আমরা সবাই ‘হজ’ শব্দটা শুনে এসেছি সেই ছোটবেলা থেকেই। জানি এটি মুসলমান ধর্ম সম্প্রদায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষ্ঠান। কিন্তু, আমরা কী এটা জানি যে হজ কীভাবে পালন করা হয়, কী এর গুরুত্ব। আসুন, আমরা আজ হজ নিয়ে কিছু কথা জেনে নি।
হজের আভিধানিক অর্থ
হজের আভিধানিক অর্থ হল কোথাও যাবার সঙ্কল্প করা বা চক্রাকারে প্রদক্ষিণ করা। এটি মুসলমানদের অবশ্য পালনীয় একটি কাজ। প্রত্যেক শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম মুসলমানকে জীবনে অন্তত একবার হজ করতে যেতেই হয়। হিজরি সনের জেলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে হজের যাবতীয় আচার-অনুষ্ঠান পালন করতে হয়। হজযাত্রীদের মক্কা শহরে ঢোকার মুখে তাদের পোশাক খুলে রেখে সেলাইহীন দু’খন্ড বস্ত্র পরতে হয়। পোশাক পরিবর্তনের এই অনুষ্ঠানের নাম এহরাম। এর মাধ্যমেই হজ শুরু হয়।
কালো পাথরে চুম্বন
এরপর মক্কার মসজিদ আল-হারামে গিয়ে কাবা ঘরের দেওয়ালে লাগানো কালো পাথর ‘হাজরে আসওয়াদ’ চুম্বন করে সাতবার কাবা প্রদক্ষিণ করতে হয়। প্রদক্ষিণ শেষে আবার কালো পাথর চুম্বন করতে হয়। এই আচার পালনকে বলে তওয়াফ। কাবা ঘর থেকে আধ মাইল দূরে সাফা পাহাড়ে গিয়ে হাঁটা শুরু করতে হয় মারওয়া পাহাড় পর্যন্ত। দূরত্ব মোটামুটি ৪৫০ মিটার। দুই পাহাড়ের মধ্যে সাতবার দৌড়াতে হয়। এখন হজযাত্রীদের কষ্ট লাঘবের জন্য পাহাড়ে ওঠার ক্ষেত্রে লিফটের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
নবি ইব্রাহিম স্বপ্ন
এরপর আরাফত পৌছে সেখানে ময়দানে রাত কাটাতে হয়। ইসলাম ধর্মের অন্যতম নবি ইব্রাহিম স্বপ্নে আদেশ পান তাঁর এক পুত্রকে কুরবানি দেবার। পুত্রকে বলি দিতে উদ্যত হলে তাঁর নিষ্ঠায় সন্তুষ্ট হয়ে ঈশ্বর তাঁকে নিরস্ত করে একটি পশু কুরবানি দেবার আদেশ দেন। মুসলমানদের বিশ্বাস, ইব্রাহিম যখন তাঁর পুত্রকে কুরবানি দেবার জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন এই জায়গাতেই শয়তান তাঁদের ধোঁকা দেবার জন্য হাজির হয়। সেই শয়তানের উদ্দেশ্যে এখনও হজের সময় লক্ষ লক্ষ মুসলমান পাথর ছোড়ে। হজে কুরবানি দেবার পর মাথা মুন্ডন করতে হয় আর তার সঙ্গে সঙ্গেই হজ-পর্ব সমাপ্ত হয়। মিনায় মোট তিন রাত কাটাতে হয় হজ যাত্রীদের। হজ করে যিনি ফিরে এলেন তাকে ‘হাজি’ বলা হয়। স্ত্রীদের জন্য বিশেষ নিয়ম বলা আছে। স্ত্রীরা স্বামী বা যার সঙ্গে সেই নারীর বিবাহ হলে তা বৈধ মানা হবে না যেমন বাবা, ভাই বা পুত্র এমন এক পুরুষকে সঙ্গে নিতে হবে। এই নিয়মকে বলে ‘মাহরাম’। মাহরামকে সেটা না জানালে সেই নারীর ভিসা হয় না।
বৃদ্ধ বা অশক্ত ব্যক্তি হজে জেতে অসমর্থ হলে অন্যকে হজে পাঠিয়ে পুণ্য অর্জন করতে পারে। একে বলে ‘বদলি হজ’।
হজ মূলত প্রাক-ইসলামিক ধর্মাচরণ
হজ মূলত প্রাক-ইসলামিক ধর্মাচরণ। হজরত মুহম্মদ মক্কা জয় করে সেখানে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠার আগে পর্যন্ত কাবার চারপাশে ৩৬০ টি মূর্তি ছিল। মক্কা জয়ের পর মুহম্মদের নির্দেশে সেই মূর্তিগুলি ভেঙ্গে ফেলা হয়। সেখানে মাতা মেরি ও যিশু সহ আরও যে সব দেওয়াল চিত্র ছিল সেগুলি মুছে দেওয়া হয়। তারপর তিনি নির্দিষ্ট নিয়ম শুরু করেন হজের যা আজ অব্দি মানা হয়।
অন্যান্য মুসলমানদের মতো বাংলাদেশের মুসলমানরাও নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেন হজ।
সেখানে সরকার সবরকমভাবে তাদের সাহায্য করেন। বাংলাদেশের বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন বলেন যে হজ নিয়ে কোন অনৈতিক ও কুকাজ তিনি বরদাস্ত করবেন না। হজ যাত্রীর অভাবে এখনও অব্দি ২২টি ফ্লাইট বাতিল হয়েছে। সরকার থেকে ‘ জেনারেল অথরিটি অফ সিভিল এভিয়েশন,সৌদি আরব’ কে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে হজ ফ্লাইটের সময়সীমা ২৬ থেকে ২৮ অগষ্ট করা হয়। নাম নিবন্ধিকরণ শুরু হয়ে গেছে। সরকার এই সকল উদ্যোগ নিয়েই থাকে হজ যাত্রীদের সুবিধার জন্য।
এখানে আমরা হজ যাত্রা নিয়ে খানিক আলোচনা করলাম। আশা করি কিছু নতুন তথ্য জেনেছেন তারা যারা বিষয়টা নিয়ে কম জানতেন। যারা হজে যাচ্ছেন তাদের যাত্রা শুভ হোক।
মন্তব্য করুন