হালাল মেকআপের বাণিজ্যকরণ অর্থাৎ বাজারজাতকরণ যদি বৃদ্ধি করা হয়, তাহলে অচিরেই সেসব পণ্য শুধু বাংলাদেশ বা ভারত নয়, বরং পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়াসহ বিশ্বের সকল মুসলিম অধ্যুষিত দেশেই এর বাণিজ্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে।
হোয়াইটহেডস এবং ব্ল্যাকহেডস পরিষ্কার করুন এই ৮টি স্ক্রাবার দিয়ে
মন্তব্য করুন