সুন্দর স্কিন পেতে দরকার সঠিক পরিচর্যা। সে স্কিন টাইপ যাই হোক না কেন। কিন্তু স্কিন যদি ড্রাই হয় পরিচর্যা আরও বেশী দরকার। কারন ড্রাই স্কিন সঠিক পরিচর্যার অভাবে আরও ড্রাই হতে থাকে এবং আপনার বয়সের আগে স্কিনের বয়স অনেক বেড়ে যায়।
স্কিনের এজিং প্রসেস অনেক আগেই শুরু হয়ে যায়। আপনার স্কিন দেখে আপনাকে বয়স্ক লাগুক নিশ্চয়ই চাইবেন না। তাই স্কিন যদি ড্রাই হয় তাহলে আজ থেকেই শুরু করে দিন তার সঠিক পরিচর্যা। কিন্তু কীভাবে? চিন্তা নেই, আছেন তো স্কিন স্পেশালিষ্ট কেয়া শেঠ। আপনার স্কিনের সঠিক পরিচর্যা কীভাবে করবেন আজ টিপস দিচ্ছেন তিনি।
ড্রাই স্কিনের রুটিনঃ
সপ্তাহে অন্তত তিনদিন স্ক্রাবিং করুন
স্কিনকে পরিষ্কার রাখা খুব দরকার। স্কিন অয়েলি হলে মুখ তেলতেলে হয়ে গেলে আমরা পরিষ্কার করি। কিন্তু ড্রাই স্কিনে সেটা তেমন করা হয় না। আর ভুল এটাই। ড্রাই স্কিনেও তো বাইরের ধুলো, ময়লা, মৃত কোষ জমা হয়। তাই পরিষ্কার না করলে ওগুলো জমে স্কিনে আরও টান ধরবে আর স্কিন আরও ড্রাই লাগবে।
তাই কেয়া শেঠের স্পেশাল টিপস সপ্তাহে অন্তত তিনদিন স্ক্রাবিং করুন এবং শুধু মুখে নয় স্নানের আগে পুরো শরীরে স্ক্রাবিং করে নিন। কারণ ড্রাই স্কিন তো গোটা শরীর জুড়েই। এক্ষেত্রে কেয়া শেঠের যেকোনো স্ক্রাবার দিয়ে স্ক্রাবিং করে নিতে পারেন।
সঠিক টোনার
ক্লিনজার হোক বা স্ক্রাবার যাই দিয়েই পরিষ্কার করুন না কেন, এর পরের স্টেপ হল টোনার। স্কিন পরিষ্কার করার পর অবশ্যই টোনার ব্যবহার করতে হবে। পরিষ্কার করার পর স্কিনের ময়েশ্চারটা ধুয়ে যায়, টোনার সেটাকে লক করে।
কেয়া শেঠের বিভিন্ন টোনার রয়েছে। তার মধ্যে অরেঞ্জ বা কিউকামবার টোনার ড্রাই স্কিনের জন্য ভালো। তুলোয় করে টোনার নিয়ে সারা মুখে লাগিয়ে নিন। কিচ্ছুক্ষণ লাগিয়ে রাখুন। আসতে আসতে স্কিন ওটা টেনে নেবে।
গরমকালেও ময়েশ্চারাইজার দরকার
গরমকাল মানেই কোন ময়েশ্চারাইজার দরকার নেই এমনটা নয়। স্কিনের ময়েশ্চার ধরে রাখতে এটা সারাবছর দরকার। রাতে বিশেষ করে ময়েশ্চারাইজার মাখা খুব জরুরী। কারণ রাতে স্কিন নিজেকে রিপেয়ার করে তাই ওইসময় স্কিনের এক্সট্রা নারিশমেন্ট দরকার হয়। আর এই জন্যই হালকা কোন ময়েশ্চারাইজার আদর্শ। এমনিতেও গরমকালে হালকা ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হয়।
যাদের খুব ড্রাই স্কিন তারা কেয়া শেঠের অরেঞ্জ ক্রিম লাগিয়ে শুতে পারে। আর বয়স একটু বেশী হলে, যেমন ২৭ বা ২৮ থেকেই স্কিন এজিং এর দিকে কেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে কেয়া শেঠের অরেঞ্জ ক্রিমের বদলে স্টপেজ ক্রিম বা স্টপেজ ভি যেকোনো একটি ক্রিম মেখে শুতে পারে। অল্প বয়সে অরেঞ্জ ক্রিম যথেষ্ট। দুটো একসাথে মাখার দরকার নেই।
হাত খুব বেশী ড্রাই লাগলে
এখন করোনার জন্য হাত ধোঁয়া অনেক বেড়ে গেছে। আমরা বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি। স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি। এতে হাত কিন্তু খুব ড্রাই হয়ে যাচ্ছে। হাতের স্কিনের স্বাভাবিক ময়েশ্চার নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। ব্যাগে স্যানিটাইজারের সাথে সাথে ময়েশ্চারাইজারও রেখে দিন। দিনে দু তিনবার করে হাতে লাগিয়ে নিন।
মুখে অতিরিক্ত গরমে ক্রিম মাখতে ইচ্ছা না করলে, কোন হাইড্রেটিং টোনার ব্যবহার করতে পারেন। এতে স্কিন যেমন হাইড্রেটেড থাকবে শুকিয়ে যাবে না, তেমনই ভালো থাকবে। এক্ষেত্রে কেয়া শেঠের শসা, নিম বা ডাবের যে হাইড্রেটিং টোনারগুলো রয়েছে যেকোনো একটি মুখে মাঝে মাঝে স্প্রে করতে থাকুন। দেখবেন অনেক রিফ্রেশ লাগবে।
শুষ্ক ঠোঁটের যত্নে
ড্রাই স্কিন হলে ঠোঁটও বেশ শুকিয়ে থাকে। তাই লিপবাম তো ব্যবহার করতেই হবে। সাথে বাড়িতে ঘরোয়া উপায়ে ঠোঁটের জন্য কিছু করতে পারেন। নারকেল তেল ও মধু একসাথে মিশিয়ে ঠোঁটে ১৫ থেকে ২০ মিনিট লাগিয়ে রাখুন। এটা রোজই করতে পারেন। ঠোঁট অনেক নরম থাকবে।
আমরা যেমন মুখে স্ক্রাবিং করি তেমনই ঠোঁটেও স্ক্রাবিং করা যায়। এতে ঠোঁট কম ড্রাই হয় ও ভালো থাকে। ঠোঁটের ময়লা পরিষ্কার হয়ে যায়। বাড়িতে ঘরোয়া উপায়ে করে নিতে পারেন।
এরজন্য অল্প একটু কফি গুড়ো ও মধু নিন। ভালো করে মিশিয়ে নিন। এবার এটা ঠোঁটে হালকা হাতে ঘষতে থাকুন। সার্কুলার মোশনে ম্যাসেজ করুন ১মিনিট। তারপর আরও ১মিনিট রেখে দিন। তারপর হালকা গরমজলে ধুয়ে নিন।
আরও কিছু টিপসঃ
- রোজ ক্লিনজিং টোনিং করার পর ব্যবহার করতে পারেন ড্রাই স্কিন স্পেশাল হাইড্রেটিং সিরাম। স্কিন আরও ভালো থাকবে। এটা রোজই ময়েশ্চারাইজার লাগাবার আগে লাগিয়ে নিন। কিচ্ছুক্ষণ পর ময়েশ্চারাইজার মাখুন।
- রোজ অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করবেন। ড্রাই স্কিনে কিন্তু এজিং প্রসেস তাড়াতাড়ি শুরু হবার সম্ভবনা থাকে। আর রোদের ইউভি রে থেকে এটা আরও তাড়াতাড়ি হবে।
- অ্যান্টি এজিং প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে উন্নত মানের ব্যবহার করুন। যেকোনো প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে ভালোর বদলে আরও ক্ষতি হবার সম্ভবনাই বেশী।
- স্নানের জলে আপনার বডি ওয়েল একটু মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে স্কিনও ময়েশ্চারাইজড থাকবে।
- মাঝে মাঝে ক্লিনজিং, টোনিং এর পর একটু অ্যালোভেরা জেল মুখে ম্যাসেজ করে নিতে পারেন। এতেও স্কিন ভীষণ ভালো হাইড্রেটেড থাকে। এটা লাগাবার মিনিট দশেক পর ময়েশ্চারাইজার লাগান।
- এছাড়াও স্কিন খুব ড্রাই হলে মাঝে মাঝে স্নানের আগে অল্প নারকেল তেল মুখে মাখতে পারেন। এটাও খুব ভালো কাজ দেবে। নারকেল তেলে থাকে ফ্যাটি অ্যাসিড যেটা স্কিনকে হাইড্রেটেড রাখে। স্কিনকে ময়েশ্চারাইজড রাখে।
- স্কিনকে সবসময় হাইড্রেটেড রাখার চেষ্টা করুন। শুকিয়ে যেতে দেবেন না। বেশী করে জল খান। রোজ ফল শাকসবজি খান। বিশেষ করে মরশুমি জলীয় ফল।
- ভিটামিন ই ও ওমেগা থ্রী ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত খাবার বেশী খান।
প্রতিদিনের স্কিন রুটিনটা কেমন হতে পারেঃ
প্রতিদিন স্কিন কেয়ারে তিনটি জিনিস মাস্ট। ক্লিনজিং,টোনিং,ময়েশ্চারাইজিং। প্রথমে মুখ পরিষ্কার করে নিন। তারপর টোনার লাগিয়ে রাখুন কিচ্ছুক্ষণ। মানে টোনার লাগানোর পর মিনিট ১০ অপেক্ষা করুন। টোনার স্কিনে ভালোভাবে টেনে নিলে লাগান ময়েশ্চারাইজার। এটা হল বেসিক। এবার অনেকেই সিরাম ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারের আগে লাগান। সিরাম ভালোভাবে শুকিয়ে গেলে তারপর ময়েশ্চারাইজার লাগান।
সিরাম না থাকলে অ্যালোভেরা জেল ও লাগাতে পারেন। অনেকেই নাইট ক্রিম বা অ্যান্টি এজিং ক্রিম ব্যবহার করেন। সেক্ষেত্রে সব একই থাকবে খালি ময়েশ্চারাইজারের বদলে নাইট ক্রিম। বা সন্ধ্যাবেলা বাড়ি ফিরে এটা করে রাতে শোবার আগে অ্যান্টি এজিং ক্রিম লাগিয়ে নিতে পারেন।
মন্তব্য করুন