আচ্ছা, আপনাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে যে আপনার প্রিয় স্ট্রীট ফুডটি কী, নিশ্চয়ই কোনো কিছু না ভেবেই আপনি উত্তর দেবেন ফুচকা! রাস্তাঘাটে চলতে-ফিরতে ইচ্ছে হলেই যে জিনিসটি আপনাকে টানে, সেটাও নিঃসন্দেহেই জানি ফুচকা। তাই তো? আর ফুচকাওয়ালার থেকে ফুচকা খেয়ে বাড়িতে সেটাকে বানানোর ইচ্ছে পোষণ করেননি, কিংবা বানানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছেন, এমন মানুষ বিরল! তা আপনার প্রিয় ফুচকা বানাতে আর এদিক সেদিক থেকে কষ্ট করে রেসিপি খুঁজবেন কেন যখন আমরা আছিই! দেখে নিন আজকের রেসিপি ফুচকা, স্টেপ বাই স্টেপ।
উপকরণ
ফুচকা বানানোর জন্য (এই রেসিপি থেকে আপনি ৫০-৬০ টা ফুচকা বানাতে পারবেন)
ফাইন না ভাজা সুজি ১ কাপ, বেকিং সোডা ১/৮ চা চামচ, ময়দা ১ টেবিল চামচ, জল প্রয়োজন মতো (মোটামুটি আন্দাজ ৬ টেবিল চামচ), নুন ১/৪ চা চামচ, সাদা তেল ১ চা চামচ, ভাজার জন্য সাদা তেল পরিমাণ মতো।
আলু মাখার জন্য
আলু ৪-৫ টা মাঝারি, ছোলা সেদ্ধ ৪-৫ বড় চামচ, তেঁতুলের কাই ২ বড় চামচ, ধনেপাতা কুচি ৩ বড় চামচ, ভাজা জিরে গুঁড়ো ১ চা চামচ, চাট মশলা ২ চা চামচ, সৈন্ধব লবণ পরিমাণ মতো, কাঁচা লঙ্কা কুচি যে যেমন ঝাল খাবেন সেই অনুযায়ী।
তেঁতুল জল বানানোর জন্য
ভাজা জিরে গুঁড়ো ২ চা চামচ, লাল লঙ্কা গুঁড়ো ১ চামচ, তেঁতুলের কাই ৪ বড় চামচ (এটা দরকার মতো বাড়াতে বা কমাতে পারেন), গুড় ৫-৬ চামচ বা চিনি, চাট মশলা ২ চা চামচ, বিট নুন পরিমাণ মতো, পাতি লেবু ১ টা গোটা, জল ৫-৬ কাপ (পরিমাণ বাড়তে বা কমতে পারে)।
পদ্ধতি
ফুচকা বানানোর জন্য
একটা বড় পাত্রে সুজি, বড় ১ চামচ সাদা তেল, বেকিং সোডা আর নুন নিয়ে ভালো করে মেশান। এবার ওই মিশ্রণে ময়দা মেশান। ভালো করে মিশিয়ে ওতে প্রথমে ৩ বড় চামচ মতো জল দিন। দিয়ে মাখুন। যখন দেখবেন সুজি সব জল শুষে নিচ্ছে, তখন আরও ২ বড় চামচ জল দিন। ময়দা মাখার মতো ভালো করে ঠাসতে থাকুন। মনে রাখবেন ফুচকা বানানোর জন্য এই ডো বানানো কিন্তু খুব দরকারি একটা স্টেপ। ভালো করে না মাখা হলে ফুচকা ফুলবেই না। দেখবেন ডো যেন খুব নরম না হয়, আবার খুব শক্তও না হয়। মাখতে মাখতে যদি দেখেন জল বেশী হয়ে গেছে, তাহলে আরও খানিক সুজি দিতে পারেন। আর শক্ত হয়ে গেলে অল্প জল। মোটকথা ডো যেন ইলাস্টিকের মতো হয়।
এবার ওই সেমি সফট ইলাস্টিক ডো-টা ভেজা তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘণ্টা রাখুন। তারপর আবার ডো-টা মাখবেন।
এবার ডো-টাকে ২-৩ ভাগে ভাগ করে নিন। তারপর এমনি নর্মাল ভাবে বেলুন। বেলার সময় কোনো বাড়তি ময়দা যোগ করবেন না। খুব সরু আর ইভেন করে বেলবেন। মোটা হয়ে গেলে কিন্তু ভাজার পর আপনারই খেতে বাজে লাগবে।
এরপর একটা ছোট বাটি দিয়ে কেটে কেটে নিন। এরপর একটা বড় থালায় ওই ছোট টুকরোগুলো সাজিয়ে রাখুন, একটা আরেকটার গায়ে যেন না ঠেকে। আবার ভেজা ন্যাকড়া চাপা দিয়ে রাখুন। এভাবে গোটাটা করে নিন।
কড়ায় ডিপ ফ্রাই করার মতো তেল গরম করুন। মাঝারি গরম হলে একটা ছেড়ে দেখুন ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা। যদি ছাড়ার পরেই তেলে ভেসে ওঠে, বুঝবেন ফুচকা ভাজার জন্য আপনার তেক একদম পারফেক্ট রেডি। এরপর বাকি ফুচকা আস্তে আস্তে ভাজতে থাকুন। ভাজতে খুবই কম সময় লাগবে আর আপনি একসাথে ৭-৮ টাও ছাড়তে পারেন। সোনালী রঙ ধরা পর্যন্ত ভাজবেন। দেখবেন কি সুন্দর ফুলে উঠছে।
এবার কিচেন পেপারে তেল শুষে নিন। ঘরের তাপমাত্রায় এলেই সাথে সাথে এয়ার টাইট কন্টেনারে রেখে বন্ধ করুন। বাইরে রাখলে কিন্তু ফুচকা মিইয়ে যেতে পারে।
আলু মাখার জন্য
আলু ভালো করে প্রেশার কুকারে সেদ্ধ করে নিন। এরপর খোসা ছাড়িয়ে একটা পাত্রে ভালো করে চটকে নিন। এরপর ওই আলুর মধ্যে ছোলা, তেঁতুলের কাই, ধনেপাতা কুচি, কাঁচা লঙ্কা কুচি, ভাজা জিরে গুঁড়ো, চাট মশলা, পরিমাণ মতো সৈন্ধব লবণ দিয়ে ভালো করে মাখুন।
তেঁতুল জলের জন্য
একটা বেশ বড় পাত্রে ভাজা জিরে গুঁড়ো, লাল লঙ্কা গুঁড়ো, তেঁতুলের কাই, গুড়, চাট মশলা, বিট নুন একসাথে নিয়ে ভালো করে মেশান। এরপর ওতে পরিমাণ মতো জল দিন। তারপর লেবুর রস দিন। টেস্ট করে দেখুন আর কিছু লাগবে কিনা। ঠিক খেতে লাগলেই রেডি আপনার তেঁতুল জল।
শেষ ধাপ
এবার ফুচকা ঠিক যেমন দেখেন, ওভাবে ফুটো করে আলু মাখা, তেঁতুল জল দিয়ে টপাটপ খেতে শুরু করে দিন!
তাহলে এবার ফুচকা খেতে ইচ্ছে করলে কিন্তু যখন তখনই ফুচকা হতে পারে। আর দোকানের দারুণ ফুচকা মিলতে পারে আপনার বাড়িতেই। একটা উইকএন্ডে বিকেলে কিন্তু তাহলে সাহস করে ট্রাই করেই ফেলুন, আর শুরু করে দিন বিনা টাকায় ফুচকা খাওয়ার কম্পিটিশন!
মন্তব্য করুন