শুষ্কতার ফলে ত্বকের স্বাভাবিকতা হারিয়ে যায়। চামড়া ঢিলে হয়ে যায়, চামড়া ওঠে,ত্বকের উজ্জ্বলতা কমে যায়। ত্বক জেল্লা হারিয়ে নিষ্প্রাণ হয়ে পরে। তাই আজ আমরা জেনে নেবো দুইটি বিশেষ ফেস প্যাকের আদ্যোপান্ত, যা আপনার ত্বকের যত্ন নেবার পাশাপাশি আপনার ত্বককে করে তুলবে আরো প্রাণবন্ত ও জেল্লাময়। তবে তার আগে ঠিক কি কি কারনে ত্বক শুষ্ক হতে পারে তা জেনে নেয়া জরুরি।
ত্বকের শুষ্কতার কারনঃ
- আমাদের দেশের আবহাওয়া নাতিশীতোষ্ণ ধরনের, না শীত – না গরম। গরমের সময়টায় সূর্যের আলো সরাসরি আমাদের ত্বকে পরলে ত্বক শুষ্ক থাকে, আবার শীতের ঠান্ডা বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকে বলে এ সময়টাতেও ত্বক শুষ্ক ও খসখসে হয়ে যায়।
- শরীরে ভিটামিন এ, ভিটামিন বি, জিংক, ফ্যাটি এসিড – এসবের অভাব হলেও ত্বক শুষ্ক থাকে। এছাড়া দূষণ, ধুলোবালি, ক্ষারযুক্ত সাবান, অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ, ক্লোরিনযুক্ত পানি ব্যবহার, স্যুট করে না এমন উপাদান ত্বকে ব্যবহার, ধূমপান এসবের ফলেও ত্বকে শুষ্কতা দেখা দেয়।
ত্বকের শুষ্কতা দূর করতে ফেস প্যাকঃ
ত্বকের যে কোনো সমস্যা সমাধান করতে ফেস প্যাক খুবই জরুরি। ফেস প্যাক ত্বকের যে কোনো সমস্যায় সবচেয়ে কম সময়ে দ্রুততার সাথে কাজ করে। তবে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে আপনি কোন সমস্যার জন্য কোন ফেস প্যাকটি ব্যবহার করবেন।
প্রথম ফেস প্যাকঃ
যা যা লাগবেঃ
- মধু, গোলাপ জল
- অ্যালোভেরা জেল
- ভিটামিন ই ক্যাপসুল
- বেসন
- কাঁচা দুধ
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
দুই টেবিল চামচ বেসনের সাথে পরিমান মত কাঁচা দুধ মিশিয়ে ঘন পেস্ট তৈরি করুন। এর সাথে একটি ভিটামিন ই ক্যাপসুল, কয়েক ফোঁটা মধু, সামান্য অ্যালোভেরা জেল ও গোলাপ জল মিশিয়ে আধ ঘন্টা রেখে দিন। ফেসওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে এরপর মুখমন্ডলে ফেস প্যাকটি লাগান।

আধ ঘন্টা অপেক্ষা করুন, এরপর ঠান্ডা পানিতে মুখ ধুয়ে নিন। এরপর অবশ্যই ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন। সপ্তাহে দুই দিন নিয়ম করে এই ফেস প্যাকটি ব্যবহার করতে পারলে আপনার শুষ্ক ত্বক হয়ে উঠবে জেল্লাময়।
উপকারিতাঃ
ছয়টি উপাদানে তৈরি এই ফেস প্যাকটির প্রতিটি উপাদানই ত্বকের শুষ্কতা দূর করে এবং ত্বকের আদ্রতা ধরে রাখতে সাহায্য করে। অ্যালোভেরা ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। বেসন ও কাঁচা দুধের ল্যাকটিক এসিড ত্বককে এক্সোফোলিয়েট করে, ফলে ত্বকের গভীরে লুকিয়ে থাকা ময়লা ও মরা চামড়া দূর করে।
ভিটামিন ই ক্যাপসুল ত্বককে রিপেয়ার করে। গোলাপ জল ত্বককে কোমল রাখে ও টোনার হিসেবে কাজ করে। মধু ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়, ত্বকে লুকিয়ে থাকা জীবাণু ধ্বংস করে ও ত্বকের জেল্লা বাড়িয়ে ত্বককে ভালো রাখতে সাহায্য করে।
দ্বিতীয় ফেস প্যাকঃ
যা যা লাগবেঃ
- গ্লিসারিন
- কাঁচা হলুদ
- মধু
- দই
- কলা
- শসার রস
যেভাবে তৈরি করবেনঃ
প্রথমেই শসা কুঁচিয়ে রস আলাদা করে নিন। এবার একটি কলা ভালোভাবে চটকে নিন যেন কোনো শক্ত অংশ না থাকে। কাঁচা হলুদ বেটে নিন কিংবা শুকিয়ে গুড়ো করে নিন। এবার সবগুলো উপাদান একসাথে মিশিয়ে নিন।
মুখ পরিষ্কার করে ধুয়ে মুখে এই ফেসপ্যাকটি লাগিয়ে ফেলুন। পুরোপুরি শুকিয়ে গেলে স্বাভাবিক তাপমাত্রার পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন। সপ্তাহে তিন দিন ব্যবহারেই আপনার ত্বকের হারিয়ে যাওয়া জেল্লা ফিরে আসবে আর শুষ্কতাও হবে দূর। অবশ্যই ফেস প্যাক ব্যবহারের পর ত্বকে ময়েশ্চারাইজার লাগাবেন।
উপকারিতাঃ
যে কোনো ধরনের ত্বকের জন্য কাঁচা হলুদ খুবই ভালো। সত্যি বলতে ত্বকের এমন কোনো সমস্যা নেই যার সমাধান হলুদে নেই। গ্লিসারিন ত্বকের স্বাভাবিক আর্দ্রতা ধরে রাখে। আর শুষ্কতা দূর করতে মধুর উপকারিতা তো নতুন করে বলার কিছুই নেই।
দই ত্বককে হাইড্রেট রাখে সেই সাথে ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে। দইয়ের অ্যান্টি ফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল গুণের কারণে ত্বকে ব্রণের উপদ্রব কমে যায়। কলায় থাকা অ্যান্টি অক্সিডেন্ট ও ফটোকেমিক্যালস শুষ্ক ত্বকের জন্য উপকারী। শুষ্ক ত্বকের প্রাণ ফেরাতে শসার রস বেশ ভালো প্রাকৃতিক টোনার।
মন্তব্য করুন