প্রেগন্যানসি বা গর্ভাবস্থা একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময়টি গর্ভবতী নারী বা তার গর্ভে থাকা শিশুটির বিশেষ খেয়াল রাখা জরুরি। গর্ভাবস্থায় মহিলাদের শরীরে নানা রকম পরিবর্তন ঘটিত হয় ফলত এই সময়টিতে কোনো রকম গাফিলতি অনেক সময়ই মা এবং তার গর্ভে থাকা শিশুটির শারীরিক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ এই সময় যেমন জরুরি তেমনি জরুরি গর্ভবতী মহিলাটির মানসিক দিক দিয়ে সম্পূর্ণ সুস্থ্য থাকা। আজ আমরা নজর রাখবো এমন কয়েকটি বিষয়ের ওপর যেগুলি গর্ভাবস্থায় মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
নিয়মিত ব্যায়াম করা শুরু করা উচিত
গর্ভাবস্থায় প্রথম তিন মাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। কোনো রকম গাফিলতি এইসময় গর্ভপাতের সম্ভাবনাকে ত্বরান্নিত করতে পারে। এছাড়াও আরো নানা রকম শারীরিক ক্ষতির সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই প্রথমেই এই সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। নিয়মিত জরুরি ওষুধ ও ব্লাড টেস্ট, ইউরিন টেস্ট ইত্যাদি করে নেওয়া অত্যন্ত জরুরি কারণ এর দ্বারা কোনো রকম শারীরিক দুর্বলতা বা রোগ থাকলে প্রথম থেকেই ধরা পরে যায় এবং সঠিক সময়ে তা সারিয়ে তোলা যায়। এছাড়া এই সময় থেকেই খাওয়া দাওয়া ও নিয়মিত ব্যায়াম করা শুরু করা উচিত যাতে পরবর্তী সময়ে কোনো রকম শারীরিক অসুবিধা না তৈরী হয়।
ভিটামিন এবং মিনারেলস ঠিক মত খাওয়া উচিত
ডাক্তারের লিখিত সমস্ত ভিটামিন এবং মিনারেলস ঠিক মত খাওয়া উচিত।
বিশেষ করে ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম, আয়রন, ঠিক মত ও সময় মত খাওয়া উচিত। এগুলি গর্ভে থাকা শিশুটির শারীরিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। কোনো কারণে এগুলি ঠিক মত না খেলে তা শিশুটির শুধু ক্ষতি করে তাই নয় শিশুটির জন্মের স্বাভাবিক প্রক্রিয়াটিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। কোনো রকম শারীরিক দুর্বলতা যেমন, জ্বর, সর্দি, কাশি এছাড়া পেটের গন্ডগোল বা যেকোনো রকম অসুবিধা হলে ডাক্তারের পরামর্শ না নিয়ে কোনো রকম ওষুধ খাওয়া একেবারেরই উচিত নয়। বিশেষ করে ব্যথার ওষুধ অত্যন্ত বিপদজনক হতে পারে।
প্রতি ২ মাস অন্তর ওজন মাপা অত্যন্ত জরুরি
গর্ভাবস্থায় সাধারণত আমাদের ওজন বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই. ওজন বৃদ্ধি গর্ভে থাকা শিশুটির স্বাভাবিক শারীরিক বৃদ্ধিকেই দর্শায়। এই সময় আমাদের খাওয়া দাওয়ার পরিমান বৃদ্ধি পায় কারণ গর্ভে থাকা শিশুটিও মায়ের শরীর থেকেই খাবার গ্রহণ করে। ফলত আমাদের ওজন বৃদ্ধি পায়। সাধারণত বয়স ও শারীরিক গঠন অনুযায়ী স্বাভাবিকের তুলনায় কম ওজন থাকলে গর্ভাবস্থায় ২৮ থেকে ৪০ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। যাদের ওজন স্বাভাবিক তাদের ২৫ থেকে ৩৫ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পাওয়া উচিত এবং যাদের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি তাদের ১৫ থেকে ২৫ পাউন্ড ওজন বৃদ্ধি পাওয়া উচিত। এই কারণে প্রতি ২ মাস অন্তর ওজন মাপা অত্যন্ত জরুরি। ওজন না বাড়লে বা কমতে থাকলে এটি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
কখনই খালি পেটে থাকা উচিত নয়
গর্ভাবস্থায় আমাদের খাওয়া দাওয়ার প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। কারণ এই সময় গর্ভে থাকা শিশুটি তার মায়ের দেহ থেকেই কাবার গ্রহণ করে তাই এইসময় কখনই খালি পেটে থাকা উচিত নয়।
তবে একবারে বেশি না খেয়ে বার বার অল্প অল্প করে খাওয়া উচিত। বেশি করে দুধ, দই, সবুজ শাকসব্জি, ফল ইত্যাদি খাওয়া অত্যন্ত জরুরি। এগুলি আমাদের শরীরে ভিটামিন, ও জরুরি নিউট্রিশনস যেমন আয়রন, পটাসিয়াম, জিঙ্ক, মাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড জরুরি ফ্যাটি অ্যাসিড ইত্যাদির যোগান দেয়। এছাড়া সঠিক পরিমানে মাছ, মাংশ ও ডিম ইত্যাদিও অত্যন্ত জরুরি। যাতে আমাদের শরীরে প্রোটিন, ওমেগা ৩ ফাটি অ্যাসিডের যোগান দেয়। যা গর্ভাবস্থায় রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কে বাড়িয়ে তোলে এছাড়া এগুলি গর্ভে পালিত শিশুটির সর্বাঙ্গীন শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য অত্যন্ত জরুরি। এই সময় ঠিক মত খাওয়া দাওয়া না করার ফলে অনেক সময় শিশুটি জন্মাবার পর অপুষ্টির শিকার বা স্বাভাবিক নাও হতে পারে। এছাড়া এই সময় প্রচুর পরিমানে জল পান করা অত্যন্ত জরুরি। তবে এই বাইরের খাবার, ফাস্ট ফুড, একেবারেই খাওয়া উচিত নয়। এছাড়া আনারস না খাওয়াই ভালো।
সময় মত ঘুম এবং পরিমান মত ঘুম এই সময় অত্যন্ত জরুরি
গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৭ থেকে ৮ ঘন্টা ঘুমের প্রয়োজন হয়। অনিদ্রা বা বেশি রাত অবধি জেগে থাকা বা সকালে অনেক দেরী করে ঘুম থেকে ওঠা এই দুটিই শিশুটির জন্য ক্ষতিকারক হতে পারে।
ইনফেকশন বা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে. এর ফলে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে
আপনার চারপাশ বিশেষ করে বিছানা, বাথরুম ইত্যাদি পরিস্কার রাখা অত্যন্ত জরুরি, পাবলিক টয়লেট অত্যন্ত সাবধানে ব্যবহার করা উচিত। এই সমযে খুব তাড়াতাড়ি যে কোনরকম ইনফেকশন বা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকে. এর ফলে গর্ভপাত পর্যন্ত হতে পারে।
নিয়মিত সুগার, প্রেসার ইত্যাদি পরীক্ষা করা উচিত।
কারণ এই সময় অনেকেরই এগুলি স্বাভাবিকের তুলনায় বেড়ে যায় যা মা ও গর্ভেপালিত শিশুটির জন্য ক্ষতিকারক।
স্ট্রেস বা চিন্তা অতিরিক্ত ভালো না এইসময়
কোনো রকম স্ট্রেস বা চিন্তা বা অতিরিক্ত উত্তেজনা কোনটাই এই সময় ভালো নয়। এগুলি সবই আপনার শিশুটির শারীরিক ও মানসিক বিকাশের পথে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তাই এই সময়ে নিজের বিশেষ যত্ন নেওয়া উচিত। যে সমস্ত বিষয় আপনার মনকে ভালো রাখে সেগুলি এইসময়ে করা উচিত। সুন্দর ও সুস্থ পরিবেশ আপনার গর্ভে থাকা শিশুটিকেও আনন্দ দান করে এবং বিকাশ কে ত্বরান্নিত করে।এই সময় যেমন রেস্ট নেওয়া প্রয়োজন তেমনি পুরোপুরি ভাবে বসে থাকা বা শুয়ে থাকা অবাঞ্ছনীয়। অল্প বিস্তর কাজকর্ম, কিছু ব্যায়াম, নিয়মিত হাটাচলা ইত্যাদি আপনার মন ও শরীর কে সুস্থ রাখে। তবে অতিরিক্ত কাজকর্ম, ভারী জিনিস তোলা, সিড়ি দিয়ে বেশি ওঠা নামা করা অনুচিত।
ধূমপান বা মদ্য পান একেবারে করবেন না এইসময়
এইসময় ধূমপান বা মদ্য পান আপনার শিশুটির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক।
প্যাসিভ স্মোকিং ও আপনার শিশুটির জন্য অত্যন্ত মাত্রায় ক্ষতিকারক। এর ফলে গর্ভপাত বা জন্মের পর শিশুটির স্বাভাবিক না হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
গর্ভাবস্থা প্রত্যেক টি নারীর জীবনের সবথেকে সুন্দর মুহূর্ত। বলা হয়ে থাকে মায়ের ভালোলাগা, মন্দলাগা সবই শিশুটির ওপর প্রভাব ফেলে। তাই এই সময় নিজের খেয়াল রাখা মানে নিজের সন্তানের খেয়াল রাখা। তাই এই সময় সুস্থ থাকুন, ভালো বই পড়ুন, গান শুনুন, সাবধানে বাইরে ঘুরতে যান, ঠিক মত খাওয়া দাওয়া করুন। নিয়মিত ও কোনো রকম শারীরিক দুর্বলতা অনুভব করলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
মন্তব্য করুন