শুটকি কোন ভিন্ন প্রজাতির মাছ না, কাঁচা মাছ লবণ দিয়ে কড়া রোদে শুকিয়ে নিয়ে তৈরি করা হয় শুটকি। তীব্র রোদে মাছের শরীরের জলীয় অংশ শুকিয়ে যায়। এতে মাছ পরবর্তীতে জীবাণুমুক্ত থাকে। শুটকিতে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ডি, খনিজ লবণ, প্রোটিন এবং কোলেস্টেরল। কঠোর পরিশ্রমী, গর্ভবতী ও প্রসূতি মা, বাড়ন্ত শিশুদের স্বাস্থ্যের জন্য শুটকি উপকারী। কিন্তু ভারী ওজনের ব্যক্তি, হাই কোলেস্টেরল বা জটিল রোগে ভুগছেন এমন কারো পক্ষে শুটকি না খাওয়াই ভালো।
শুটকি গন্ধে যেমনই হোক, খেতে কিন্তু ভালোই লাগে। আমরা যারা শুটকি পছন্দ করিনা তারা বেশি করে আলু দিয়ে শুটকি রেঁধে খাই৷ কিন্তু আলু ছাড়াও অন্যভাবে রেঁধে দারুণ মজার শুটকির তরকারি খাওয়া যায়। আজকের আয়োজনে থাকছে শুটকি মাছের ৫ রকমের রেসিপি বাংলাদেশীয় স্টাইলে।
১. লইট্টা শুটকি আর বেগুনের ভুনা তরকারি
যা যা লাগবে
- বেগুন (১ ইঞ্চি টুকরা করে কেটে রাখবেন) – আধা কেজি
- লইট্টা শুটকি (লম্বা করে টুকরা করা থাকবে) – আধা কাপ
- পেঁয়াজ কুচি – আধা কাপ
- আদা বাটা – ১ চা চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া – দেড় চা চামচ
- কাঁচা মরিচ (ফালি) – ৬/৭টি
- ধনেপাতা – প্রয়োজনমতো
- তেল – পরিমাণমতো
- লবণ – স্বাদমতো
- পানি – প্রয়োজনমতো
যেভাবে রাঁধবেন
রান্নার আগে লইট্টা শুটকি সিদ্ধ করে নিতে হবে। একটি পাত্রে পরিমাণমতো পানি নিয়ে চুলায় বসিয়ে দিন। পানি গরম হয়ে আসলে লইট্টা শুটকির টুকরাগুলোকে দুই থেকে তিন মিনিট সিদ্ধ করুন। সিদ্ধ করা হয়ে গেলে ঠান্ডা পানিতে মাছটা দুই-তিনবার ধুয়ে নিন।
এবার প্যানে তেল গরম করে তাতে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি আর কাঁচামরিচ অল্প করে ভেজে নিন। তারপর এতে আদা বাটা, রসুন বাটা এবং অল্প একটু পানি দিয়ে সব একসাথে ভালো করে মিশিয়ে দিন। এবার হলুদ গুঁড়া ও ধনিয়া গুঁড়া দিয়ে পুরো মশলাটা ভালোভাবে কষিয়ে নিন।
মশলা কষানো হলে এতে লইট্টা শুটকি ঢেলে দিন এবং মশলা মাছের সাথে না মেশা পর্যন্ত নাড়তে থাকুন। মাছের সাথে মশলা যখন মাখামাখা হয়ে আসবে তখন মাছ কষানোর জন্য ঢাকনা দিয়ে ৫ মিনিট ঢেকে রাখুন। ৫ মিনিট পরে স্বাদমতো লবণ আর বেগুনের টুকরা দিয়ে দিন এবং সব উপকরণ ভালোমতো মিশিয়ে দিন।
এখন এটাকে ঢাকনা দিয়ে ২-৩ মিনিট ঢেকে রাখুন। তারপর দরকারমতো পানি দিয়ে আরেকটু নেড়ে আবার ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। ১০ মিনিট পরে ধনেপাতা মিশিয়ে আবারো ৫ মিনিট অল্প আঁচে দিয়ে ঢেকে রাখুন। এরপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
২. কাচকি শুটকি – আলু ভাজি
যা যা লাগবে
- কাচকি শুটকি – ২ মুঠো
- আলু (কুচি) – বড় সাইজের ২টি
- পেঁয়াজ কুচি – মাঝারি সাইজের ১টি
- রসুন কুচি – বড় সাইজের ২/৩ কোয়া
- জিরা (আস্ত) – আধা চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- কাঁচামরিচ (ফালি) – ৫/৬টি
- লবণ – স্বাদমতো
- তেল – পরিমাণমতো
- পানি – পরিমাণমতো
যেভাবে রাঁধবেন
শুটকি প্রথমে খালি তাওয়ায় টেলে নিন। তারপর ওগুলো কুসুম গরম পানিতে ভিজিয়ে পরিষ্কার করে আলাদা করে রাখুন। এবার কড়াইতে তেল গরম করে তাতে জিরা দিয়ে দিন। জিরা যখন ফুটে উঠবে তখন পেঁয়াজ কুচি আর রসুন কুচি দিয়ে ২/৩ মিনিট ভেজে নিন।
পেঁয়াজ আর রসুন নরম হয়ে গেলে কাচকি শুটকি দিয়ে কিছুক্ষণ ভাজুন। এরপর হলুদ গুঁড়া, মরিচ গুঁড়া আর পরিমাণমতো পানি দিয়ে মশলাটা কষিয়ে নিন৷ তেল উপরে উঠে আসলে আলু দিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষিয়ে নিন। আলু-মশলা কষানো হলে কাঁচামরিচ আর লবণ দিয়ে একটু নেড়ে দিন। এরপরে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দিন আর চুলার আঁচ মাঝারির চাইতে একটু কম রাখুন।
মাঝে মাঝে ঢাকনা খুলে একটু নেগে দিবেন যাতে তরকারিটা পুড়ে না যায়। ২০-২৫ মিনিট কম আঁচে এভাবে রান্না করার পর নামিয়ে ফেলুন। এই রান্নায় পানি দেয়ার দরকার নেই। কম আঁচে একটু সময় নিয়ে রাঁধলেই স্বাদটা ভালো পাওয়া যায়।
৩. টমেটো দিয়ে রূপচাঁদা শুটকি ভুনা
যা যা লাগবে
- রূপচাঁদা শুটকি (পছন্দমতো সাইজে টুকরা করা) – ২০০ গ্রাম
- টমেটো (কুচি) – ৩টি
- পেঁয়াজ কুচি – ১ কাপ
- আদা বাটা – ১ চা চামচ
- রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া – ১ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – দেড় চা চামচ
- হলুদ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- কাঁচামরিচ (ফালি) – ৪/৫টি
- ধনেপাতা – পরিমাণমতো
- তেল – ৩ টেবিল চামচ
- চিনি – সামান্য
- লবণ – স্বাদমতো
- পানি – প্রয়োজনমতো
যেভাবে রাঁধবেন
শুটকিটাকে প্রথমে হালকা গরম পানিতে ৩ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখবেন এবং তারপরে ভালো করে ধুয়ে বেছে আলাদা করে রাখুন। প্যানে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি হালকা বাদামি করে ভেজে নিন। তারপরে বাকি সব মশলা (জিরা বাদে) দিয়ে ১০ মিনিট কষিয়ে নিন।
মশলা কষানো হলে শুটকি দিয়ে আরো কিছুক্ষণ কষান। শুটকি কষানো হয়ে গেলে পানি দিয়ে ১০ মিনিট ঢেকে রাখুন। পানি যখন ফুটে উঠবে তখন টমেটো আর কাঁচামরিচ দিয়ে একটু নেড়ে ঢেকে দিন। মাঝে মাঝে একটু নেড়ে দিবেন, নাহলে পোড়া লেগে যেতে পারে।
ভুনা হয়ে গেলে অল্প একটু চিনি আর ধনেপাতা দিয়ে ঢাকনা ছাড়া ২ মিনিট রান্না করে নিন। নামানোর আগে উপরে জিরা গুঁড়া ছড়িয়ে একটু নেড়ে নামিয়ে নিন।
৪. চিংড়ি শুটকি দিয়ে লাউ
যা যা লাগবে
- গুঁড়া চিংড়ি শুটকি – ২৫০ গ্রাম
- কচি লাউ – ১টি
- পেঁয়াজ কুচি – ২ টেবিল চামচ
- রসুন বাটা – আধা চা চামচ
- রসুনের কোয়া – ৩/৪টি
- হলুদ গুঁড়া – ১ চা চামচের একটু কম
- ধনিয়া গুঁড়া – ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – আধা চা চামচ
- কাঁচামরিচ (ফালি) – ৪/৫টি
- ধনেপাতা কুচি – ইচ্ছামতো
- লবণ – পরিমাণমতো
- তেল – পরিমাণমতো
- পানি – প্রয়োজনমতো
যেভাবে রাঁধবেন
লাউ খোসা ছাড়িয়ে ধুয়ে নিন এবং ছোট ছোট টুকরা করে কাটুন। চিংড়ি শুটকি প্রথমে স্বাভাবিক ঠান্ডা পানিতে ধুয়ে নিন এবং ১০ মিনিট গরম পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। ১০ মিনিট পরে আবার ঠান্ডা পানি দিয়ে চিংড়ি কয়েকবার ধুয়ে নিন।
কড়াইতে তেল গরম করে প্রথমে পেঁয়াজ কুচি ভেজে নিন, তারপর তাতে সব গুঁড়া মশলা একটু পানি দিয়ে কষিয়ে নিন। মশলা কষানো হলে চিংড়ি শুটকি দিয়ে আরেকটু কষিয়ে নিন। শুটকি তেলের উপর উঠে আসলে লাউয়ের টুকরাগুলো দিয়ে ঢেকে দিন।
লাউ থেকে যে পানিটা বের হবে তাতেই লাউ সিদ্ধ হয়ে যাবে। নাহলে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে লাউ সিদ্ধ করে নিবেন। সিদ্ধ হয়ে ঝোল ঘন হলে ধনেপাতা আর কাঁচামরিচ দিয়ে নেড়ে দিন এবং ৫-৭ মিনিট দমে রাখুন। এরপর নামিয়ে গরম গরম পরিবেশন করুন।
৫. চ্যাপা শুটকির দো-পেয়াজা
যা যা লাগবে
- চ্যাপা শুটকি – ৫/৬টি
- পুঁটি শুটকি – ১ মুঠো
- মলা শুটকি – ১ মুঠো
- পেঁয়াজ কুচি (একটু মোটা করে কুচি করতে হবে) – ১ কাপের চার ভাগের এক ভাগ
- রসুন কুচি (মোটা) – দেড় কাপ
- পেঁয়াজ বাটা – ১ চা চামচ
- • রসুন বাটা – ১ চা চামচ
- • হলুদ গুঁড়া – ১ চা চামচ
- ধনিয়া গুঁড়া – ১ চা চামচ
- মরিচ গুঁড়া – ২ চা চামচ
- জিরা গুঁড়া – ১ চা চামচ
- জিরা (আস্ত) – আধা চা চামচ
- কাঁচামরিচ – ৭/৮টি
- তেল – পরিমাণমতো
- লবণ – পরিমাণমতো
- পানি – প্রয়োজনমতো
যেভাবে রাঁধবেন
পুঁটি শুটকি ও মলা শুটকি শুকনা তাওয়ায় টেলে নিন, চ্যাপা শুটকি টেলে নেয়ার দরকার নেই। টেলে নেয়ার পরে পুঁটি ও মলা শুটকির মাথা ফেলে পরিষ্কার করে ধুয়ে ফেলুন, একইভাবে চ্যাপা শুটকিও ধুয়ে নিন।
কড়াইতে তেল গরম করে প্রথমে আস্ত জিরা ফোড়ন দিয়ে ভেজে নিন। এরপর এতে পেঁয়াজ বাটা ও রসুন বাটা দিয়ে ১-২ মিনিট কষিয়ে নিন। তারপর সামান্য পানি দিয়ে লবণ ও গুঁড়া মশলা দিয়ে কষাতে থাকুন। মশলা ভালোভাবে না কষানো পর্যন্ত অল্প অল্প করে পানি দিতে থাকুন।
মশলা কষানো হয়ে গেলে শুটকিগুলো দিয়ে আবার ভালো করে কষান। এবার কষানো শুটকি সিদ্ধ হওয়ার জন্য অল্প পানি ঢেলে দিন। পানি যখন শুকিয়ে আসবে তখন পেঁয়াজ কুচি, রসুন কুচি ও কাঁচামরিচ দিয়ে দিন। পেঁয়াজ ও রসুন সিদ্ধ হয়ে তেল বের হয়ে আসলে নামিয়ে ফেলুন এবং পরিবেশন করুন।
মন্তব্য করুন