জানেন দুর্গা পুজোয় দেবীর মূর্তি তৈরির কাজে যে মাটি ব্যবহৃত হয়, তাতে রাজদরবারের মাটি, চৌমাথার মাটি, গজদন্ত মৃত্তিকা, নদীর দুই তীরের মাটি, গঙ্গামাটি যেমন ব্যবহার করা হয়, তেমনই ব্যবহার করা হয় বেশ্যালয় বা পতিতালয়েরও মাটি। পতিতাদের তো আমরা সমাজের মূল স্রোত থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই অভ্যস্ত।
এমনকি শহরের চৌহদ্দি থেকেও তাদের দূরে সরিয়ে রাখার সবরকম বন্দোবস্ত করা হয়েছে। তাও কেন দুর্গা মূর্তি তৈরির মাটিতে থাকে পতিতা পল্লীর স্পর্শ? আসুন, জেনে নেওয়া যাক সে কাহিনী।
কেন পতিতা পল্লীর মাটি?
পুরুষ যখন কোনো পতিতার বাড়ি গিয়ে যৌনাচার করে, তখন তার জীবনের সমস্ত পুন্য পতিতার বাড়ির মাটিতে স্থান পায় বলে মনে করা হয়ে থাকে। এর পরিবর্তে পুরুষ পতিতার ঘর থেকে নিয়ে আসে পাপ। বহু পুরুষের পুন্যে তাই পতিতাদের বাড়ির মাটি পরিপূর্ণ থাকে বলে মনে করা হয়। এই কারণেই দুর্গা পুজোর মতো পবিত্র কাজে পতিতা পল্লীর মাটি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
অন্য কাহিনী
এছাড়া প্রচলিত বিশ্বাস আছে যে, মানুষের কামনা, বাসনা, লালসা, লোভ, কদর্যতাকে পতিতারা নিজের মধ্যে ধারণ করে নিজেকে অশুদ্ধ, অপবিত্র করে সমাজকে পবিত্র, পরিশুদ্ধ রাখে, সমাজের নৈতিকতাকে তারা একভাবে বজায় রাখতে সাহায্য করে। তাই দেবী পুজোর মূর্তি তৈরিতে পল্লী সমাজের মাটি গ্রহণ করা আদতে তাদেরই খানিক সম্মান দেখানো!
তাছাড়া হিন্দু পুরাণে বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে পতিতাদের ক্ষমতা নাকি দেবতাদের থেকেও বেশী। কারণ ঋষি বিশ্বামিত্র যখন ইন্দ্রত্ব লাভের জন্য কঠোর তপস্যায় ব্রতী হয়েছিলেন, তখন তাঁর ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য দেবরাজ ইন্দ্র মেনকাকে পাঠান। মেনকার নৃত্যের ফলে বিশ্বামিত্রের ধ্যান ভঙ্গ হয়। ফলে দেবরাজ ইন্দ্র সর্বশক্তিমান হয়েও যা পারলেন না, মেনকা সামান্য নারী হয়ে তা হেলায় করে ফেলল!
নারীশক্তিকে সম্মান জানান
মা দুর্গা যেহেতু সমগ্র নারীশক্তিরই প্রতীক, তাই পতিতাকেও এখানে সমগ্র নারীজাতিরই এক অঙ্গ হিসেবে দেখা হয়। তাই দুর্গাপুজোয় অষ্টকন্যার ঘরের মাটি নেবার পর নবম কন্যা হিসেবে পতিতালয়ের মাটি মূর্তি তৈরির সময় ব্যবহার করা হয়।
এই নবকন্যা হলেন-
- নর্তকী/ অভিনেত্রী
- কাপালিক
- ধোপানী
- নাপিতানি
- ব্রাহ্মণী
- শূদ্রাণী
- গোয়ালিনী
- মালিনী
- পতিতা
আর দুর্গাপুজোর মূল উদ্দেশ্য যেহেতু সমস্ত নারীজাতিকেই সম্মান দেখানো, তাই পতিতাকেও এখানে সম্মান দেখানোর রীতি চলে আসছে।
তাহলে দুর্গাপুজোর মতো পবিত্র পুজোয় কেন পতিতালয়ের মাটি ব্যবহার করা হয় তা জানতে পারলেন। আজ এ পর্যন্তই। পরের বার দুর্গা পুজোর আরও মজাদার সব কাহিনী নিয়ে হাজির হব আমরা।
মন্তব্য করুন