আমরা বাঙালিরা মশলা বাদ দিয়ে কোনো কিছু রান্নার কথা চিন্তাই করতে পারি না। আর আমাদের রান্নার প্রধান মশলাগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে পেঁয়াজ। আমাদের রান্নায় পরিপূর্ণতা আসে না পেঁয়াজ ছাড়া। এছাড়া সবজি, সালাদ, আচার হিসেবেও পেঁয়াজের প্রচলন ব্যাপক। এদিকে চিন্তার বিষয় হচ্ছে বাজারে পেঁয়াজের দামও বেশ বাড়তি। অনেকেই তাই কমিয়ে দিচ্ছেন পেঁয়াজ খাওয়া, অনেকে আবার খাদ্য তালিকা থেকে পেঁয়াজের নামটা বাদ দেবার কথাও ভাবছেন। তাহলে কি করা যায়?
আপনি চাইলেই আপনার বাসার বারান্দায় কিংবা বাগানের টবে অথবা ছাদে খুব সহজেই পেঁয়াজ চাষ করে আপনার পরিবারের প্রাত্যহিক চাহিদা মেটাতে পারেন। এই পদ্ধতিতে পেঁয়াজ চাষে খুব বেশি খরচেরও দরকার হয় না। আর প্রায় সারা বছরই চাষ করা যায়। তাহলে আসুন জেনে নেই বাড়িতেই পেঁয়াজ চাষের খুবই সহজ ও কার্যকরী উপায় –
ধাপ – ১
বাড়িতে পেঁয়াজ চাষ করতে হলে প্রথমেই আপনাকে স্থান নির্বাচন করতে হবে। আপনার বাসার বারান্দা, বাগান কিংবা ছাদে এমন একটি যায়গা ঠিক করুন যেখানে প্রচুর আলো ও বাতাস পাওয়া যায় এবং সরাসরি সূর্যের আলো পরে। যে কোনো উদ্ভিদের ফলনের জন্য এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ধাপ – ২
এরপরে আপনার প্রয়োজন হবে একটি মাঝারি আকারের টব। যদি বেশি যায়গা থাকে তাহলে বড় ধরনের টব বা একাধিক টবও নিতে পারেন। আবার যায়গা কম হলে ছোট টবেও কাজ চলবে। মাঝারি আকারের একটি টবে মোটামুটি প্রায় ৫০টির মতন পেঁয়াজ চাষ করা সম্ভব। চাইলে কাঠের বা প্লাস্টিকের তৈরি কন্টেইনারেও পেঁয়াজ চাষ করতে পারেন। তবে কন্টেইনার বা টব যেটাই ব্যবহার করুন না কেন, তাতে পানি নিষ্কাশনের সুব্যবস্থা থাকতে হবে।
ধাপ – ৩
উর্বর মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য জরুরি। দোআঁশ এবং বেলে-দোআঁশ মাটি পেঁয়াজ চাষের জন্য উত্তম। আলাদা একটি পরিষ্কার স্থানে বা পাত্রে বেলে এবং দো-আঁশ মাটি ভালোভাবে মিশিয়ে নিন। মাটির সাথে জৈব সার বা কম্পোস্ট সারও মিশিয়ে নিতে পারেন। এসব সার ফলনের জন্য ভালো। মাটিতে থাকা আগাছা, ময়লা, পাথর ইত্যাদি পরিষ্কার করে নিন। এঁটেল মাটিতে পেঁয়াজ চাষাবাদ করা যায় না। পেঁয়াজ অম্লীয় ধরনের মাটি পছন্দ করে।
ধাপ – ৪
এবারে যেই টবে পেঁয়াজ লাগাতে চান, সেই টবটি মাটি দিয়ে ভরে নিন। বাজার থেকে শেকড়সহ বা শেকড় ছাড়া পেঁয়াজ নিয়ে আসুন বা পেঁয়াজের বীজ সংগ্রহ করুন।
ধাপ- ৫
এবারে পেঁয়াজ মাটিতে লাগানোর পালা। শেকড় ছাড়া পেঁয়াজ হলে এটির মুখ এবং পেছনের দিকের অংশ সামান্য কেটে ফেলুন। শেকড়সহ পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এরকম করার কোনো প্রয়োজন নেই। এবারে টব ভর্তি মাটির মধ্যে আঙুল দিয়ে গর্ত করে তাতে ওই পেঁয়াজ ঢুকিয়ে দিন। অনেকটা পুঁতে ফেলার মতন। পেঁয়াজ মাটিতে পুঁতে ফেলার পর এর উপর দিয়ে গুঁড়া মাটির হালকা আস্তরণ দিয়ে দিতে পারেন। এবারে এই মাটির উপরে খুবই অল্প করে পানি ছিটিয়ে দিন।
ধাপ – ৬
আপনি চাইলে সরাসরি বীজ বুনেও পেঁয়াজ চাষাবাদ করতে পারেন। সেক্ষেত্রে বীজ ভালো কিনা তা অবশ্যই নিশ্চিত হয়ে নেবেন। ভালো বীজ হাতে নিয়ে চাপ দিলে চাপ বসে না, দাঁত দিয়ে চাপ দিলে ভেঙ্গে যায় এবং পানিতে দিলে ডুবে যায়। খারাপ বীজের ক্ষেত্রে এর উল্টোটা হয়। বীজ বোনার ক্ষেত্রে টবের মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে হালকা গর্ত করে বীজ পুঁতে দিন। এরপর উপরে হালকা করে কিছু মাটি দিয়ে দিন এবং অল্প পরিমানে পানি দিন।
ধাপ – ৭
উপরের পুরো প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হলে সরাসরি সূর্যের আলো পরে এমন জায়গায় টবটি সরিয়ে রাখুন। নিয়মিত পানি দিন। ৬-১০ দিন পর দেখতে পাবেন টবে পুঁতে রাখা পেঁয়াজ বা বীজ থেকে পাতা বের হয়েছে। পেঁয়াজ পাতা খেতে ইচ্ছে হলে তা আপনি আপনার সুবিধা মতন কয়েক দিন পর পর কেটে নিতে পারেন। না কাটলে দেখা যায় পেঁয়াজের পাতাগুলো কিছুদিন পর সবুজ থেকে হলদেটে হয়ে যাচ্ছে।
ধাপ – ৮
পেঁয়াজ গাছের ঘাড় বা গলা যদি শুকিয়ে যায় বা ভেঙে হেলে পড়ে, তাহলে বুঝতে হবে পেঁয়াজ উঠিয়ে ফেলার সময় হয়ে গেছে। সাধারণত পেঁয়াজ টবে লাগানোর ১১০-১২০ দিনের মধ্যেই এটি উঠিয়ে ফেলা যায়। বীজের ক্ষেত্রে ৯০-১০০ দিনের মধ্যেই পেঁয়াজ উত্তোলনের সময় চলে আসে। পেঁয়াজের ভালো ফলন পেতে চাইলে পেঁয়াজ উত্তোলনের পনের থেকে বিশ দিন আগে গাছের ডগা ভেঙে দিন।
ধাপ – ৯
রোদ আছে এমন দিনে পেঁয়াজ সংগ্রহ করুন। মাটি লেগে থাকলে পরিষ্কার করে ফেলুন। পেঁয়াজ মাটি থেকে উঠিয়ে ফেলার পর মাটির সার্ফেসে রেখে সূর্যালোক ও বাতাসের সংস্পর্শে ভালোভাবে শুকিয়ে রাখুন। এতে করে দীর্ঘদিন পেঁয়াজ সংরক্ষন করতে পারবেন। সংরক্ষনের আগে বেছে বেছে নষ্ট বা ত্রুটিযুক্ত পেঁয়াজ আলাদা করে ফেলুন।
পেঁয়াজ সাধারণত ঠান্ডা জলবায়ুর ফসল, শীতকালে এর ফলন ভালো হয়। বসন্তের প্রথম ফসলের মধ্যে একটি হচ্ছে পেঁয়াজ। যদিও সঠিক ব্যবস্থাপনা থাকলে সারা বছরেই পেঁয়াজের চাষ করা সম্ভব। তবে মনে রাখবেন, শীত এবং বর্ষা বাদে অন্যান্য সময়ের পেঁয়াজ তাপমাত্রা বেশি থাকার কারনে কিছুটা ঝাঁঝালো ধরনের হয়ে থাকে। যদি আপনি শীতকাল ধরে পেঁয়াজ সংরক্ষণ করতে চান তবে আপনি বায়ু চলাচল করে এমন স্থানে ঝুলিয়ে রেখে দিতে পারেন।
মন্তব্য করুন