ডিম খাওয়ার পর অনায়াসের আমরা ডিমের খোসা ফেলে দিই ডাস্টবিনে। রেখেই বা কি করব! কিন্তু এই ফেলে দেওয়া ডিমের খোসাই আমাদের কতো কাজে আসতে পারে আপনাদের জানা নেই। শরীরের নানা রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া থেকে শুরু করে গৃহস্থালির নানা টুকিটাকি, সবেতেই এই ডিমের খোসা অনবদ্য কাজ দেয়।
১. গাছকে পোকা থেকে বাঁচাতে
গাছে অনেক সময়ে পোকা হতে দেখা যায়। ফুলের মধ্যে এই পোকা আক্রমণ করে কুঁড়ি অবস্থাতেই ফুল ঝড়িয়ে দেয়, পাতা খেয়ে নেয়। কিন্তু ডিমের খোসা পোকার এই আক্রমণ থেকে গাছকে বাঁচাতে পারে। ডিমের খোসায় আছে ক্যালসিয়াম কার্বোনেট আর ম্যাগনেসিয়াম। তাই ডিমের খোসা গুঁড়ো করে গাছের গোঁড়ায় ছড়িয়ে দিলে পোকার আক্রমণ বেশি হয় না।
২. ব্রণর সমস্যায়
ব্রণর সমস্যায় অনেক কিছুই তো ব্যবহার করেছেন। ঘরোয়া অনেক কিছুও ব্যবহার করেছেন। আজ একটা নতুন ফেস প্যাক বলি ডিমের খোসার তৈরি।
উপকরণঃ
- ডিমের সাদা অংশ
- ডিমের খোসা
পদ্ধতিঃ
ডিমের খোসা গুঁড়ো করে নিন। এর সঙ্গে নিয়ে নিন ডিমের সাদা অংশ আর দুটি উপকরণ ভাল করে মিশিয়ে নিন। তারপর এই মিশ্রণ মুখে লাগিয়ে অপেক্ষা করুন ২০ মিনিট মতো। তারপর উষ্ণ জল দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন। সপ্তাহে দুই দিন করলেই হবে। এতে ব্রণ আর ব্রণর দাগ অনেক কমে যাবে।
৩. পোড়া দাগ কমাতে
রান্না করে বাসন বেশি পুড়ে গেছে? এখন এই পোড়া দাগ তুলতে তো কালঘাম ছুটবে। কিন্তু ডিমের খোসা এই সমস্যা অনেক কমিয়ে আনবে। বাসন মাজার সাবানের সঙ্গে ডিমের খোসা মিশিয়ে নিন। এই মিশ্রণ দিয়ে বাসন মাজুন। পোড়া দাগ তো উঠবেই, বাসন আবার আগের মতো ঝকঝক করবে।
৪. চা তেঁতো হয়ে গেছে?
অনেক সময়ে আমরা ভুল করে চা বা কফি বেশি ফুটিয়ে ফেলি। তখন আর কিছু করার থাকে না। কিন্তু এখন থেকে এই তেঁতো ভাব আপনি কমাতে পারবেন। চায়ের লিকারের মধ্যে বড় বড় টুকরো করা ডিমের খোসা দিয়ে দিন। তারপর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চা ছেঁকে নিন। ডিমের খোসার মধ্যে হায়ালুরোনিক নামের এক ধরণের অ্যাসিড আছে। এই অ্যাসিড চায়ের তেঁতো ভাব কমিয়ে আনবে।
৫. গাঁটের ব্যথায় ভুগছেন?
এই এক বড় সমস্যা আজকের দিনে। শুধু বেশি বয়সেই নয়, কম বয়সেও এই সমস্যা হয়। শরীরচর্চা কম করা, বসে কাজ এই সমস্যার মূল কারণ। এখন সমাধান মিলবে কিকরে! অ্যাপেল সিডার ভিনিগার নিন আর এর মধ্যে ডিমের খোসা গুঁড়ো করে রেখে দিন দুই দিন মতো। ডিমের খোসা পুরো গলে যাবে। এই গলে মিশে যাওয়া অ্যাপেল সিডার ভিনিগারের মিশ্রণ হাঁটুতে বা ব্যথার জায়গায় লাগান। অনেক উপকার পাবেন।
৬. দাঁতের সমস্যায়
দাঁতে হলদে ছোপ পড়ে গেছে? কিছুতেই উঠছে না এই দাগ! উপকারে আসবে এই ডিমের খোসা। আপনি যে মাজন ব্যবহার করেন তার মধ্যে মিশিয়ে দিন এই ডিমের খোসা গুঁড়ো। এমন ভাবে মেশাবেন যেন ডিমের খোসা গুঁড়ো দাঁতে লাগে। এইভাবে কয়েক সপ্তাহ মাজন দিয়ে ব্রাশ করলে দাঁত চকচকে হবে। ডিমের খোসার মধ্যে ক্যালসিয়াম আর ম্যাগনেশিয়াম থাকে যা এই সাদা ছোপ তুলতে সাহায্য করবে।
৭. গাছের খাদ্য
গাছের খাদ্য হল গাছের সার। আর সার হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম খুবই উপকারী। এতে মাটির উর্বরতা বাড়ে। কীভাবে গাছের খোসা দেবেন মাটিতে। এক মগ জলে দুটি ডিমের খোসা কিছুটা বড় সাইজ করে ভেঙে মিশিয়ে নিন। এই জল এক সপ্তাহ রেখে দিন। দেখবেন জলের রঙ সাদা হয়ে গেছে। এই সাদা জল এখন ডিমের খোসা থেকে আসা ক্যালসিয়াম আর ম্যাগনেসিয়ামে পূর্ণ। এই জল টবের মাটিতে ছড়িয়ে দিলে খুব ভাল সার হিসেবে কাজ দেয়।
৮. সিঙ্ক পরিষ্কার করতে
অনেক সময়ে বেসিনের বা সিঙ্কের জালির মুখে ময়লা জমে। সেই ময়লা সরাতে খানিক সমস্যা হয়। জল যাওয়া আসা বন্ধ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ডিমের খোসা আপনার কাজে আসতে পারে। ডিমের খোসা মিহি করে গুঁড়ো করে ওই সিঙ্কের বা ড্রেনের মুখে দিয়ে দিন। তারপর বেশি করে জল ঢেলে দিন। দেখবেন ঝাঁজরি বা ড্রেন একেবারে পরিষ্কার হয়ে গেছে।
তাহলে দেখলেন তো, ডিমের খোসার কতো উপকার। এবার থেকে ডিমের খোলা না ফেলে কাজে লাগান।
মন্তব্য করুন