বলিউড হোক কিংবা টলিউড তারকাদের আসল বয়স ধরতে পারা বেশ মুশকিল। কেউ কেউ নিজেকে এতোটাই ফিট রাখেন যে আসল বয়স বোঝাই যায় না। যেমন আমাদের টলিউডেই ধরুন আমাদের বুম্বাদা, এখনকার নায়কদের সঙ্গে একেবারে টক্কর দিচ্ছেন ফিটনেস গ্ল্যামারে। আসল বয়স বোঝা দায়। বয়স বাড়লেও দেখে বুঝবে কে। কিন্তু তারকারা এটা করেন কীভাবে? তাদের এই বয়স কমিয়ে রাখার পেছনে রয়েছে কোন রহস্য? চলুন একটু সন্ধান করা যাক।
টলি নায়করা নিজেদের বয়স লুকিয়ে রাখতে কি করেন?
প্রথমেই বলতে হচ্ছে আমাদের বুম্বা দার কথা। বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে কবেই বোঝার উপায় আছে? তার ফিটনেস এবং চকচকে স্কিন দেখে তার আসল বয়স ধরতে পারাই খুব মুশকিল। এর পেছনে রহস্য কি? উত্তর হল প্রতিদিন নিয়ম করে জিম। তার ফিটনেস ট্রেনার হলেন সুশান্ত দত্ত। তার দৌলতেই আমাদের বুম্বাদা এতো ফিট। প্রতিদিন কখনো ফ্রী হ্যান্ড, কখনো ওয়েট ট্রেনিং, কখনো কার্ডিও তো কখনো স্ট্রেচিং শরীর ধরে রাখতে বিভিন্ন ধরণের এক্সারসাইজ চলে। সেই সঙ্গে সঠিক ডায়েটও। যেটা ঠিক করে দিয়েছেন তার ট্রেনার।
নায়ক আবির চট্টোপাধ্যায়ের স্লিম স্মার্ট চেহারাও কিন্তু সকলের নজর কারে। তার এই সুন্দর চেহারার পেছনে প্রধান কারণ হল সপ্তাহে অন্তত ছয়দিন ঘণ্টাখানেকেরও বেশি সময় কাটান জিমে। ফ্রী টাইম পেলেই জিম তার পছন্দের জেয়গা। তার ফিটনেস ট্রেনার প্রশান্ত দলুইএর কথায়, তারও নিয়ম করে একেক দিন একেক রকম ফিটনেস ট্রেনিং চলে। স্ট্রেন্থ ট্রেনিং, অ্যাবডমিনাল এক্সারসাইজ তার শরীরের জন্য যেটা উপযুক্ত সেই সব কিছুই হয়। সঙ্গে অবশ্যই মেনে চলেন সঠিক ডায়েট।
নায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ও নিয়মিত যান জিমে। তার ফিটনেস ট্রেনার তন্ময় সরকার। পরমব্রতর স্লিম অ্যান্ড ফিট বডি টাইপ অনুযায়ী তার এক্সারসাইজ রুটিন সাজান তন্ময়। সেই অনুযায়ী সারা সপ্তাহ চলে ট্রেনিং। ফাংশনাল, মোবিলিটি, আইসোলেশন এইরকম ভাবে তার শরীরের জন্য উপযুক্ত নানারকম এক্সারসাইজ চলে।
এদের মতই আরেক ফিট নায়কের কথা বলতেই হচ্ছে তিনি হলেন টোটা রায়চৌধুরী। তার ছিপছিপে মেদহীন গড়ন এবং চেহারার ঔজ্জ্বল্য দেখলেই বোঝা যায় তিনি নিজের শরীর সম্পর্কে কতটা সচেতন। প্রতিদিন অনেকটা সময় কাটান জিমে। এমনকি ছুটির দিনেও কিন্তু শরীরচর্চা থেকে ছুটি নেন না। বাড়িতেই হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা নামা এসব চলতে থাকে। এবং অবশ্যই একেবারে ঘড়ির কাঁটা ধরে খাওয়াদাওয়া। এদের মতই প্রত্যেক টলি নায়কদের ফিটনেস রহস্য হল জিম এবং সঠিক ডায়েট।
নায়িকাদের সৌন্দর্যের পেছনেও কি বিশেষ রহস্য?
নায়িকা নুসরত জাহান বেশ স্লিম অ্যান্ড ফাইন। ওনার মত স্লিম অনেকেই হতে চান। অবশ্য এই কৃতিত্ব অনেকটাই যায় তার ফিটনেস ট্রেনারের কাছে। তার ফিটনেস ট্রেনার দেব শর্মা। তার কথায় নুসরতের যাতে বডি ফ্লেক্সিবিলিটি বজায় থাকে সেই মত এক্সারসাইজ রুটিন সাজান। আবার অ্যাবডোমিনাল এক্সারসাইজও থাকে। এছাড়াও তার শরীর অনুযায়ী বিভিন্ন এক্সারসাইজ থাকে রুটিনে।
নায়িকা পাওলি দামের ছিপছিপে গড়ন দেখলেই বোঝা যায় তিনি বেশ ভালোই শরীর চর্চার মধ্যে থাকেন। তার ফিটনেস ট্রেনার অভিজিৎ ঘোষালের তত্ত্বাবধানে থাকে পাওলি দামের ফিটনেস। ফিটনেস ট্রেনার যেমন যেমন বলেন সেই অনুযায়ী চলেন নায়িকা। শরীর অনুযায়ী তার শরীরের জন্য উপযুক্ত এক্সারসাইজ রুটিন চলে।
শোনা যায় বলিউডের সারা আলি খানের মত নাকি ওজন বেড়ে গিয়েছিল নায়িকা প্রিয়াঙ্কা সরকারের। প্রায় ৯০ কেজি হয়ে গিয়েছিল তার সন্তান হবার সময়ে। তারপর সেটা থেকে শরীরচর্চা এবং সঠিক ডায়েট মেনে সেই ওজন নামিয়ে আনেন ৫০ কেজিতে। কিভাবে? উত্তর হল নিয়মিত শরীরচর্চা আর ডায়েট। প্রত্যেক নায়িকাই যেমন মিমি চক্রবর্তী, পায়েল সরকার থেকে শুরু করে মধুমিতা সরকার সকলেই নিয়মিত শরীরচর্চা এবং সঠিক ডায়েট মেনে চলেন।
ডায়েটে কি থাকে?
আমাদের বুম্বাদা সকালে উপমা না হলে সুজি সাথে দু তিনটে এগ হোয়াইট, ফল এসব খান। জিমে ঘাম ঝরানোর পর প্রোটিন শেক খান। আবার সন্ধ্যাবেলার স্নাক্সে কফি সাথে বিভিন্ন ড্রাই ফ্রুটস খেতে পছন্দ করেন। লাঞ্চ বা ডিনারে তার পছন্দ চিকেন স্টু। অন্যদিকে আবির চট্টোপাধ্যায়ের ফিটনেস ট্রেনারের ঠিক করে দেওয়া ডায়েটে থাকে বাড়ির তৈরি খাবার। সেটা হতে পারে রুটি সাথে সবজী এবং ডিম সেদ্ধ। কিংবা অন্য খাবার।
আবার নায়ক পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় বাড়ির তৈরি কম তেল ঝাল মশলা যুক্ত খাবারের ওপর জোড় দেন। খুব কড়া ডায়েটে থাকেন না তিনি। প্রোটিনের জন্য ৩ – ৪ ডিম, সেদ্ধ সবজী, চিকেন সেদ্ধ এসব থাকে। আবার কার্বোহাইড্রেটের জন্য ব্রাউন ব্রেড বা ব্রাউন রাইস খেয়ে থাকেন। তার ভক্তদেরও তিনি ভাত রুটি খাবার ক্ষেত্রে ব্রাউন ব্রেড বা রাইস সাথে বাড়ির খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন।
নায়িকা পাওলি দামও খুব কড়াকড়ি ডায়েট করেন না। জোড় দেন বাড়ির খাবারের ওপর। আবার নায়িকা প্রিয়াঙ্কা সরকারের ডায়েটে থাকে প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার বেশি থাকে। নায়িকা নুসরত জাহান একেবারে না খেয়ে খান বারে বারে। তার সারাদিনের খাওয়াদাওয়া ছোট ছোট ভাগে ভাগ কড়া। অন্যদিকে আবার নায়িকা মিমি চক্রবর্তী নিজের ডায়েট চার্ট নিজে সাহাজেই পছন্দ করেন।
ফিট থাকতে ভক্তদের কি বার্তা দিচ্ছেন সেলিব্রেটিরা?
প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় সকালে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার ওপর জোড় দিচ্ছেন। সকালে তার মতই উপমা বা সুজি, সাথে ডিম এবং যেকোনো একটা ফল খেতে পারেন। সন্ধ্যাবেলা স্নাক্স হিসাবে একটু ড্রাই ফ্রুট। কারণ ড্রাই ফ্রুট ভীষণ উপকার শরীরের জন্য। আবার রাতে একদম হালকা অথচ পুষ্টিকর। চিকেন সেদ্ধ বা চিকেনের স্টু। অন্যদিকে পরম্ব্রত চট্টোপাধ্যায় বাড়ির খাবারের ওপর জোড় দিচ্ছেন। তার মতে বাড়ির তৈরি কম তেল মশলা যুক্ত খাবার সবচেয়ে ভালো। এছাড়াও ব্রাউন ব্রেড বা রাইস খাবার কথা বলছেন তিনি।
আবির চট্টোপাধ্যায় জোড় দিচ্ছেন ফলের রসের ওপর। প্রিয়াঙ্কা সরকার টক দইয়ের সঙ্গে আপেল বা কলা মিশিয়ে স্মুদি খাবার পরামর্শ দিচ্ছেন। কারন এটা শরীরের জন্য যেমন ভালো, তেমনই স্কিনও থাকবে সুন্দর। মিমি চক্রবর্তী বেশি করে জল খাবার কথা বলছেন। কারণ তার সৌন্দর্যের রহস্য নাকি এটাই। আবার নায়িকা নুসরতও বাইরের ফাস্ট ফুড না খেয়ে বাড়ির তৈরি কম তেল মশলা যুক্ত খাবারের ওপর জোর দিচ্ছেন। কারণ এই তেল মশলা যুক্ত খাবার থেকে যে শরীরের মারাত্মক ক্ষতি হয় তাই নয়, স্কিনেরও হয়। স্কিন হারায় তার স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা, বয়সের আগেই বুড়িয়ে যায়, আবার নানান সমস্যা তো লেগেই থাকে।
তাহলে কি বুঝলেন? আপনার প্রিয় তারকার মত ফিট এবং সুন্দর থাকতে দুটো জিনিস মাস্ট। প্রতিদিন শরীরচর্চা এবং সঠিক খাবার। জিমে যাবার সুযোগ না থাকলে বাড়িতেই শুরু করে দিন। সাথে একটু হেলদি খাবার আর বেশি করে জল। ব্যাস তাতেই কেল্লা ফতে!
মন্তব্য করুন