আগুনের সামান্য আঁচ শরীর স্পর্শ করলেই আমরা কেঁপে উঠি। আর আগুনের লেলিহান শিখা তো আরও সাংঘাতিক। তাই আগুনের থেকে বাঁচতে সাবধান থাকুন ও সকলকে সাবধান করুন।
আজকের লেখা আগাম সতর্ক বার্তা। কখন কোন জায়গায় আগুন লাগলে আর আপনি সেই স্থানে উপস্থিত থাকলে কি কি করবেন বাঁচার জন্য তা জেনে নিন।
আগুন লাগলে প্রাথমিক অবস্থায় কি কি করনীয়
সবার প্রথমে কি কি করা উচিত তা জেনে রাখা খুবই জরুরী। কারণ সেই বিপদের মুহূর্তে সহজ কয়েকটি জিনিস মেনে চললে আপনার ও অন্যের প্রাণ বাঁচতে পারে।
ফায়ার ব্রিগেড বা অগ্নিনির্বাপক দলের সাহায্য নিন
নানা কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে। ফলে নিজে থেকে আগুন নেভানোর চেষ্টা না করে। বরং আগে নিজে ও অন্যরা তা থেকে নিরাপদে যান। তারপর সাথে সাথে ফায়ার ব্রিগেড বা অগ্নিনির্বাপক দলকে খবর দিন।
ভারতে ফায়ার ব্রিগেড’র নম্বর ১০১। আর আপনার এলাকার সবচেয়ে নিকটতম ফায়ার ব্রিগেড’র নম্বর আগে থেকে জেনে রাখুন। তাহলে তা বেশি সুবিধা জনক।
নিরাপদ দূরত্বে থাকার চেষ্টা

আগুন লাগলে সবার প্রথম সেই জায়গা থেকে নিরাপদ দূরত্বে যাওয়ার চেষ্টা করুন। যদি আপনি অফিস,সিনেমা হল শপিং মল বা এমন জায়গায় আছেন যেখানে ইমারজেন্সি ডোর রয়েছে, তাহলে এই সময় ইমারজেন্সি ডোর বা আপাতকালীন দরজা দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করবেন। খেয়াল রাখবেন যেদিকে আগুন লেগেছে সেদিক দিয়ে না বেরোনোর।
বাড়িতে আগুন লাগলে নিজে, পরিবারের অন্যরা ও পোষা জীবজন্তু থাকলে তাদের বাইরে বেরোনোর ব্যবস্থা করুন সবার প্রথমে। ঘরের জিনিষপত্র নিয়ে বেরোনোর প্ল্যানে থাকবেন না।
বহুতলে থাকলে সিঁড়ি দিয়ে নীচে নামুন। লিফট ভুলেও ব্যবহার করবেন না।
প্যানিক করা বন্ধ করুন
আগুন লাগলে ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। নানা গবেষণা থেকে জানা গিয়েছে অনেক সময় আগুন লাগার দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানি হয় ভয়ের কারণে। তাই ভয়কে জয় করে সেই সময় আগুনের থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন।
- ভয় পেয়ে প্যানিক করলে মাথা কাজ করবে না ফলে বেরোনোর সঠিক চেষ্টা করে উঠতে পারবেন না।
- ভয়ের ফলে আমাদের হার্টবিট বেড়ে যায়, তাই সেইসময় স্বাভাবিকের চেয়ে অতিরিক্ত মাত্রায় হার্টবিট বেড়ে গেলে হার্টফেল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- ভয়ে জোরে জোরে শ্বাস নেওয়ার ফলে সেই সময় আগুন থেকে বর্জিত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড আমাদের নিশ্বাসে অতিরিক্ত মাত্রায় মিশে যায়। ফলে শ্বাসরোধ হয়ে মারা যাওয়ার সম্ভবনা থাকে।
ধোঁয়া থেকে দূরে যান
আগুনের ধোঁয়া থেকে দূরে থাকুন। কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা দেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ আগুনের ধোঁয়া থেকে নির্গত নাইট্রোজেন ডাই অক্সাইড গ্যাস বিষাক্ত। যা চোখে মুখে গেলে প্রাণহানির আশঙ্কা থাকে। বিশেষ করে যাদের শ্বাস কষ্টের সমস্যা আছে তাদের শ্বাসরোধ পর্যন্ত হতে পারে এইসময়।
আগুন লাগলে বিশেষ করে যে বিষয়গুলি খেয়াল রাখবেন
আগুন লাগলে সবার প্রথমে বেরোনোর চেষ্টা করবেন তা থেকে, যদি দেখেন বেরোনোর অপশান নেই তাহলে ঘাবড়ে যাবেন না। সাহায্য আসা অবধি নিজেকে আগুনের থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করবেন।

- রুম লক করে দিন। দরজার নীচে ও উপরে কাপড় ভিজিয়ে তা দিয়ে দরজার ফাঁকা অংশ বন্ধ করুন। ফলে আগুনের ধোঁয়া আপনার রুমে সহজে ছড়িয়ে পরতে পারবে না।
- রুমে যদি তক্তপোষ থাকে তাহলে তা দিয়ে দরজা কভার করে দেবেন। ফলে আগুনের বিষাক্ত ধোঁয়া সহজে ঢুকতে পারবে না।
- বেরোনোর পথ পেলে হামাগুড়ি দিয়ে বেরোনোর চেষ্টা করুন। এতে মেঝের থেকে ফ্রেস এয়ার আপনাকে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে। দরজা খোলার আগে হাত দিয়ে আগে দেখে নিন। গরম লাগলে জানবেন ওদিকে আগুন আছে। দরজা খুলবেন না।
- নিজে একটি কাপড় বা তোয়ালে ভিজিয়ে তা দিয়ে মুখ ঢেকে রাখুন। নাক দিয়ে শুধু নিঃশ্বাস নিন। মুখ দিয়ে না। তোয়ালে বরং দাঁত ও ঠোঁট দিয়ে চেপে রাখুন। এটি আপনাকে নাক দিয়ে শ্বাস নিতে সাহায্য করবে।
- জানলা ভেঙ্গে দেবেন না যদি সেদিকে ধোঁয়া থাকে। বরং তখন জানলার পর্দা সরিয়ে দেবেন যাতে তাতে আগুন না লাগে। আর যদি দেখেন আপনার জানলার দিকে আগুন বা ধোঁয়া নেই তাহলে তা খুলে তাজা বাতাস নেওয়ার চেষ্টা করবেন শ্বাস নেওয়ার জন্য।
- সাহায্য আসার আগে অব্দি নিজের মনকে শক্ত করে আগুনের থেকে বাঁচার চেষ্টা করুন। অনেক মানুষ আগুনের থেকে বাঁচতে বহুতল বিল্ডিং’এর উপর থেকে ঝাঁপ দেন ভয়ে। মারা যান এটা না জেনেই যে আর কয়েক মিনিট অপেক্ষা করলেই সাহায্য পেতেন।
যদি আপনার কাপড়ে আগুন লেগে যায়
এরকম অবস্থায় সঙ্গে সঙ্গে মেঝেতে শুয়ে পরুন। এবার মেঝেতে সারা শরীর রোল করতে থাকুন যতক্ষণ না আগুন নিভে যায়। এরকম করলে আগুন জলদি নিভে যাবে।
মেঝেতে রোল করার সময় হাত দিয়ে মুখ ঢেকে নেবেন যাতে, আগুনের আভা মুখে এসে না লাগে।অযথা লাফালাফি করবেন না আগুন লাগলে, এতে আগুন দ্রুত ছড়িয়ে যায়।
সারাংশঃ আগুন লাগলে সেই সময় কি করবেন স্টেপ বাই স্টেপ
- আগুন লাগার খবর পেলেই সাথে সাথে ফায়ার ব্রিগেডে ফোন করুন। ( ১০১ )
- ঘাবড়াবেন না শান্ত থাকুন।
- কোন দিকে আগুন লেগেছে তা জানার চেষ্টা করুন।
- আগুনের বিপরীত দিকে যে জানলা, দরজা আছে তা ব্যবহার করে বাইরে বেরোনোর চেষ্টা করুন।
- যদি বের হতে না পারেন তাহলে খেয়াল রাখুন – আপনার প্রথম শত্রু আগুন না, ধোঁয়া।
- ধোঁয়া থেকে যতটা দূরে থাকতে পারা যায় তার ব্যবস্থা করুন।
- যে রুমেই থাকুন না কেন তার দরজা জানলা ভালো করে বন্ধ করে দিন।
- তোয়ালে বা কোন কাপড় ভিজিয়ে দরজার নীচের ও উপরের ফাঁকা অংশ বন্ধ করে দিন। যাতে ধোঁয়া ভেতরে প্রবেশ করতে না পারে। যদি এটা করা সম্ভব না হয় তাহলে রুমে থাকা যেকোনো জিনিষ ব্যবহার করে দরজার ফাঁকা অংশ বন্ধ করার চেষ্টা করুন।
- ছোট তোয়ালে বা রুমাল ভিজিয়ে নিজের নাক ও মুখ ঢাকুন। তোয়ালের মাধ্যমেই শ্বাস নিন। এতে ধোঁয়া সহজে আপনার শরীরে প্রবেশ করতে পারবে না।
- নিজেকে শান্ত রাখুন, কেউ না কেউ আপনাকে বাঁচাতে চলে আসবে।
মন্তব্য করুন